জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বকে প্রায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চট্টগ্রাম কতোটা প্রস্তুত? প্রশ্নটি চট্টগ্রামবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সঠিক ব্যক্তি কে বা প্রতিষ্ঠান কোনটি?
সেই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান সঠিক কাজটি যথাযথভাবে করছেন তো?
* এবার একটু খটকা লাগল। আসলেই তো। সঠিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনটি?
* নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সঠিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া এই মুহূর্তে কষ্টসাধ্য।
সঠিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে যদি বিলম্ব হয়, তাহলে উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরটিও নিশ্চয়ই সুদূর পরাহত।
এটা ঠিক, প্রকৃত কাজের বাস্তব চিত্র খুঁজে পাওয়া কিছুটা দূরহ। তবে দৃশ্যমানভাবে চলছে করোনাভাইরাসের ‘ফেসবুকীয় সংস্করণ’। নিশ্চয়ই সচেতন নাগরিকরা এটি লক্ষ্য করছেন।
* সচেতন নাগরিকরা জানেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা কমিটির প্রধান নগরীর মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন। সরকার যেহেতু কমিটি করে দিয়েছে, তাই একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথা আলোচনায় আসেনি। এখন খোঁজ নেওয়া যাক, এই কমিটির নেতৃত্বেই কী সব কাজ হচ্ছে? সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তারা সঠিক কাজটি সুসমন্বিতভাবে করছেন তো?
একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার রেখাচিত্র মাঠে থেকে অবলোকন করছি। অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, করোনা ঠেকানোর কাজটি সরকারি সংস্থা ও কর্তারা সুসমন্বিতভাবে করছেন না। আবার এটাও বলি, অগোছালো ভাব থাকলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কিছু কর্মকর্তার উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
ভালো উদ্যোগগুলো কী?
* সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলা ও প্রতিরোধে কমিটি গঠন ও কমিটির কার্যক্রম বাস্তবায়নে মিটিং করা।
* জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া।
* ছুটি ঘোষণার পর নগরবাসী যখন ছুটি পেয়ে আমোদ-ফূর্তির ভ্রমণ শুরুর পর বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা।
* সড়কে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো।
* কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া… ইত্যাদি।
প্রনিধানযোগ্য উদ্যোগ, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের নেওয়া কয়েকটি উদ্যোগ পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হওয়া। যা অবশ্যই ইতিবাচক এবং প্রশংসনীয়।
সমন্বয়হীনতার খণ্ডচিত্র
ভালো উদ্যোগগুলোর ভেতরেই ঢুকে গেছে প্রকট সমন্বয়হীতা। এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার কাজে সুসমন্বয় হচ্ছে না বা ‘খাপ’ খাচ্ছে না। এর নেপথ্য অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে অন্যতম কারণ, ফেসবুক-গণমাধ্যম প্রচারণা। মোদ্দাকথা, কিছু আত্মপ্রচারকারী ফেসবুক প্রেমী কর্মকর্তার প্রচারকামীতা।
* বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ভিড় কমাতে প্রথমেই নিষেধাজ্ঞা দেন মহানগর পুলিশ কমিশনার। পরে দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।
* সমন্বিত হলো না।
* পুলিশ কমিশনার জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটালেন, প্রশংসিত হলো এবং পরদিন দেশব্যাপী শুরু হলো। এরপর মেয়র আ জ ম নাসির নিজেই স্প্রে করতে মাঠে নামলেন। এটি সমন্বিতভাবে হলো না। সিটি করপোরেশন অন্য সংস্থাগুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে করতে পারতো।
* স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকগণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর যুদ্ধে অগ্রসৈনিক। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি গোড়াতেই যথাযথ মনোযোগ পায়নি। হাসপাতালগুলোতে ৮৫ শতাংশ চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য পদের কর্মীরা অনুপস্থিত। সরকারিভাবে কিছু পিপিই দেওয়া হলো, বেসরকারি পর্যায়ে দেওয়া হলো না, চিকিৎসকেরা ভয়ে-কৌশলে দূরে সরলেন। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর অগ্রসৈনিকরা যুদ্ধ শুরুর আগেই ‘শুয়ে পড়ল’। ফলাফল বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু।
* শুরুতেই প্রয়োজন ছিল করোনা শনাক্তকরণ কীট। সেখানেও চট্টগ্রামের মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর ‘বিশেষ’ দেনদরবারের পর বিলম্বিত প্রাপ্তি। তাঁদের একইভাবে দৌঁড়ঝাপ করতে হলো চিকিৎসকদের জন্য পিপিইসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য।
