আলো কেমন আচরণ করে, কণার মতো, নাকি তরঙ্গের মতো? আইজ্যাক নিউটন থেকে আলবার্ট আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্ন নিয়ে বিচলিত ছিলেন। অনেক বিজ্ঞানী এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। কখনো আলো কণা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, আবার কখনো তরঙ্গ হিসেবে। আসলে আলো কোন ধর্ম মেনে চলে?
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের পদার্থবিদ রিকার্ডো স্যাপিয়েঞ্জা বলেন, ‘আলো কণা নাকি তরঙ্গ, এটা খুব পুরনো প্রশ্ন। আমাদের চারপাশের মৌলিক প্রকৃতি বুঝতে এ প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১৯ শতকের অনেক বিজ্ঞানী এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন’। তবে এখন আর এই প্রশ্ন নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কারণ এখন আমরা জানি, আলো একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই সিদ্ধান্তে এলেন?
আলোকে কণা হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের অন্যতম আইজ্যাক নিউটন। প্রায় একই সময়ে আলোকে প্রথমবারের মতো তরঙ্গ হিসেবে প্রমাণ করেন বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস। তবে সে যুগে নিউটনের দাপটে তাঁর সে তত্ত্ব তখন হালে পানি পায়নি। এরপর আলোকে আরেকবার তরঙ্গ ধর্ম প্রমাণিত হয় ১৮০১ সালে। সেবার ব্রিটিশ পদার্থবিদ টমাস ইয়ং তাঁর বিখ্যাত ‘দ্বিচিড় পরীক্ষা’ করেন। ইংরেজিতে এই পরীক্ষাকে বলে ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট। ইয়ং দুটি দেয়াল নিয়ে এই পরীক্ষা করেন। দেয়াল দুটি একটার পর একটা বসান। প্রথম দেয়ালে ছিল দুটি ছিদ্র, যার মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারবে। সেজন্যই এই পরীক্ষার নাম দ্বিচিড় পরীক্ষা।
এ পরীক্ষায় দেখা যায়, আলো শুরুতে প্রথম দেয়ালের দুটি ছিদ্র দিয়ে দ্বিতীয় দেয়াল বা পর্দায় পড়বে। এখানেই ঘটে মজার ঘটনা। দুই ছিদ্র দিয়ে আসা আলো পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটা ব্যতিচার প্যাটার্ন গঠন করবে। তাতে আলোকে কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে উজ্জ্বল দেখাবে এবং কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে অন্ধকার দেখাবে।
আলো যদি কণা না হতো, তাহলে দেয়ালের অন্যপাশে শুধু দুটি আলোর গুচ্ছ থাকত। কিন্ত আমরা দ্বিতীয় দেয়ালে উজ্জ্বল আলো এবং অন্ধকারের একটা ব্যতিচার প্যাটার্ন দেখতে পাই। এটা প্রমাণ করে যে আলো আসলে তরঙ্গ।
তবে আলোর তরঙ্গ ধর্ম আরেকবার সন্দেহের মুখে পড়ে উনিশ শতকের শেষ দিকে। সেসময় বিজ্ঞানীরা খেয়াল করেন, কোনো ধাতব পৃষ্ঠের ওপর আলো পড়লে সেটি থেকে ইলেকট্রন ছিটকে বেরিয়ে আসে। আলো তরঙ্গ ধর্মী হলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। আলোর এই ধর্মের নাম দেওয়া হয় ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট বা আলোক-তড়িৎক্রিয়া। এর কোনো ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। অবশেষে এর সমাধান দেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।
১৯০৫ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের সদ্য আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যবহার করে এই রহস্যের সমাধান করেন আইনস্টাইন। তিনি বলেন, আলো আসলে অবিচ্ছিন্ন নয়, বরং এটি নিঃসৃত হয় গুচ্ছ বা প্যাকেট আকারে। সহজ কথায়, আলো নিঃসৃত হয় কণা আকারে। আলোর এই কণাকে তিনি বলেন লাইট অব কোয়ান্টা বা আলোর কোয়ান্টা। প্রায় দুই দশক পরে আলোর এই কণার নাম দেওয়া হয় ফোটন। ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টের এই ব্যাখ্যার জন্যই ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান আইনস্টাইন। এর থেকে প্রমাণিত হয়, আলো কণা ধর্ম মেনে চলে।
তাহলে শেষ কথা কি দাঁড়াল? আলো কণা নাকি তরঙ্গ? কোয়ান্টাম তত্ত্ব মতে, আলো আসলে দুই ধর্মই মেনে চলে। একে বলা হয় কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা। এর সরল মানে হলো, আলো একইসঙ্গে কণা এবং তরঙ্গ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।