ভারতের লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে ৫৬ ভোটের ব্যবধানে। এই বিলের পক্ষে ভোট দেন ২৮৮ জন সাংসদ এবং বিপক্ষে ছিলেন ২৩২ জন। প্রায় ১৩ ঘণ্টা বিতর্কের পর বিলটি পাস হয়। এই সংশোধিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনকে পরিবর্তন করবে। আগামী বৃহস্পতিবার বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হবে।
বিলটি পেশ করেন ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এবং সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
সংশোধনের মূল বিষয়বস্তু ও বিতর্ক
এই নতুন ওয়াকফ বিল-এ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমত, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অন্তত দুইজন অ-মুসলমান সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কেউ যদি ইসলাম ধর্মাবলম্বী না হন, তবে তিনি ওয়াকফকে সম্পত্তি দান করতে পারবেন না, যদি না তিনি অন্তত পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন।
এই সংশোধনগুলিকে ঘিরে বিরোধীরা একজোট হয়ে বিলটির বিরোধিতা করেছে। বিরোধী দলগুলির দাবি, এই বিল সংবিধানবিরোধী এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এই বিল ছিঁড়ে প্রতীকী প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণে পড়ুন এই বিলকে ঘিরে বিরোধীদের অবস্থান
সরকারের যুক্তি ও প্রতিক্রিয়া
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিল সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনকে সংশোধন করার লক্ষ্যে আনা হয়েছে এবং এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। অমিত শাহ একাধিক উদাহরণসহ একটি তালিকা উপস্থাপন করেন যেখানে মন্দির, গীর্জা সহ অন্যান্য ধর্মীয় সম্পত্তির অনিয়মিত দান দেখানো হয়েছে।
মন্ত্রী কিরণ রিজিজুর মতে, এই সংস্কার না হলে, বিতর্কিত সম্পত্তিগুলি অপ্রয়োজনে ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় চলে যাবে, যা সরকারের মতে ন্যায়বিচার ও সংবিধান বিরোধী হবে।
আইন পাসের রাজনৈতিক প্রভাব
ওয়াকফ বিল পাসের ফলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এক শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেছে। কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের নেতারা এই আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাও প্রশ্ন তুলেছে, যদি ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলমান রাখা হয়, তবে কি মন্দির কমিটিতে অ-হিন্দুদের রাখা হবে?
আরও জানুন এই আইনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ভারতের সংবিধান ও ওয়াকফ আইন
ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার সংরক্ষণ করে। ওয়াকফ আইন মূলত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় দানকৃত সম্পত্তি পরিচালনার জন্য প্রণীত। এই আইন ১৯৫৪ সালে প্রণয়ন হয় এবং ১৯৯৫ সালে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়। ২০১৩ সালেও মনমোহন সিংয়ের আমলে এই আইন সংশোধিত হয়েছিল।
তবে এইবারের সংশোধন অনেক বেশি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংশোধন যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তা একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তর (FAQs)
- ওয়াকফ বিল কী?
ওয়াকফ বিল হল একটি আইন যা মুসলিমদের দানকৃত সম্পত্তি কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করে। - এই বিলের নতুন সংশোধন কী?
অ-মুসলমানদের সদস্য করা, ইসলাম ধর্মে অন্তত ৫ বছর থাকার শর্ত ইত্যাদি এই সংশোধনের অংশ। - বিরোধীরা কেন এর বিরোধিতা করছে?
তাদের মতে এই বিল সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে এবং সংবিধানবিরোধী। - সরকার কী বলছে?
সরকার বলছে এই বিল শুধুমাত্র সম্পত্তি সংক্রান্ত ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আনা হয়েছে।
ওয়াকফ বিল লোকসভায় পাস হলেও, এটি ঘিরে বিতর্ক যেন থামছেই না। নতুন সংশোধনগুলি একদিকে সরকারের বক্তব্যকে শক্তিশালী করছে, আবার অন্যদিকে বিরোধীরা এটিকে সংখ্যালঘুদের অধিকারের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্যসভায় এই বিল পাস হয় কি না এবং এর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও আইনি প্রভাব কী হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।