* ‘লকডাউন’ শুরুর পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যতম প্রধান কাজ ছিল- মানুষকে ঘরে রাখার ব্যবস্থা করা। শুরুতে নগরীর প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা রাখতে সমর্থ হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফেসবুক ও গণমাধ্যমে জুটল বিপুল প্রশংসাবাণী। কিন্তু নগরীর অলি-গলিগুলো হয়ে গেল ‘বাজার’। প্রধান সড়ক ফাঁকা এবং অলি-গলিতে বাজার বসিয়ে ‘লকডাউনের’ সুফল কতটুকু পাওয়া গেল বা যাবে-সেটা সচেতন মানুষের কাছে দুর্ভোদ্য।
* ২৯ মার্চ নগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর মেয়র এবং চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা কমিটির প্রধান আ জ ম নাসির উদ্দিনসহ পদস্থ কর্মকর্তারা মিটিংয়ে মিলিত হলেন। মিটিং ডাকলেন নগর পুলিশ কমিশনার। অথচ এটি ডাকতে পারতেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির প্রধান তথা মেয়র। সুসমন্বিত হলো না।
যাইহোক, সেখানে করোনা আক্রান্তদের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নানা সিদ্ধান্ত হলো। কেউ মারা গেলে বায়েজিদ থানার আরেফিন নগর কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্তও হলো। কিন্তু কাঁরা কীভাবে এসব কাজ করবেন- তাঁদের কিভাবে, কখন কোথায় ট্রেনিং দেওয়া হবে, কয় সদস্য বিশিষ্ট টিম হবে, কয়টি টিমপ্রস্তুত করা হবে- এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এমন তথ্য জানা গেল না মিটিংয়ের কার্যবিবরণী থেকে।
* এতোসব সমন্বয়হীনতা ছাপিয়ে করোনাভাইরাসের ‘ফেসবুকীয় সংস্করণ’ শুরু হলো খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে। খাদ্য সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রেও সিটি মেয়র বা চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা কমিটির প্রধানসহ সমন্বিতভাবে হলো না। চট্টগ্রামের মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতিবিদ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো অগোচালোভাবে দুঃস্থ মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু করল। তারপর ‘ফেসবুক-গণমাধ্যম’ প্রচার প্রতিযোগিতা।
* একজন অপরাধ বিষয়ক গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের কর্মকাণ্ডের দিকে বেশি নজর ছিল। নগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্য এরকম ‘নিজের ঢোল নিজকে পিঠাতে হয়, অন্যকে দিলে ছিড়ে ফেলতে পারে।’ পুলিশ নিজের ঢোল পেঠানোর জন্য খাদ্য সহায়তা দিতে শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে হাত বাড়ল। এরপর চলছে পুলিশের খাদ্য সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম। আবার ফোন করলেই ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, লজ্জার কারণে মধ্যবিত্তরা খাদ্য সহায়তা নিতে পারলে ফোন করলে তাঁদের বাসায় পৌঁছানোসহ নিত্য নতুন সব প্রচার কার্যক্রম। এমনভাবে ঢোল পেঠানো শুরু হলো- পুলিশ সদস্যদের কেউ চাল, ডাল ও আলু বাঁধা শুরু করলেন, কেউ মাথায় বস্তা নিয়ে দুঃস্থদের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন। ভাবখানা এমন, পুলিশকে এবার ‘প্রকৃত বন্ধুর’ তকমা না দিয়ে জনতা যাবে কই? আবার দেখা গেল, ফোন করলেই বাসায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণার পর ‘নাক উঁচু’ ভাব। কোনো কোনো নাগরিক থানায় ফোন করে মাছ ও পাঁচফোড়ন কিনে পাঠানোর আবদার করেছিলেন, তখনই পুলিশ কর্মকর্তারা স্মার্টফোনের কী-বোর্ডে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আঙুল চালালেন। এমন ভাব দেখালেন যেন আঁতে ঘা লেগেছে।
* শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে ত্রাণ বিতরণ আপাতত দৃষ্টিতে ভালো। আরো ভালো দেখায় ‘বাহাদুর পুলিশ কর্মকর্তার’ মাথায় খাদ্যপণ্যের বস্তাবহনের ফেসবুকীয় দৃশ্য দেখে। অনেক লাইক-কমেন্ট মিলে এতে। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রকৃত পুলিশিং কার্যক্রমের মধ্যেই যেন ‘করোনা ভর’ করেছে। শুক্রবার দামপাড়ায় একজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেই বাড়িসহ আশপাশের ভবন ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। সেখানে একদল সদস্য পাহারায় আছেন। সেই পুলিশ সদস্যদের জন্য সময় মতো খাবার কী নগর পুলিশ পৌঁছে দিয়েছে? নাকি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে? সেই খবরটুকু নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ‘বে-খবর’ হয়েই থাকল! অতি সচল ফেসবুক পেজে এমন কোনো ছবি ও তথ্য প্রচারিত হলো না!
