আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ধীরে ধীরে তার থাবা বিস্তার করছে ভারতে। অনেক দেশকে ছাপিয়ে ভারতে এখন প্রতিদিন অনেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের দিক দিয়ে রাশিয়াকেও পেছনে ফেলেছে ভারত। দেশটির বিশাল জনসংখ্যা ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলের অবস্থা করোনাভাইরাসের জন্য পরবর্তী হটস্পট হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো বিশাল দেশে এখনো করোনাভাইরাসের যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষা শুরু হয়নি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় বর্তমান মৃত্যুহারকে প্রমাণ্য ধরা যাচ্ছে না।
গত জুন মাসের শুরু থেকে ধীরে ধীরে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দিনে অন্তত দশ হাজার করে আক্রান্তের সংখ্য বাড়ছে। গত আট জুলাই পর্যন্ত ভারতের আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৪২ হাজার ৪১৭ জন। ভাইরাসবিদ শহিদ জামিলের মতে, বিপুল জনসংখ্যার কারণে ভারতে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব নয়। সরকার মাত্র গত মে মাসে ২৬ হাজার ভারতীয়র ভাইরাস পরীক্ষা করে। ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কিছু বিশ্লেষক এই পরিসংখ্যানকে প্রমাণ্য ধরে গোটা দেশের চিত্র বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ডাক্তার জামিলের মতো অনেকেই বলেছিলেন যে, ভারতের সবগুলো অঞ্চলে একযোগে পরীক্ষা করলে দেখা যেত, মধ্য মে মাসেই এক কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা আর আক্রান্তের সত্যিকারের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সমস্যা সব দেশেই আছে। যত বেশি পরীক্ষা করা হচ্ছে তত বেশি সংখ্যক আক্রান্ত মানুষ পাওয়া যায়। গত ১৩ মার্চ থেকে ভারত এক কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষা করে। কিন্তু গত ১ জুন থেকে করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়। ফলে অনেকের ক্ষেত্রে আগে পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এলেও, জুনের পর তাদের পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসছে। আর এতে করোনা পরিস্থিতি জনগণের মধ্যে বিশেষ আতঙ্কের সৃষ্টি করছে।
ভারতে এখন প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ছয় হাজার ৫০০ জনের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সামনের মাসগুলো ভারতের জন্য কতটা ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করছে। কভিড-১৯ টেস্টিং স্ট্রাটেজিস্ট হিমাংশু ত্যাগী ও আদিত্য গোপালের মতে, সংক্রমণ বিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরীক্ষা করার সময় অতিক্রম করেছে ভারত। প্রতিদিন নতুন নতুন সম্প্রদায় আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের এখনো পরীক্ষার আওতার মধ্যেই আনা হয়নি। চলতি মাসে এখনো ভারতে তিন দশমিক আট শতাংশ হারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে এরমধ্যেই আশার কথা হলো, ভারতে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে করোনায়, তারচেয়েও আরোগ্য লাভের গতি বেশি। ডাক্তার জামিলের মতে, আক্রান্ত হয়ে মৃতের গতির তুলনায় আক্রান্ত হয়ে আরোগ্য লাভের হার বেশি। কিন্তু আক্রান্ত হয়ে অধিক সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যাতে অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের আক্রান্তদের তুলনায় ভারতে আক্রান্তদের আরোগ্য হওয়ার গতি বেশি। একই সময়ে ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের মৃত্যুহারও কম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।