কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন সেও প্রায় তিন মাস। সেরে ওঠার এত দিন পর হিদার টের পায়, ঘরের এখানে সেখানে মাথার চুল পাওয়া যাচ্ছে। গোসলের পরপর মাথার চুলে আটকে যাচ্ছে ড্রেনের মুখ। প্রতিবার চুল ব্রাশ করার পর ব্রাশ ভরে যাচ্ছে চুলে। শুধু তাই নয় মাথায় এমনিতেও আঙুল বুলালে হাতে চুল উঠে আসছে!
শুধু হিদারই নয়, কভিড থেকে সেরে ওঠা অনেকেই এই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। করোনা ভাইরাস শরীর থেকে চলে গেলেও ভিন্ন রকমের এক প্রতিক্রিয়া রেখে গেছে, যা কি-না মাথার চুল ফেলে দিচ্ছে।
কভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের চুল পড়ে যাওয়ার বিষয়টি মনোযোগ পেয়েছে চিকিৎসকদের। তারা এর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন। কানাডার মিডিয়াও নজর দিয়েছে নতুন এই সংকটটার দিকে।
চিকিৎসা শাস্ত্রে এই পরিস্থিতিটাকে বলা হয়- টেলোজেন ইফলুভিয়াম, অর্থাৎ কোনো বড় ধরনের অসুস্থতা, মানসিক চাপ বা শারীরিক আঘাতের পর চুল পড়ে যাওয়ার এমন ঘটনা হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন। তারা বলছেন, এই নতুন অদ্ভুত ভাইরাসটি শরীরে ১৪ দিন থাকার সময়ে ফুসফুসসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তাৎক্ষণিক ক্ষতি করা ছাড়াও সুদূরপ্রসারী ক্ষতির সামর্থ্য রাখে। আক্রান্তের চুল পড়ে যাওয়া তেমন একটি ঘটনা। সম্প্রতি টরন্টো স্টারের এক রিপোর্টে এ তথ্য বিস্তারিত উঠে আসে।
কানাডিয়ান হেয়ার লস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ডা. জেফ ডনোভ্যান এ কথার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তার ক্লিনিকে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে রোগীর ঢল নেমেছে! তার মতে, মানুষের শরীর যখন বড় ধরনের বিপদে পড়ে তখন শরীরের শক্তির সিংহভাগই ব্যয় হয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো রক্ষা করার কাজে। এই সময় মাথার চুলের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং চুলগুলো অনেকটা এনার্জি সেভিংসের মতো করে ‘রেস্টিং ফেজ’-এ চলে যায়। একটি একক চুল রেস্টিং ফেজে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রায় তিন মাস সময় লাগে সেটি ঝরে পড়তে।
১০০ বছরেরও বেশি সময়ের আগে ঘটে যাওয়া স্প্যানিশ ফ্লু’র সময়েও চুল পড়ে যাওয়ার এই ঘটনা ঘটেছিল। গত শীতে করোনাভাইরাস প্রবলভাবে কানাডাতে হানা দেওয়ার পর চুলের ওপর তার প্রভাব ধরা পরছে এখন গরমকালে এসে।
এর বাইরেও ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন এবং কভিড-সারভাইভরদের একটি ফেসবুক গ্রুপের যৌথ গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন ডা. নাতালিয়া ল্যাম্বারট। তিনি দেখেছেন যে, সারভাইভরদের ভেতরে চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যাটি অত্যন্ত কমন। অথচ সাধারণ ফ্লু ভাইরাস আক্রমণ করলে চুল পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে না। ডা. নাতালিয়া বলেন, করোনাভাইরাস শরীরের প্রতিটি অংশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। অথচ শুরুর দিকে ভাবা হয়েছিল শুধুমাত্র ফুসফুসই হচ্ছে এদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য যেটা পরে সঠিক বলে আর ধরে রাখা যায়নি।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডারমাটোলজিস্ট ডা. জুলিয়া ক্যারলের ভাষ্য, করোনা খুবই সন্দেহজনক ভাইরাস এবং যতটা ভাবা হয়েছিল তার চাইতে শরীরের অনেক বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম। তবে তিনি আশার বাণীও শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চুল ঝরে যাওয়ার ব্যাপারটি ক্ষণস্থায়ী, এটা আপনাআপনি মিটে যাবে, তবে কারো কারো বেলায় সময়টা এক থেকে দু’বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে পুরোপুরি আগের চুল ফিরে পেতে। তিনি চুলের ওপর কোনো কেমিক্যাল পরীক্ষা, যেমন; রং করা, পার্ম করা বা কোনো ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি করতে বারণ করেছেন। বরং হেলদি ডায়েট এবং একজন ডারমাটোলজিস্টের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে সমস্যার মূলে অন্য কিছু আছে কি-না সেটা যাচাই করতে পারেন।
সেরীন ফেরদৌস: প্রবাসী সাংবাদিক ও কানাডায় কর্মরত নার্স
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।