ওসিসহ ৬ নৌপুলিশের ওপর হামলা, নদীতে নিক্ষেপ ও মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুটের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মন্তাজনগর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে ৪ দিনেও লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি ইকবাল বাহারের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সেকেন্ড অফিসার এসআই শামীম আকনজিসহ সঙ্গীয় ফোর্সের সহযোগিতায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
গত ৪ জুলাই ছাতকে চেলা নদীতে নৌপুলিশের ওপর হামলা মারপিট মোবাইল লুটপাটের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা পৌর কাউন্সিলর তাপস চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন নৌপুলিশের এসআই হাবিবুর রহমান।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার মন্তাজনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ২২নং আসামি আনসার আলী ও ২৩নং আসামি মনির মিয়াকে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরে তাদের ছাতক থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা গোয়েন্দা-ডিবি পুলিশের এসআই শামিম আকনজি।
এ মামলায় সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, ছাতক দোয়ারাবাজার এলাকার নৌপথে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের নাম রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ, নৌপুলিশ ও থানা পুলিশের ৩টি টিম মাঠে নেমেছে। আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে ওসি শেখ নাজিম উদ্দিন নিশ্চিত করেন।
এ মামলার খবর পেয়ে প্রধান অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী এখন পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শিল্পনগরী ছাতকে নৈরাজ্যের ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে পৌর কাউন্সিলর তাপস চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বাহিনী। তার ইশারায় দীর্ঘদিন ধরে ছাতকে নৌপথে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চলে আসছে। গত ৪ জুলাই রাতে স্থানীয় চেলা নদীতে নৌপুলিশের ওপর পৌর কাউন্সিল তাপস চৌধুরীর নির্দেশে এ হামলার ঘটনা ও ঘটিয়েছে বলে নৌপুলিশ অভিযোগ করেন।
নৌপুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফরেস্ট বিভাগের সরকারি এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতি রাতেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে স্থানীয় অসাধু মহল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ৯টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে ৫-৬টি বাল্কহেড লোড করেছিল অর্ধশতাধিক শ্রমিক। এ খবর পেয়ে ৪ জুলাই সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে নৌপুলিশের একটি দল।
বর্ষার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফরেস্ট বিভাগের ভূমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া করেন নৌপুলিশের ওসি মনজুর আলম। একটি সিজার লিস্ট তৈরি করে ফেরার পথে চেলা নদীতে ৪টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে প্রায় ৫০-৬০ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে নৌপুলিশের নৌকায় অতর্কিত হামলা করে।
একপর্যায়ে নৌকায় থাকা নৌপুলিশের ওপর তারা চালায় হামলা চালায়। প্রাণের ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়েও রক্ষা পাননি নৌপুলিশের সদস্যরা। তাদের মেরে নদীতে ফেলে দেয়। প্রাণ রক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা সাঁতার কেটে নিয়ামতপুর গ্রামের এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা নৌপুলিশের নৌকা ভেঙে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
নৌপুলিশের ওসি মনজুর আলম জানান, পৌর কাউন্সিল তাপস চৌধুরীর নিদেশেই আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে হত্যার চেষ্টা করেছে। হামলার একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পুলিশের ১১টি মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ মালামাল লুট করে নেয়।
এদিকে হামলায় গুরুতর আহত নৌপুলিশের ইনচার্জ মঞ্জুর আলমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ছাতক হাসপাতাল থেকে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।