আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য আজ সম্পন্ন হবে। সকালে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে তার কফিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে। চিরনিদ্রায় শায়িত করার আগে শোক মিছিলসহ রানীর কফিন অ্যাবে থেকে হাইড পার্ক কর্নারের ওয়েলিংটন আর্চ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে রানীর কফিন স্টেট হার্সের উইন্ডসরের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের রাজকীয় ভল্টে রাখা হবে। এরপর সেখানে স্বামী ডিউক অফ এডিনবার্গ এবং বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও মায়ের পাশে রানী চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন।
৯৬ বছর বয়সে রানী ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার হলে তার কফিন রাখা হয়েছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি ও সিএনএনের।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে রানীর কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় ১০ লাখের অধিক মানুষ লন্ডনের রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে শেষ বিদায়ের সাক্ষী হবেন। এ যাত্রায় রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগ দেবেন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রবীণ সৈনিক, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মী এবং দাতব্য কর্মীসহ দুই হাজার মানুষ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন। রানীকে অন্তিম শয়ানে শায়িত করার আগ পর্যন্ত সোমবারের পূর্ণ কর্মসূচি প্রকাশ করেছে বাকিংহাম প্যালেস।
এতে জানানো হয়-সকাল ৬টা ৩০ মিনিট : ওয়েস্টমিনস্টার হলে রানীর কফিনের পাশে জনসাধারণ শেষবারের মতো যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বিগবেনে ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনের সমাপ্তি হবে। এ সময় রাজার রক্ষীরা ওয়েস্টমিনিস্টার প্রাসাদে রানীর কফিনে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে জমকালো শোভাযাত্রা শুরু হবে।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট থেকে বেলা ১১টা : ঘোড়ার গাড়িতে রানীর কফিন রাখা হবে এবং ঐতিহ্য অনুসারে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে। ঘোড়ার গাড়ি হলেও এতে কোনো ঘোড়া থাকবে না। গাড়িটি টেনে নিয়ে যাবে রাজকীয় নৌবাহিনীর ৯৮ জন সদস্য। রাজপরিবারের প্রবীণ সদস্যরা গাড়ির পেছনে থাকবেন। কফিনটি ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে উঁচু বেদিতে রাখা হবে।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা : ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কার্যক্রম শুরু হবে বেলা ১১টায়। এটি পরিচালনা করবেন ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন। অনুষ্ঠান শেষ হবে ক্যান্টারবারির আর্চবিশপের ধর্মোপদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পাঠের মাধ্যমে। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে রানির সম্মানে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হবে।
দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট : রানীর কফিন হাইড পার্ক কর্নারে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে ওয়েলিংটন আর্চ পর্যন্ত দেড় মাইল লম্বা বিশাল সামরিক মিছিলের মাধ্যমে বহন করা হবে। এর আগে জাতীয় সংগীত ও শোক সংগীত এবং পাইপার বাজানো হবে। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কফিনটি অ্যাবের গ্রেট ওয়েস্ট ডোর দিয়ে হাইড পার্কের ওয়েলিংটন আর্চে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় কফিন বহনকারী মিছিলে থাকবেন চার হাজারেরও বেশি সামরিককর্মী। এ মিছিলে শামিল হবেন নতুন রাজা ও কুইন কনসর্ট।
দুপুর ১টা থেকে বেলা ৩টা ৬ মিনিট : লন্ডনের মধ্য দিয়ে কফিন বহনকারী মিছিলটি হাইড পার্ক কর্নার হয়ে উইন্ডসরের শ ফার্ম গেটে কুইন্স হোম পার্কের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত যাবে।
বেলা ৩টা ৬ মিনিট থেকে বিকাল ৪টা : বেলা ৩টা ৬ মিনিটে কফিন বহনকারী শোভাযাত্রা স্টেট হার্স লং ওয়াকে পৌঁছাবে। এর নেতৃত্বে থাকবে হাউজহোল্ড ক্যাভালোরি রেজিমেন্টের সেনারা। তাদের পেছনে থাকবে রাষ্ট্রীয় প্রহরী এবং স্কটিশ ও আইরিশ রেজিমেন্টের পাইপ, ড্রাম এবং কোল্ডস্ট্রিম গার্ডের ব্যান্ড দল। এ শোভাযাত্রায় ১০২টি সামরিক ঘোড়া অংশ নেবে। ৩৪ মিনিট পরে রাজা এবং রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা মিছিলে যোগ দেবেন।
