করোনাভাইরাস নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি আক্রমণ করছে এমন চিত্র দেখা গিয়েছিল চীন ও ইতালিতে। এবার একই চিত্র ধরা পড়লো যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। সেখানে নারীদের তুলনায় পুরুষদের করোনা সংক্রমণের হার প্রায় দ্বিগুণ। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সবচেয়ে আক্রান্ত নিউইয়র্কের বাসিন্দারা। সেখানে এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি। এদের মাঝে পুরুষের সংখ্যা নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন।
কেন নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি আক্রমণ করছে করোনাভাইরাস সেটার সঠিক কোন কারণ এখনো খুঁজে বের করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে কিছু বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন যে, নারীদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম রয়েছে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে একটি জোরালো ভুমিকা পালন করে। ফলে তাদের মাঝে করোনায় সংক্রমণে মৃত্যুর হার কম। অনেক চিকিৎসক এটাকে করোনাভাইরাসের ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ উল্লেখ করে এটাকে নিখুঁতভাবে এড়ানো অসম্ভব বলে মত দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমও চমকে দেওয়ার মতো রিপোর্ট দিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত শহরের প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে অন্তত ৪৩ জন করোনা আক্রান্ত, আর প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ জনের কাছাকাছি। চীন ও ইতালির ক্ষেত্রেও এমনটাই দেখা গিয়েছিল। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলেছিল, সে দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের মধ্যে ৭০ শতাংশই পুরুষ।
মাউন্ট সিনাই হেলথের সিনিয়র সার্জন ডাক্তার হানি বিটানি বলেছেন, জরুরি বিভাগে ভর্তি করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮০ জনই পুরুষ। বেশিরভাগেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। মধ্য বয়স্ক পুরুষদের শ্বাসের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র মাইকেল লাঞ্জা বলেছেন, নিউইয়র্কে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শহরের সব হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিতে ঠাসাঠাসি ভিড়।’
শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমের রিপোর্ট বলছে, প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে যদি ২২৮.৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, সেখানে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ১৪০.৩ জন। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ডাক্তার জোসেফ লুই বলেছেন, ভেন্টিলেটরে রয়েছেন এমন রোগীদের মধ্যেও নাকি পুরুষের সংখ্যাই বেশি। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জেনিফার লাইটার বলেছেন, হাসপাতালে যত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে ভাইরাসের সংক্রমণে, তাদের মধ্যেও দেখা গেছে পুরুষের সংখ্যাই বেশি।
পুরুষদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার সঠিক কারণ অজানা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি। নানা পরীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের শরীরে জীবাণু প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরির পরিমাণও পুরুষদের থেকে কিছুটা বেশি। কাজেই সেদিক থেকে দেখতে গেলে নারীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা পুরুষদের থেকে কিছুটা হলেও কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, পুরুষদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার একটা মূল কারণ হতে পারে অতিরিক্ত নেশা। সিগারেট, অ্যালকোহলের কারণে ফুসফুস, পাকস্থলীর প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই তলানিতে এসে ঠেকে। তার উপর ভাইরাসের সংক্রমণ হলে সেটা রোখার আর ক্ষমতা থাকে না।
সূত্র- নিউইয়র্ক টাইমস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।