অর্থনীতি ডেস্ক : অনেক দিন ধরেই চীনের অর্থনীতিতে শ্লথগতি চলছে। এর মধ্যে দেশব্যাপী নতুন করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ ও উদ্ধার কর্মসূচির আওতায় কর হ্রাস, ব্যয় বৃদ্ধি এবং সুদ হার কমাতে বাধ্য হতে পারে চীন। ফলে বিদ্যমান দুর্বল অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। অর্থনীতিতে এ ভাইরাসের প্রভাব পরিমাপ করা এই মুহূর্তে খুব কঠিন হলেও দেশটির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত একাধিক সংবাদ সংস্থা ও বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলছেন, দেশের বিশাল অঞ্চলে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার কারণে চলতি প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে যেতে পারে। টাকার অংকে এ ক্ষতি ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে তা সামাল দেয়ার মতো সামর্থ্য চীনের নেই। কারণ গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর মধ্যে ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ দেশটিকে আরো ভোগাবে।
চীনে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২৫৯ জনের মৃত্যু এবং ১২ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে চীন সরকারের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ছিল সামাজিক অসন্তোষ। বিশেষ করে বেকারত্ব নিয়ে খুব ভয় ছিল। এখন অর্থনীতিতে ভাইরাসের আঘাত সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বেইজিং। প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংকে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ তা এতেই স্পষ্ট।
অর্থনীতির ক্ষতি সামলাতে এরই মধ্যে চীনের নীতিনির্ধারকরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশেষ করে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যেসব ব্যবসা বাণিজ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেগুলোকে সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় ও সেবা প্রদানে ১ হাজার ২৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবস্থা এবং ব্যক্তি ঋণের সুদ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বৃহৎ ব্যাংকগুলো। ব্যাংক অব চায়না বলেছে, উহান ও হুবেই প্রদেশের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা আয়ের উৎস হারাবেন তাদের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য পিপলস ব্যাংক অব চায়না নববর্ষের ১০ দিনের ছুটি শেষে খুলছে আগামী সোমাবার। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আর্থিক বাজারে যথেষ্ট তারল্য নিশ্চিত করা হবে। হংকংয়ের পুঁজিবাজার এ সপ্তাহে খুলেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই হ্যাং সেং সূচক প্রায় ৬ শতাংশ পড়ে গেছে।
চীনা অর্থনীতিবিদ ঝ্যাং মিং বলেন, অর্থনীতিতে আরো মন্দা ঠেকাতে আগামী মাসগুলোতে সরকারকে আরো আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে হবে। চায়নিজ একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সেসের অর্থনীতিবিদ ঝ্যাং আরো বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে যেতে পারে। এ মহামারী মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশা করছেন। যদিও খুবই আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি একটি অনুমান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারকে কর হ্রাস এবং জনস্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণে ব্যয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সরকার আরো ব্যয় বাড়াবে বলে আশা করেন তিনি।
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ট্যাবলয়েড দ্য গ্লোবাল টাইমস শুক্রবার বলেছে, চলতি প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমতে পারে। উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি আরো জানায়, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার নববর্ষের ছুটি বাড়িয়েছে এবং অনেক কারখানা বন্ধ করতে হচ্ছে। এতে জাতীয় উৎপাদনখাতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, পাশাপাশি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনেও ব্যাঘাত ঘটছে।
অনেক বিশ্লেষক এবারের ক্ষতি সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সময়কার চেয়েও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন। দুই দশক আগে এ ভাইরাস চীনের অর্থনীতিকে খুব কম সময়ের জন্য হলেও খাদে নামিয়ে দিয়েছিল।
করোনা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার এরই মধ্যে বিদ্যমান কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলেছে, সামনে পণ্যমূল্য বাড়বে এবং বিদ্যমান আর্থিক সঙ্কটকে আরো জটিল করে তুলবে। এবছর চাকরির বাজার এরই মধ্যে বেশ চাপের মুখে আছে। মূলত শিল্পখাত প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করে, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাত, এ খাতে এরই মধ্যে শ্লথ গতি বজায় করছে। করোনা ভাইরাস এ পরিস্থিতিকে আরো সঙ্কটাপন্ন করে তুলবে।
সূত্র: সিএনএন
ভাষান্তর : বণিক বার্তা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।