বিকাল ৪টা : উইন্ডসরের ডিন বিকাল ৪টায় রানির কফিন দাফন প্রক্রিয়া শুরু করবেন। বাইবেল থেকে বিদায়ি স্তবক পাঠের আগে ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউন, অর্ব ও রাজদণ্ড কফিনের ওপর থেকে সরানো হবে। রাজা এবং রাজপরিবারের সদস্যরা শতাব্দী প্রাচীন এ ঐতিহ্যে শামিল হবেন এবং দাফনের আগে রানীকে চূড়ান্ত বিদায় জানাবেন। এ সময় কমনওয়েলথ দেশগুলোর প্রধানমন্ত্রী এবং রানীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট : রাজা চার্লস ও রাজপরিবারের অন্য প্রবীণ সদস্য রাজা জর্জ ষষ্ঠ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে দাফন কাজে যোগ দেবেন। চ্যাপেলে স্বামী ডিউক অফ এডিনবার্গ এবং বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং মায়ের পাশে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন।
আট নাতি-নাতনির শ্রদ্ধাঞ্জলি : লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার হলে শনিবার এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তার আট নাতি-নাতনি। কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে ১৫ মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা। সম্মান দেখাতে রানীর কফিনটি আটজন প্রদক্ষিণ করেন। রাজপরিবারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো রাজা বা রানীর নাতি-নাতনিরা এ রাজকীয় রীতিতে অংশ নিলেন। প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম ও ডিউক অব সাসেক্স হ্যারির নেতৃত্বে তাদের চাচাতো ও ফুফাতো ভাইবোনরা যোগ দেন।
২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো সামরিক পোশাকে দেখা গেল প্রিন্স হ্যারিকে। উইলিয়াম ও হ্যারি ছাড়াও এ রীতিতে অংশ নেন প্রিন্সেস অ্যানির দুই সন্তান পিটার ফিলিপস ও জারা টিনডাল, প্রিন্স অ্যান্ডুর দুই মেয়ে প্রিন্সেস বেট্রিস ও ইউজিন, প্রিন্স এডওয়ার্ডের সন্তান লেডি লুইস উইন্ডসর ও জেমস। রানীর নাতি-নাতনিদের মধ্যে সবার বড় ৪৪ বছর বয়সী পিটার ফিলিপস ও সর্বকনিষ্ঠ প্রিন্স এডওয়ার্ডের ছেলে ১৪ বছর বয়সি জেমস।
এদিকে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে ব্রিটেনে পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধানসহ আমন্ত্রিতরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, জাপানের সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকো, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও রানী ম্যাথিল্ডে, স্পেনের রাজা ফেলিপ ও রানী লেটিজিয়া, সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ ও রানী সিলভিয়া। আরও অনেক বিশ্বনেতা এরইমধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছেন।
রানীর শেষকৃত্য সরাসরি দেখাবে শতাধিক সিনেমা হল : রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্ব এবং কফিন নিয়ে লন্ডনে শোভাযাত্রা বিবিসি, আইটিভি এবং স্কাইটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সব আয়োজন সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্বের নানা আনুষ্ঠানিকতা দেখাতে দেশটির বিভিন্ন পার্ক, স্কয়ার এবং গির্জায় বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া ব্রিটেনজুড়ে ১২৫টি সিনেমা হলে বিনামূল্যে শেষকৃত্য দেখানো হবে।
যুক্তরাজ্যের সিনেমা হল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, যেসব হলে রানীর শেষকৃত্য দেখানো হবে, এর মধ্যেই সেগুলোর অনেক আসন বুক হয়ে গেছে।
লিজ ট্রাসের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক বাতিল : যুক্তরাজ্য সফরকালে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকটি বাতিল করা হয়েছে। তবে কেন বাতিল করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, রানীর শেষকৃত্যের আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যকার পরিকল্পিত ‘পূর্ণমাত্রার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক’টি লন্ডনের পরিবর্তে বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত হবে।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লন্ডনে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টার কিছু আগে বাইডেনকে বহনকারী উড়োজাহাজ লন্ডন স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সফরে তার সঙ্গে আছেন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।