বরুন কুমার দাশ, বাসস: প্রাণঘাতী করোনা যুদ্ধেও থেমে নেই কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে ভূমিকা রাখছে এসব ক্লিনিক। সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে মানুষ ছুটছেন ক্লিনিকগুলোতে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও বেড়েছে।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ রোধে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছে। শরীর খারাপ লাগলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নির্দেশাবলী মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
তারা জানান, করোনাকালে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা রেড়েছে। কারণ, এখন সাধারণ রোগীরা সরকারি হাতপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে। তাই, সাধারণ কোন অসুখ হলে, তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে সেবা নিচ্ছেন।
কমিউনিটি বেইজ হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. সহদেব চন্দ্র রাজবংশী বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সাহসিকতার সঙ্গে কর্মীরা প্রতিদিনই গ্রামীণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ক্লিনিক কর্মীদের সেবা প্রদানের প্রক্রিয়ার গাইডলাইন ইতোমধ্যে অনলাইনে তাদের দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য কোভিড-১৯ সংক্রমিত প্রান্তিক জনগণের নমুনা সংগ্রহের জন্য তাদের এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে সম্ভাব্য রোগী চিহ্নিতকরণ এবং ডাটা সংগ্রহের মাধ্যমেও সিএইচসিপিরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন বলে তিনি জানান ।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানার কুসম্বি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা লিপন কুমার সরকার জানান, গত কয়েক দিন যাবত জ্বর, স্বর্দি ও কাশিতে ভুগছি। আমার পক্ষে ১৪ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার করোনার এই সময়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে। সরকারী হাসপাতালে অনেক জায়গা থেকে রোগী আসবে, কে কোথায় থেকে আসবে, তার শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কি না এসব ভেবেই বাড়ির কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে এসেছি। এখানে স্বাস্থ্য পরমার্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ-পত্র আমরা পেয়ে থাকি।
কুসম্বি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অমৃত প্রমাণিক বাসসকে বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে লোকজন এখন জ্বর, সর্দি, কাশি হলে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে যান না। এ জন্য গ্রাম এলাকার লোকজন আমাদের কাছেই ভিড় করছেন। আগে গড়ে প্রতিদিন একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০-৪০ জন রোগী পাওয়া যেত, এখন আসছে তার দ্বিগুণ।
তিনি বলেন, করোনাকালিন রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের পিপিই, মাক্স ও হ্যান্ড গ্লাভস দেওয়া হয়েছে। আমরা রোগীদের সাবধানেই সেবা দিচ্ছি। এই সময়ে রোগীদের কিভাবে সেবা দিতে হবে সে বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বড়াইগ্রাম সদর উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার উজ্জল মন্ডল বাসসকে জানান, আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ও উন্নত যন্ত্রপাতি না থাকায় বোঝার উপায় নেই কার শরীরে করোনার উপস্থিতি রয়েছে। তারপরও সামাজিক দূরত্ব মেনে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় গ্রামের অনেকেই আসছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে। জ্বর, সর্দি, কাশি, পাতলা পায়খানার রোগীই বেশি আসছেন। আর প্রাথমিকভাবে এসব লক্ষণ করোনার উপসর্গ বহন করে। সব কিছু জেনেও নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন বলেন, যশোরে সবকটি কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা আছে। সেখানে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। রোগীরা যেন ঠিক মতো বিনামূল্যে ওষুধ পায় সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। করোভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে সচেতন এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
সিবিএইচসি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে মে, ২০২০ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে ১০০ কোটির বেশি লোক স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। এর মাঝে দুই কোটি ৩২ লাখের বেশি জরুরি ও জটিল রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা ৮৫ হাজারের বেশি।
সিবিএইচসির লাইন ডিরেক্টর ডা. সহদেব চন্দ্র রাজবংশী জানান, ভবিষ্যতে এসব ক্লিনিকে ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগও শনাক্ত করা হবে। বিনামূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া গ্রামের মানুষের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে মহামারি আকারে দেখা দেওয়া নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত বিশ্ব। এ অবস্থায় বসে নেই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরাও। সাধ্যমতো মানুষের পাশে থেকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। আরও ১ হাজার ২৯টি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টঙ্গীপাড়া থানাধীন পাটগাঁতী ইউনিয়নের ঘিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে এই কার্যক্রমের সূচনা করেন। দেখতে দেখতে ২১ বছরে পা রাখা এ ক্লিনিক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার একটি অপরিহার্য্য অংশে পরিণত হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।