জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদানে কৌশলী হয়ে উঠেছে। কম ঝুঁকি, বেশি লাভ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এখন স্বল্পমেয়াদি ঋণে ঝুঁকছে ব্যাংক।
এছাড়া স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার বিবেচনা, সামনে সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসছে ব্যাংক।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের বড় ঋণের কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদি ঋণের পেছনে হাঁটছে । যদিও ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা তা স্বীকার করতে চান না।
বেসরকারি খাতের ঋণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের শীর্ষ গুটিকয়েক খেলাপির কাছেই বিপুল অঙ্কের তহবিল আটকে রয়েছে। এতে বঞ্চিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এসব কারণেই ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি ঋণে ঝুঁকছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেয়াদি ঋণ আদায়ের হার নামমাত্র। অন্যদিকে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কৃষকের দেওয়া চলতি, চাহিদা ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ আদায়ের হার বেশি। এই কারণে ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি ঋণের দিকে ঝুঁকে থাকতে পারে।
গত ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন। তাঁদের নেওয়া সব ঋণ ছিল দীর্ঘমেয়াদি। মাত্র ২০ জন গ্রাহকের কাছে বিতরণকৃত ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার মধ্যে খেলাপি ছিল ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। যদিও মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫।
বাংলাদেশ ব্যাংকও একই রকম তথ্য দিয়ে বলছে, দেশের বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে মেয়াদি ঋণের (ফিক্সড টার্ম লোন) পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ৭৬ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণের মধ্যে শর্টটাম (কৃষি ও মাইক্রো ক্রেডিট) ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এখাতে খেলাপি ২ হাজার ১২৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
একইভাবে বিতরণকৃত ডিমান্ড ঋণ (স্বল্পকালীন) ২ লাখ ৯৮ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ১৭ হাজার ১০২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আবার বিতরণ করা চলতি ঋণের (স্বল্পমেয়াদি) পরিমাণ ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৩৪ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকগুলো সুদের হার, তারল্য ও দেশীয় ও রাজনৈতিক নানা বিষয় বিবেচনা করে ঋণ দেয়। ব্যবসায়ীরা হিসাব কষেই ঋণ নেবেন, এটা স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদি ঋণ নির্ভর করবে চাহিদার ওপর। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণে লাভ বেশি।
তবে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও মো. মুরশেদুল কবীর বলেন, ‘ব্যাংক চলে নিজস্ব পরিকল্পনায়। সবার আগে গুরুত্ব পায় দেশ ও জনগণের উন্নয়ন। আর দেশের উন্নয়নের যেহেতু কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) অবদান অনেক বেশি। সে জন্য আমরা এই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে গুরুত্ব দিচ্ছি। এখানে ঋণ দিলে অর্থনীতির গতিশীলতা ত্বরান্বিত হয়। দেশে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। ঋণ আদায়ের হারও ভালো। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ একবারে বন্ধ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জুলাই থেকে সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে সেই স্থলে স্মার্ট সুদহার চালু করেছে। এতে সুদের হার প্রায় ১১ শতাংশ হয়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে তারল্য ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি ঋণ বিতরণের পথেই হাঁটছে।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন আব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সুদের হারের সঙ্গে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদি ঋণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এটা নির্ভর করে মূলত গ্রাহকের চাহিদার ওপর। গ্রাহক সুদের হার, সময় ও বিনিয়োগের নানা দিক বিবেচনা করে ঋণ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু করার নেই। ব্যাংক বিনিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বল্পকালীন বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা; যা গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১৯ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, ‘সব সময় লাভ-ক্ষতির দিকে থাকার সুযোগ কম। আমরা গ্রাহকের চাহিদা বুঝে ঋণ বিতরণ করি। তবে কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।