ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘এলিফ্যান্টস নেভার ফরগেট’। বাক্যটির অর্থ, হাতিরা কখনো ভোলে না। এই প্রবাদের ওপর ভর করে হলিউড বা বলিউডে বানানো কিছুও মুভিও হয়তো অনেকে দেখেছেন। কিন্তু এই প্রচলিত প্রবাদ কি আসলেই সত্যি? হাতিরা কি কখনোই কিছু ভোলে না?
টেনের হোহেনওয়াল্ডের দ্য এলিফ্যান্ট স্যাংকচুয়ারি (অর্থাৎ হাতির অভয়ারণ্য) কাজ করেন ক্যারল বার্কলি। তিনি একটা ঘটনা বলেছেন। ১৯৯৯ সালে সেখানে জেনি নামে একটা হাতি ছিল। এশিয়া থেকে আসা শার্লি নামের এক হাতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই সে অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করে। দুই হাতি দীর্ঘক্ষণ নিজেদের শুঁড় দিয়ে একে অন্যকে অনুভব করে। তারপর দুজনের মধ্যেই দেখা যায় হারানো বন্ধু দীর্ঘদিন পর ফিরে পাওয়ার তীব্র আবেগ। একজন আরেকজনের গায়ের বিভিন্ন দাগ, আঘাত পাওয়ার চিহ্ন শুঁড় দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে থাকে।
খোঁজ নিয়ে ক্যারল জানতে পারেন, বহু বছর আগে এই হাতি দুটোর দেখা হয়েছিল। কীভাবে? এক কালে কারসন অ্যান্ড বার্নস সার্কাসে কাজ করত জেনি। নানা খেলা দেখাত। পরে সে এখানে চলে আসে। খোঁজ নিয়ে ক্যারল জানতে পারেন, প্রায় ২৩ বছর আগে শার্লিও সেখানে কাজ করেছিল কিছু দিন।
হাতির স্মৃতিশক্তির চমৎকার এক উদাহরণ এটা। তবে হাতিরা কখনোই কিছু ভোলে না, এ কথা সত্যি নয়। অনেক সময় তারাও ভুলে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বারবার এরকম নানা ঘটনায় প্রমাণ পেয়েছেন, হাতির স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। সহজে কিছু ভোলে না।
গবেষকরা আফ্রিকার বন্য হাতিদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, সাধারণত বয়স্ক নারী হাতি একেকটি দলের নেতৃত্ব দেয়। এই হাতিগুলোকে ইংরেজিতে বলে ম্যাট্রিয়ার্ক। বাংলা করলে দাঁড়াবে কর্ত্রী। এই কর্ত্রীদের স্মৃতিশক্তি প্রখর। ফলে তারা দীর্ঘদিন বন্ধু ও শত্রুদের কথা মনে রাখতে পারে। বুঝতে পারে, কারা তাদের ক্ষতি করতে পারে। এভাবে তারা পুরো দলটিকে রক্ষা করে। পাশাপাশি, তাদের মাথায় থাকে কোথায় গেলে খাবার ও পানি খুঁজে পাওয়া যাবে। গবেষকদের ধারণা, এই স্মৃতিশক্তি তাদের টিকে থাকার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্য গড়ে হাতি ৫০ থেকে ৬০ বছর বা আরও বেশি সময় বাঁচে।
যাঁরা হাতি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে জানা যায়, কেউ আঘাত করলে হাতি তাদের কথা মনে রাখে। ক্ষোভ পুষে রাখে মনে। যেমন এক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকান হাতি বিশেষ একধরনের কাপড় দেখলে বা গন্ধ পেলে নেতিবাচক আচরণ করে। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, আফ্রিকার মাসাই গোত্রের লোকেরা এ ধরনের কাপড় পরে। এই গোত্রের মানুষ নিজেদের পুরুষত্ব প্রমাণের জন্য হাতি দেখলে বর্ষা ছুড়ে মারে। এই বিষয়টা স্মৃতিতে রয়েছে বলেই এসব হাতি অমন আচরণ করেছে।
হাতির মস্তিষ্কের গঠন বেশ জটিল। মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে অনেকখানি মিলও আছে। আচরণেও বুদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন শোক প্রকাশ, মিমিক্রি বা অনুকরণ, খেলাধুলো, আত্মসচেতনতা, পরার্থপরতাসহ নানারকম আবেগের প্রকাশ দেখা যায় হাতির আচরণে। এর খুব ভালো একটা উদাহরণ উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
সাধারণত হাতি দল বেঁধে থাকে। মারা গেলে বা মানুষ জোর করে কোনো হাতিকে ধরে নিয়ে না গেলে এই দল সাধারণত ভেঙে যায় না। এই দলের কেউ মারা গেলে হাতিরা শোক প্রকাশ করে। মৃতের দেহ ছুঁয়ে দেয় পা বা শুঁড় দিয়ে। তা ছাড়া আফ্রিকায় হাতিদের মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর উপকার করতেও দেখা যায় নিঃস্বার্থভাবে। এসবই প্রমাণ করে, হাতি যথেষ্ট বুদ্ধিমান প্রাণী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।