* নগরীতে রটেছে, পুলিশ ত্রাণ দিচ্ছে। পুলিশ কমিশনার কার্যালয় এবং থানার সামনে ত্রাণ প্রত্যাশীরা ভিড় করছেন। কিন্তু পুলিশ কী নগরীর দুঃস্থ পরিবারের সংখ্যা নির্ধারণ বা তালিকা করেছে? করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো সংক্রান্ত কমিটির প্রধান মেয়র। খাদ্য সহায়তা বিতরণে কী সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় হয়েছে? চট্টগ্রামে মন্ত্রী- সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় হয়েছে? হয়নি। যদি সমন্বয় হতো, তাহলে মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়িক, এনজিও কিংবা সামাজিক সংগঠনেরগুলোর সব খাদ্য সহায়তা সমন্বিতভাবে দেওয়া সম্ভব হতো। একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি হতো। সেই তালিকা ধরে প্রকৃত দুঃস্থদের দরজায় রাতের অন্ধকারে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হতো। এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্বল হতো। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো কমানো যেত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও প্রতিপালিত হতো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালিত না হওয়ার কারণ, সমন্বিতভাবে করা হলে তো আর মনের মতো ছবি ‘ফেসবুক প্রচারণা’ হয় না! নিজের সুন্দর ছবিটি যে আপলোডের সুযোগ সীমিত হবে!
* শনিবার দেখা গেল, নগরের ১৬০ জন বাসিন্দা এবং ২৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশ থেকে ফেরার পর যাঁরা কোয়ারেন্টিন শেষ করেছেন তাঁদের নগর পুলিশের পক্ষ থেকে ‘সনদ’ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির বিষয়টি সরাসরি স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট। কোয়ারেন্টিনের সনদ! আগে শোনা যায়নি। এখন দেখা গেল, কোয়ারেন্টিন শেষ করলেও পুলিশ সনদ দেয়! চমকপ্রদ আইডিয়া বটে!
এমন সনদ যদি দিতেই হয় তাহলে তো স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত কমিটি কর্তৃক দেওয়া হতো। তাহলেই বলা যেত, সমন্বিতভাবে কাজ চলছে।
* এখানে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার ‘মারাত্মক বুদ্ধিভিত্তিক’ কৌশল উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি অধঃস্তন কর্মকর্তার কাছে কিছু ত্রাণের প্যাকেট দিয়েছেন দুঃস্থদের মধ্যে বিলি করার জন্য। সঙ্গে নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রতিটি প্যাকেট বিলির পর কমপক্ষে তিন অ্যাঙ্গেলে ছবি তোলবেন। যাতে ভালো ছবিটিই ফেসবুকে আপলোড করা যায়!
