রাজধানীর কদমতলীতে বাবা-মা ও বোনকে হত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনায় পরিবারের বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও তার স্বামী শফিকুলকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি অনুসন্ধান গণমাধ্যমকর্মীরাও অনুসন্ধান চালায়।
এতে দেখা যায়, পরিবারের নারী সদস্যরা অস্বাভাবিক অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন মেহজাবিনের মা মৌসুমি ইসলাম। স্বামী মাসুদ রানা ওমানে থাকা এবং সেখানে আরেকটি বিয়ে করায় সাংসারিক টানাপোড়েনে প্রথমে তিনি ও পরে স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের অনৈতিক কাজে নামান।
মাসুদ রানা ও মৌসুমী ইসলাম দম্পতির দুই মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও জান্নাতুল ইসলাম মোহিনী। তাদের কোনো ছেলে সন্তান নেই। জীবিকার প্রয়োজনে স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে দেশে রেখে মাসুদ বিদেশে পাড়ি জমান।
ঘটনাক্রমে সেখানে তিনি এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেন। প্রথম দিকে দেশে প্রথম স্ত্রী ও দুই মেয়ের খরচ দিলেও দ্বিতীয় বিয়ের পর তা প্রায় বন্ধ করে দেন। পরিস্থিতিতে পুরুষশূণ্য একটি ফ্ল্যাটে স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান মৌসুমী। সংসারে টানাপোড়ন শুরু হয়।
এদিকে পরিবারটিতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় মৌসুমী ও তার স্কুল পড়ুয়া দু’টি মেয়ের দিকে কুদৃষ্টি কেউ কেউ। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সংসারের খরচ যোগানো ও জৈবিক চাহিদার কাছে হার মানেন মৌসুমী।
অসৎ উদ্দেশ্যে বারবার আহ্বান জানানো লোকদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন তিনি, এক পর্যায়ে নিজ বাসাতেই আসতে শুরু করে ওইসব লোকজন। সেই অনুযায়ী তার বাসায় বেশ কয়েকজন যৌনকর্মীরও অবাধ যাতায়াত শুরু হয়। যা দেখে প্রথমদিকে স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেও পরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। মৌসুমী নিজেও বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে নিজ বাসাতেই সময় কাটানো শুরু করেন।
এক পর্যায়ে অধিক অর্থ উপার্জনের লোভে পড়ে নিজের বড় মেয়ে মেহজাবিন মুনকেও জোর পূর্বক দেহ ব্যবসায় সম্পৃক্ত করান এর কিছুদিন পর ছোট মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীকেও একই কাজে যুক্ত হতে বাধ্য করান।
এদিকে দুই মেয়ে পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় তাদের স্কুলের পড়া বন্ধ করেননি মৌসুমী। ভালো পড়াশোনার স্বার্থে তাদের জন্য আমিনুল ইসলাম নামের এক গৃহশিক্ষককে ঠিক করেন। সেই গৃহশিক্ষক ওই ফ্ল্যাটে পড়াতে যাওয়া আসার এক পর্যায়ে সেখানে মা ও দুই মেয়ের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়টি টের পান। যে কারণে তিনিও ছাত্রী মেহজাবিনকে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে মর্মে চাপ প্রয়োগ করেন, অন্যথায় সকলকে জানিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। পরিস্থিতিতে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী মুন গৃহশিক্ষক আমিনুলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এসব কারণেই মা ও বাবার প্রতি রাগ ছিল বড় মেয়ে মেহজাবিনের। পাশাপাশি স্বামী শফিকুল তার ছোট বোনের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। বিষয়টি নিয়ে স্বামীকে বারণ করলেও তাতে পাত্তা দিতেন না শফিকুল। উল্টো তার প্রতি নির্যাতন বাড়িয়ে দিতেন বলে দাবি করেছে নিহতদের পরিবারের স্বজনরা।
মামলার তদন্তে পরিবারটিতে অস্বাভাবিক সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। আর এমন সম্পর্কের জন্য শফিকুলকেই দায়ী করছেন মেহজাবিনের স্বজনরা। তার খালা ইয়াসমিন যুগান্তরকে বলেন, বিয়ের পর থেকেই মেহজাবিনকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত শফিকুল। একপর্যায়ে তার ছোট বোন জান্নাতুলকেও সে একই ধরনের নির্যাতন শুরু করে। তার ইচ্ছে ছিল দুই বোনকে তার কাছে রেখে শ্বশুর বাড়ির সব সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার। তাকে জিজ্ঞেস করলেই এই ঘটনার সব জানা যাবে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে শফিকুলের ‘ঠাণ্ডা মাথার খুন’ উল্লেখ করে তার ফাঁসি দাবি করেন।
গত ১৯ জুন সকালে কদমতলীর মুরাদপুর রজ্জব আলী সরদার রোডের ৫তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুলের (২০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অচেতন অবস্থায় মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই, আসামি মেহজাবিন ইসলাম মুনের বড় চাচা সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে নিহতের বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।