বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বাংলাদেশে গরমকাল এলে সবচেয়ে যে যন্ত্রটির কথা বেশি শোনা যায় তা হলো এসি বা এয়ার কন্ডিশনার। আগে এসিকে মনে করা হতো বিলাসিতা, কিন্তু আজকাল এটি একটি প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। অফিস, শপিং মল, এমনকি বাসা-বাড়িতেও এখন এসি থাকা খুব সাধারণ। কিন্তু এসি কিনতে গিয়ে অনেকেই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে আটকে যান—“কত টনের এসি নেবেন?” এই প্রশ্নটি যতটা সহজ মনে হয়, ততটাই জটিল হতে পারে যদি আপনি না জানেন ‘এসির টন’ বলতে আসলে কী বোঝায়।
Table of Contents
এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো এসির টনের প্রকৃত অর্থ, এর ব্যবহারিক গুরুত্ব এবং কোন আকারের ঘরের জন্য কত টনের এসি প্রয়োজন তা। মূল কীওয়ার্ড ‘এসির টন’ ব্যবহার করে আমরা তুলে ধরবো এমন কিছু তথ্য, যা এসি কেনার আগে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
এসির টন কী? — আসলে এসির ‘টন’ বলতে কী বোঝায়
‘এসির টন’ কথাটি শুনলে প্রথমেই অনেকের মনে হয় এটি এসির ওজন বুঝাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে, এসির টন মানে কোনো ওজন নয়। বরং, এটি এসির শীতল করার ক্ষমতা বা কুলিং ক্যাপাসিটির একটি পরিমাপক একক।
১ টন এসির অর্থ হলো, সেই এসি এক ঘণ্টায় মোট ১২,০০০ BTU (British Thermal Unit) তাপ বাতাস থেকে সরিয়ে নিতে পারে। অর্থাৎ, যত বেশি টন, তত বেশি পরিমাণ তাপ অপসারণের ক্ষমতা। এখানে BTU একটি শক্তির একক, যা বোঝায় কতটা তাপ সরানো হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ:
১ টন এসি = ১২,০০০ BTU/hr
১.৫ টন এসি = ১৮,০০০ BTU/hr
২ টন এসি = ২৪,০০০ BTU/hr
BTU এবং টন সম্পর্ক
BTU বা ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এমন একটি একক যার মাধ্যমে তাপমাত্রার পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। সাধারণভাবে ১ টন এসির মানে হচ্ছে সেটি প্রতি ঘণ্টায় ১২,০০০ BTU তাপ কমাতে সক্ষম। এই সংখ্যা মূলত এসেছে বরফ গলানোর ধারণা থেকে—এক টন বরফ ২৪ ঘণ্টায় গলাতে যে পরিমাণ তাপ দরকার, সেটিই ১২,০০০ BTU/hr সমান।
এই বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যার ফলে বোঝা যায়, এসির টন আসলে ঘরের আকার, পরিবেশের তাপমাত্রা এবং কাঠামোর ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত।
কোন ঘরের জন্য কত টনের এসি প্রয়োজন?
আপনি যদি একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন এবং সেখানে বড় ক্ষমতার এসি ব্যবহার করেন, তাহলে তা বিদ্যুৎ অপচয়ের পাশাপাশি আপনার বিল বাড়িয়ে দেবে। আবার যদি বড় ঘরে কম টনের এসি ব্যবহার করেন, তাহলে ঘর কখনোই পুরোপুরি ঠান্ডা হবে না। তাই এসির টন নির্বাচন করার সময় ঘরের সাইজ, সূর্যরশ্মি প্রবেশের মাত্রা, জানালার সংখ্যা ও ঘরের ব্যবহারের ধরন বিবেচনা করা জরুরি।
ঘরের আয়তন অনুযায়ী টন হিসাব:
ঘরের আয়তন (বর্গফুট) | প্রস্তাবিত এসি টন |
---|---|
৮০–১২০ বর্গফুট | ১ টন |
১২১–১৮০ বর্গফুট | ১.৫ টন |
১৮১–২৫০ বর্গফুট | ২ টন |
২৫১–৩০০ বর্গফুট | ২.৫ টন |
৩০০ বর্গফুটের উপরে | ৩ টন পর্যন্ত |
👉 যদি আপনার ঘরে ছাদ টিনের হয় অথবা পশ্চিমদিকে মুখ করে থাকে যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে, তাহলে আরও বেশি টনের এসি লাগতে পারে।
👉 যদি ঘরে গ্লাস জানালা বেশি থাকে, কিচেন সংলগ্ন থাকে বা বেশি মানুষ বসবাস করেন, তাহলে অতিরিক্ত টন প্রয়োজন হতে পারে।
এসির টন নির্ধারণে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়
শুধু ঘরের আয়তন নয়, এসির টন নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি। যেমন:
১. ঘরের ছাদ এবং দেয়ালের গঠন
ঘরের ছাদ যদি সিমেন্টের হয় এবং থার্মাল ইনসুলেশন থাকে, তবে তাপ প্রবেশ কম হবে এবং কম টনের এসিতেই ঘর ঠান্ডা রাখা সম্ভব।
২. জানালা এবং দরজা
জানালার সংখ্যা বেশি হলে বাইরে থেকে বেশি গরম ঢুকতে পারে। এমন ঘরের জন্য টন বাড়ানো উচিত।
৩. মানুষ ও ইলেকট্রনিকস
ঘরে যত বেশি মানুষ এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকবে, তাপ উৎপন্ন তত বেশি হবে। এর ফলে টনের মান বাড়ানো প্রয়োজন হতে পারে।
৪. দিনের কোন সময় বেশি ব্যবহার
যদি আপনি এসি মূলত দিনের বেলা ব্যবহার করেন, যখন সূর্য সবচেয়ে উজ্জ্বল, তখন তুলনামূলক বেশি টনের এসি প্রয়োজন।
স্প্লিট এসি নাকি উইন্ডো এসি: কোনটায় কী পার্থক্য?
এসি কেনার সময় প্রথম যে প্রশ্ন আসে তা হলো—স্প্লিট নাকি উইন্ডো এসি?
স্প্লিট এসি-তে দুটি ইউনিট থাকে—একটি বাহিরে ও একটি ভিতরে। এটি ঘরের সৌন্দর্য বজায় রাখে এবং সাধারণত কম শব্দ করে।
উইন্ডো এসি-তে সবকিছু একই ইউনিটে থাকে এবং এটি জানালায় ইনস্টল করা হয়। এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও বেশি শব্দ করে।
দুই ধরনের এসিতেই ‘টন’ নির্ধারিত হয় একইভাবে। সুতরাং, আপনি যেটাই নিন না কেন, সঠিক টন নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এসির টন অনুযায়ী বিদ্যুৎ খরচ কেমন হয়?
সাধারণভাবে, যত বেশি টনের এসি, তত বেশি বিদ্যুৎ খরচ হবে। তবে এখনকার ইনভার্টার এসি প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমে এসেছে।
এসির টন | আনুমানিক ইউনিট খরচ (প্রতি ঘণ্টা) |
---|---|
১ টন | ০.৮ – ১.০ ইউনিট |
১.৫ টন | ১.২ – ১.৫ ইউনিট |
২ টন | ১.৮ – ২.২ ইউনিট |
👉 ইনভার্টার প্রযুক্তির মাধ্যমে এসি কম্প্রেসার ধীরে ধীরে কাজ করে, যার ফলে বেশি সময় চললেও মোট ইউনিট কম হয়।
Wikipedia – এ এসি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পড়া যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।