জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন একটি দুটি করে বাড়ছে এবং সারা পৃথিবীতে এই রোগের দ্রুত বিস্তারের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রচার হচ্ছে, তখন এ নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি এরকম লক্ষণ দেখা দিলেই হাসপাতালে দৌড়ানোর দরকার নেই।
এরকম হলে তাদেরকে প্রথম বাড়িতে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
লোকজন কেন হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে?
রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে মওসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা শুরু হয়, শেষ হয় সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু এবছর এই মওসুম একটু আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে।
“এই সিজন শুরু হয়ে যাওয়াতে যেটা হয়েছে যে অনেক মানুষের এখন সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা হচ্ছে। মানুষজন যেহেতু এখন সচেতন তাই তারা মনে করছে যে এটা হয়তো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।”
আর এজন্যে সাধারণ লোকজন পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে বলে তিনি মনে করেন। শুধু লোকজনই নন কিছু কিছু চিকিৎসকও মনে করছেন যে এটা হয়তো এই ভাইরাসেরই সংক্রমণ।
লক্ষণ দেখা দিলে কী করতে হবে?
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মি. আলমগীর বলেন, “আপনার যদি এরকম লক্ষণ দেখা দেয় এবং গত ১৪ দিনে আপনার বিদেশ ভ্রমণের কোন ইতিহাস না থাকে, দয়া করে আপনি বাড়িতে থাকুন, ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসা করুন, নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে যান।”
তিনি বলছেন, এসব লক্ষণ দেখা দিলেই পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিক কিম্বা তাদের পরিবারের সদস্য।
মি. আলমগীর জানান, এসব পরিবারের বাইরে বাংলাদেশে আর একজনও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, যদি তাদের বাইরে কমিউনিটিতে এই ভাইরাসটি পাওয়া যায় তাহলেই প্রমাণ হবে যে এটি স্থানীয়ভাবেও ছড়াচ্ছে।
লক্ষণ তো একই
সাধারণ জ্বর সর্দি কাশির সাথে করোনাভাইরাসের লক্ষণের মধ্যে তেমন একটা তফাৎ নেই। সেকারণে কারো এরকম লক্ষণ দেখা দিলে তিনি কী করবেন?
মি. আলমগীর বলেন, বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশিদের পরিবার ছাড়া এখনও পর্যন্ত কমিউনিটিতে কোন সংক্রমণ হয়নি।
“আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন। সেরকম কিছু হলে আমরা ঘোষণা করে দেব। তখন কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যাবে। তখন কেউ টেস্ট করাতে চাইলেই করাতে পারবেন।”
অভিযোগ উঠেছে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই সন্দেহে কেউ কেউ হাসপাতালে গেলে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।
ফলে তারা বুঝতে পারছেন না যে কী করবেন- তারা কী নিজেদের অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখবেন নাকি তার জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করানো দরকার হবে?
“আপনার যদি মনে হয় যে আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার বাড়ির বাইরে বের হওয়ার দরকার নেই। আপনি আমাদের হট-লাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। আমাদের ১৭টি ফোন নম্বর আছে,” বলেন তিনি।
কোথায় যোগাযোগ করবেন
ই-মেইলের মাধ্যমেও আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইমেইলের ঠিকানা: [email protected]
এর পাশাপাশি একটি ফেসবুক পাতাও খোলা হয়েছে। সেখানে বার্তা দেওয়া হলেও আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হবে।
তিনি জানান, হট-লাইনে আজ বুধবার ৪,৮০০ এর বেশি কল এসেছে। ফলে হট-লাইনে সবকিছু সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কোন পরিবারে যদি বিদেশ থেকে কেউ এসে থাকেন তাহলে তাদের আর সকলের কাছ থেকে আলাদা থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আইইডিসিআরের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
“আমরা কিন্তু বাড়িতে গিয়ে নমুনা নিয়ে আসছি। আপনার যদি গলা ব্যথা, শুকনো কাশি অথবা জ্বর থাকে, আপনি বাড়িতে থাকুন, আমাদের টিম দিনের কোন এক সময় আপনার কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে।”
শ্বাসকষ্ট হলে
“যদি কোন রকমের শ্বাসকষ্ট থাকে এবং আপনি ঢাকায় থাকেন তাহলে আপনি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চলে যাবেন। তারা আপনাকে সেখানে ভর্তি করে আমাদেরকে খবর দেবে। এবং আমরা গিয়ে নমুনা নিয়ে আসবো। আপনার এখানে সেখানে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করার একদমই প্রয়োজন নেই।”
তিনি জানান, সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, শুকনো কাশি এবং দুর্বলতা।
“সুনির্দিষ্টভাবে এই তিনটি লক্ষণ যদি থাকে তাহলে আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাদের পরামর্শ দেব। দরকার হলে নমুনা সংগ্রহ করবো।”
তিনি জানান, কেউ যদি মনে করেন যে তার ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ লাগবে, আইইডিসিআরে এলে তাকে তার ওষুধ বিনা পয়সাতেই দেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।