শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র লুকানো ও সরানোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা গেছে, ঢাকার আগারগাঁও থেকে নরসিংদী পর্যন্ত তিন দফা হাতবদল হয়ে পিস্তল ও গুলি সরানো হয়। এতে প্রধান সন্দেহভাজনের বাবা, শ্যালক ও এক বন্ধু জড়িত ছিলেন বলে উঠে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হাদিকে গুলির পর ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর সহযোগী আলমগীর শেখ আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় দুটি কালো ব্যাগে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও গুলি রেখে পালিয়ে যান। পরে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির একটি ব্যাগ তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ ওরফে সিপুর কাছে হস্তান্তর করেন। অস্ত্র ও গুলিসহ ওই ব্যাগটি সিপু নরসিংদীতে নিয়ে যান।
পালানোর আগে ফয়সাল তাঁর বাবাকে নির্দেশ দেন অস্ত্রের ব্যাগটি সিপুর কাছে পৌঁছে দিতে। ঘটনার দিন বিকেলে আগারগাঁও বিএনপি বস্তি এলাকায় ফোন করে সিপু ব্যাগটি গ্রহণ করেন। পরে তিনি সেটি নরসিংদীতে নিয়ে গিয়ে বন্ধু মো. ফয়সালের কাছে রাখেন।
হুমায়ুন কবির ও ওয়াহিদ আহমেদ সিপুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে র্যাব নরসিংদীর সদর উপজেলার তরুয়া এলাকার একটি বিল থেকে দুটি পিস্তল ও ৪১টি গুলি উদ্ধার করে। এ সময় মো. ফয়সাল নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসা থেকে আরেকটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়, যেখানে দুটি ম্যাগাজিন ও ১১টি গুলি পাওয়া যায়।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে ধারণা করা হচ্ছে—উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর একটিই হাদির ওপর হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যালিস্টিক পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
গত শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে রিকশায় থাকা শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় গুলিবর্ষণকারী হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিমকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর সহযোগী আলমগীর শেখ মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। ঘটনার পর এই দুজন অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা হাসি বেগমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০। জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন কবির ছেলেকে পালাতে সহায়তার কথা স্বীকার করেছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম জানান, হত্যাচেষ্টার নেপথ্যের উদ্দেশ্য এবং অর্থের জোগানদাতাদের শনাক্তে তদন্ত চলছে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন সিপুর বন্ধু মো. ফয়সাল। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, মো. কবির, আব্দুল হান্নান, মো. হিরন, মো. রাজ্জাক, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভিন সামিয়া, তাঁর বান্ধবী মারিয়া আক্তারসহ আরও কয়েকজন।
এর মধ্যে নুরুজ্জামানকে ফয়সালকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। উবারচালক হিরন ও রাজ্জাককে মামলার সাক্ষী করা হয়েছে। আর মোটরসাইকেলের ভুল নিবন্ধন নম্বরের ঘটনায় ৫৪ ধারায় আটক আব্দুল হান্নানকে এই মামলায় গ্রেপ্তার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



