জুমবাংলা ডেস্ক : কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা নারীদের হেনস্তা ও মারধরসহ হয়রানির ঘটনায় জড়িত ফারুকুল ইসলাম নামে এক যুবককে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তাকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ।
তিনি জানান, সৈকতে এক নারীকে কান ধরিয়ে উল্লাস করা অভিযুক্ত যুবক ফারুকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনো আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতে হাঁটছেন এক নারী। হঠাৎ পেছন থেকে ছুটে গিয়ে এক যুবক তাকে থামান। যুবকের হাতে ছিল লাঠি। লাঠির ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে কান ধরে উঠবস করতে বলা হয়। ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করতে থাকা আরেক মহিলা এসময় ভুক্তভোগী নারীর মুখের মাস্ক টেনে খুলে ফেলেন। এই পরিস্থিতিতে রক্ষা পেতে ওই নারী কান ধরতে বাধ্য হন। এসময় চারপাশে জনতার ভিড় জমে যায়। অনেকে অশালীন গালিগালাজ করেন। কেউ কেউ কান ধরে ওঠবসের গণনাও করেন।
জানা গেছে, ঘটনাটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের। এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ফেসবুকে শুরু হয় নিন্দার ঝড়। কেউ কেউ ওই নারীকে ‘যৌনকর্মী’ আখ্যা দিয়ে এমন ‘শাস্তি’ প্রযোজ্য বলে সাফাই গাইতে চেষ্টা করলেও অধিকাংশ নেটিজেনরাই এমন বিকৃত ও বেআইনি ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত লাঠি হাতে থাকা যেই যুবকের মাধ্যমে, তাকেও হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ওই যুবকের নাম ফারুকুল ইসলাম। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায়।
কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা ছাড়াও ফেসবুকে আরও দু’টি ভিডিও ছড়িয়েছে। এর একটিতে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে বিচ চেয়ারে বসা এক নারীকে একদল যুবক হঠাৎ করে ঘিরে ধরে গালাগাল করছে এবং তাকে সেখান থেকে উঠে যেতে নির্দেশ দিচ্ছে। এক পর্যায়ে তাঁকে পেটানোর ভয় দেখিয়ে চেয়ার থেকে উঠে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানেও কাঠের লাঠি হাতে ফারুকুল ইসলামকে দেখা যায়।
তৃতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ‘কড়াই’ রেস্তোরাঁর সামনে একটি ঘরে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের কাছে এক নারী ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় তার মোবাইল ফোনটি চাচ্ছেন। তিনি উপস্থিত জনতার কাছে বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন এবং বলছেন, তার মোবাইল ফোনটা ফেরত দিলে তিনি এখনই টিকিট কেটে চলে যাবেন। সেই ভিডিওতেও ফারুকুলকে দেখা গেছে।
নেটিজেনরা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্র বা সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে এখন অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম বলেন, সৈকতে নারীকে পেটানো যুবক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নয়। এমন অপরাধের সঙ্গে আমাদেরও কেউ জড়িত থাকলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার জন্য সবার কাছে আহবান জানান তিনি। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারাও একাধিকবার বলেছেন, তারা এমন কোনোপ্রকার আচরণ সমর্থন করেন না।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেছেন, কক্সবাজার পর্যটনের শহর। এখানে মানুষ আসে সমুদ্র উপভোগ করার জন্য। এখানে এমন ঘটনা দুঃখজনক। ভিডিওর ভুক্তভোগীর ওপর হামলে পড়ে রীতিমত মারধরের ভয় দেখিয়ে কান ধরানো হয়েছে, সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। এমন ঘটনা পর্যটন শিল্পেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এদিকে কক্সবাজারের ঘটনাটির আদ্যোপান্ত ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন এএফপি’র ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দিন শিশির। শিশিরের পোস্ট শেয়ার করে সাংবাদিক, কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘ভিডিগুলো ভয়াবহ! মনে হয় না দেশে আইন আছে। কথা না বলে যারা এইসব ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রমাণ করতে হবে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর!’
তাশরিক হাসান নামের এক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লিখেছেন, ‘দেখলাম সি-বিচে একটা মেয়ে কেন একা বসে আছে সেজন্য লাঠি নিয়ে তেড়ে আসছে। বলছে, এত রাতে একা কেন বিচে বসে আছেন। এরাই কালকে আপনার মা-বোনের কাপড় ধরে টান দিবে, বেটি ঘোমটা দ্যাস না ক্যান। পরশু চালু হবে সান্ধ্য আইন, আপনার ওয়র্কিং ওয়াইফকে হেনস্থা করবে বাসায় ফিরতে ৯টা বাজলো কেন। এই দিন খুব বেশি দূরে না! যতদিন না পর্যন্ত নিজে বা নিজের কাছের কেউ ভিক্টিম না হবেন, ততদিন পর্যন্ত এইসব সস্তা পপুলারিটি পাওয়ার জন্য ভিডিও ফুটেজ আর মব অ্যাকশনের ভয়াবহতা টের পাবেন না। কার কাজ কোনটা, কোন কাজে কোথায় থামতে হয় সেইটা বোঝাটা খুব দরকার। হারকিউলিসগিরির ফিউচার কোনদিনই ভালো হয় না।’
এছাড়া ফারুকুলের লাঠির ভয়ে কান ধরা নারীর প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিক আদিত্য আরাফাত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ওই নারীকে কান ধরে উঠ বস করিয়ে যেভাবে উল্লাস করা হয়েছে তা পৈশাচিক! অসংখ্যবার কক্সবাজার গিয়েছি, রাত বিরাতে সৈকতে নারী-পুরুষকে স্বাধীনভাবেই চলাচল করতে দেখেছি। সৈকতে কখনো পোশাক নিয়েও প্রকাশ্যে কঠাক্ষ করতে কাউকে দেখিনি।’
তিনি লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, মেয়েটি যৌনকর্মী, খদ্দের খুঁজছিলো তাই স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছে। মেয়েটি যৌনকর্মী হলেও তার ওপর এভাবে মাস্তানি করার অধিকার এদের কে দিলো? আমরা ভুলে যাই একজন যৌনকর্মীও মানুষ। তারও আত্মসম্মান আছে।’
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন সংলগ্ন সড়ককে ‘শহীদ ফেলানি সড়ক’ নামকরণ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।