এমন বুদ্ধিমান কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে নিশ্চিত কীর্তিমান হবেন!তবে অধ্বঃস্তন কর্মকর্তার ভাগ্য ভালো, ‘থ্রি-ডি’ ফরম্যাটে ছবি তোলার নির্দেশনা দেননি।
* আরেক চমকপ্রদ বুদ্ধি-সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বৃত্ত অঙ্কন পদ্ধতি। কয়েকটি ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে দেখা গেল, ঊর্ধ্বতন কর্তা যাওয়ার আগে বৃত্ত আঁকা হয়। কর্তা চলে যাওয়ার পর গা ঘেষাঘেষির করে ঝাঁকজমকপূর্ণ ফটোসেশন চলে।
* ‘দুঃস্থদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে’ বাক্যটিই এখন অতি বিপণনকৃত। কিন্তু যাঁরা এসব করছেন, তাঁরা কী চট্টগ্রাম নগরীর প্রকৃত দুঃস্থ পরিবারের সংখ্যা জানেন? জানেন, নগরীতে ভিক্ষুক কতোজন? যদি জানেন, তাহলে ‘ফেসবুক পেজে’ একবার ঘোষণা দিন, ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নগরীতে ভিক্ষুক ছিল … জন; দুঃস্থ পরিবার ছিল …টি। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নগরীতে ভিক্ষুক বেড়েছে … জন, দুঃস্থ পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে…টি।’ এমন পরিসংখ্যান যদি দিতেই না পারেন, তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে দিনে-রাতে শত শত ‘ভিক্ষুক’ সৃষ্টির জন্য আপনার ফেসবুকীয় প্রচারণা দায়ী। হলফ করে বলা যায়, ‘চট্টগ্রাম নগর অতীতে কখনোই বিপুলসংখ্যক ভিক্ষুকের নগর ছিল না; অত্যন্ত সীমিত ছিল সেই সংখ্যা। আর এখন ‘আতিক্ক্যা ভিক্ষুকের’ জন্ম হয়েছে ‘নিজের ঢোল নিজে পেটানোর’ কুমানসিকতার কারণে। দয়া করে এবার ভাবুন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগেও দুঃস্থদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বের করে এনে কাজ করে জীবিকার জন্য নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছিলেন। সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে আপনারাও অংশীদার ছিলেন। এখন মাত্র কয়েকদিনের জন্য ‘মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে’ ছুটি ঘোষণা করায় কিছু আত্মপ্রচারকামীরা কৌশলে নগরকে ভিক্ষুকের নগরে পরিণত করলেন? এতে করে কী প্রধানমন্ত্রীর একটি ভালো উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে না?
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যত অন্ধকার
* নগরে এখনো মাত্র একজন রোগী শণাক্ত হয়েছেন। কয়েকটি বাড়ি লকডাউন হয়েছে। যদি এক হাজার রোগী শনাক্ত হয়? ১০০ জন মারা যান? তাহলে ওই রোগীদের ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে? কয়টি টিমকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে?
* কারা করবে সেই সংস্থানা হয় ঠিক হলো? লোকবল? যাঁরা এখন দিনে রাতে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন তাঁরাই তো। খোদা না করুক, অবস্থা যদি খারাপের দিকে যায়। তাহলে কয়জন পুলিশের মানসম্মত পিপিই আছে? নগরে প্রায় ছয় হাজার পুলিশ সদস্য এখন মাঠে। দুভার্গ্যবশত, এঁদের কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হলে? অবস্থা কী দাঁড়াবে? মরদেহ সড়কে-বাসায়-হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকলে- কে সরাবে?
* এমন সব বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের তথ্য পোস্ট ফেসবুকে দেখতে বড্ড সাধ জাগে; কিন্তু এমন তথ্য দেবেন কে?
* অধিকাংশই যে খাদ্য সহায়তার বস্তা মাথায় নিয়ে ফেসবুকের পাতায় দৌঁড়াতে ব্যস্ত।
* নিজের ঢোল নিজে পেটাতে ব্যস্ত।
* পরিশেষে বলা যায়, এখনো সময় আছে। আমেরিকা বা ইটালির মতো করুণ পরিণতির দিকে এই নগরীকে, এই দেশকে নিতে না চাইলে ‘নিজের ঢোল নিজে পেটানো’ আপাতত বন্ধ করুন। ফেসবুকের মায়াজাল ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসুন। যত দ্রুত ফিরবেন- ততই চট্টগ্রামের জন্য মঙ্গল। দেশের জন্য মঙ্গল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নেও মঙ্গল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।