আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এশিয়ার দুটো দেশ জাপান ও চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সেখানে নতুন করে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।
অলিম্পিকস আয়োজনকারী দেশ জাপানে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার দেড় বছরেরও বেশি সময় পর আরো কয়েকটি শহরে নতুন করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনিতে লকডাউন বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে সেনাবাহিনী।
টোকিওতে জরুরি অবস্থা
জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর টোকিওতে জরুরি অবস্থার পরিধি আরো বাড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর আশেপাশের এলাকাসহ ওসাকা শহরেও এখন কোভিড-বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশটি এক সময় বেশ সফল হয়েছিল কিন্তু এখন রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হচ্ছে এবং এজন্য মূলত অতি-সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টকেই দায়ী করা হচ্ছে।
দেশটিতে এই প্রথমবারের মতো একদিনে ১০ হাজারেরও বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে যাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি রাজধানী টোকিওতে।
টোকিওতেই, যেখানে পর পর তিনদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, মূলত সেখানেই অলিম্পিকস অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যেই এই শহরে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।
বলা হচ্ছে, টোকিওর হাসপাতালগুলোতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য যতো বেড আছে, তার ৬০ শতাংশই রোগীতে পূর্ণ।
অলিম্পিকের আয়োজকরা বলছেন, তাদের ভিলেজে আরো ২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এর ফলে এই জুলাই মাসে অলিম্পিক ভিলেজে মোট রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যে অলিম্পিকস আয়োজন করার ফলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে এবং তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।
জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ এখন মহামারির এক ভীতিকর পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, “লোকজন এখন সামনের দিকে তাকাতে পারছে না। এই অবস্থা কতদিন চলবে সেটা ভেবে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারছে না বলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।”
এখনও পর্যন্ত দেশটির ৩০ শতাংশেরও কম জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
চীনে নতুন করে সংক্রমণ
উহান শহরের পর এখন চীনের আরো একটি শহরে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে এই সংক্রমণ রাজধানী বেইজিংসহ আরো পাঁচটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রীয় মিডিয়াতে এই সংক্রমণকে উল্লেখ করা হয়েছে “উহানের পর সবচেয়ে বড় ধরনের সংক্রমণ” হিসেবে।
নানজিং শহরের বিমানবন্দরে ২০শে জুলাই ২০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর পর এই বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের ফ্লাইট ১১ই অগাস্ট পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমস।
নানজিং শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর।
সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনার মধ্যেই তারা শহর জুড়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু করেছে।
বলা হচ্ছে নানজিং শহরে প্রায় এক কোটির মতো বাসিন্দা। এরা ছাড়াও এই শহরে আরো যারা বেড়াতে এসেছেন তাদের সবাইকে এখন পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্র পরিচালিত শিনহুয়া বার্তা সংস্থা।
সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য কর্মকর্তারা ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ব্যস্ত বিমানবন্দর থেকেই এটি ছড়িয়ে পড়েছে।
নানজিং শহরের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়া থেকে আসা একটি ফ্লাইটের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
শিনহুয়া বলছে, ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী হাইজিন ব্যবস্থা মেনে চলেনি।
এজন্য বিমানবন্দর পরিচালনাকারীদের সমালোচনা করা হচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টির একটি কমিটি বলেছে, নজরদারির অভাব ও অপেশাদার ব্যবস্থাপনার কারণেই এটা হয়েছে।
পরীক্ষার পর দেখা গেছে এই ভাইরাসটি এখন অন্তত ১৩টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে রাজধানী বেইজিং এবং চেংডু।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংক্রমণ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। তারা মনে করেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির খবরে চীনের সোশাল মিডিয়াতে অনেকেই তাদের ভ্যাকসিন ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টের বিরুদ্ধে কতোটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা টিকা নিয়েছেন কীনা সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
সিডনিতে সেনা মোতায়েন
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে কোভিড লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য কয়েকশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গত জুন মাসে ওই শহরে ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টের প্রকোপ দেখা দেয় যাতে এখনও পর্যন্ত ৩,০০০ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সোমবার থেকে শহরে টহল দিতে শুরু করবে। লকডাউন বাস্তবায়নে তারা পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করবে।
তবে অনেকেই সেনা সদস্য মোতায়েনের দরকার ছিল কীনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বর্তমানে যে লকডাউন চলছে সেটা অন্তত ২৮শে অগাস্ট পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই লকডাউনের আওতায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
পাঁচ সপ্তাহের লকডাউন সত্ত্বেও দেশটির বৃহত্তম এই শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।