ডা. মহসীন আহমদ : বর্তমানে সারা বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। আশেপাশে কে কী করছে; তা দেখার দরকার নেই, নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে, এটাই এখন একমাত্র করণীয়।
ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন। অন্তত বছরখানেক এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অতি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্যরা কি ব্যবস্থা নিবেন; তা নিয়ে এই লেখা।
• ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পাতলা সুতির পুরাতন ফুল হাতার জামা /পাঞ্জাবি ও একটু লুজ ফিটিং প্যান্ট / পাজামা পরে বের হবেন। জিন্স অথবা টাইট ফিটিং ড্রেস না পরাই ভালো। জুতা ও মোজা অবশ্যই পরবেন। অবশ্যই সার্বক্ষণিক মাস্ক পরে থাকতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী ছাড়া বাকিরা পিপিই পরবেন না।
গ্লাভস ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। সারাদিন একটা গ্লাভস পরে থাকলে লাভের চেয়ে ক্ষতির শঙ্কাই বেশি। বরং সঙ্গে হেক্সিসল অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন।
• পাতলা, লুজ ফিটিং পুরাতন সুতির কাপড় পরার কারণ হল, এটি আরামদায়ক এবং লম্বা সময় পরিধান করে থাকলেও ঘামের সমস্যা কম হবে। বাসায় ফিরে গোসল করেই পরিধেয় কাপড় ধুয়ে ফেলা সহজ হবে এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।
নিজের কাজ নিজেই করার অভ্যাস করতে হবে। বাসার বাইরের গৃহকর্মীদের করোনাকালে বাসায় ঢুকতে দেবেন না। এটা আপনার ও পরিবারের জন্য আত্মহত্যার শামিল।
• তিন স্তর বিশিষ্ট সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা উচিত সবার। কাপড়ের মাস্ক কোনো ভাইরাস সুরক্ষা দিতে পারে না। যেখান সার্জিক্যাল মাস্ক ৮০ ভাগ সুরক্ষা দেয়।
সেক্ষেত্রে আমরা ৫টি মাস্ক বাসায় রাখতে পারি। যত্ন করে ব্যবহার আর সংরক্ষণ করলে অনেকদিন পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব। প্রথম মাস্কটি ব্যবহারের পরে না ধুয়ে একটি পলিথিনে ভরে বারান্দায় ঝুলিয়ে রেখে দিবেন। এর পর দ্বিতীয়টি ব্যবহার করবেন, এভাবে প্রথমটি আবার ষষ্ঠ দিনে ব্যবহার করবেন।
কিন্তু কোনো কারণে ছিঁড়ে গেলে একটি বদ্ধ ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। অনেকে কথা বলার সময় মাস্ক নামিয়ে কথা বলেন। সেটা কোনোভাবেই করা যাবে না।
মাস্কের সামনের অংশে হাত দেয়া যাবে না, এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাদের জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে নিয়মিত বের হতে হয়, তারা বাসায়ও মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো হয়। এতে বাসার অন্য সদস্যরা নিরাপদ থাকবে।
• বাংলাদেশে সার্জিক্যাল মাস্ক অপ্রতুল বিধায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এর সরবরাহ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্যরা ঘরে তৈরি সুতির সাধারণ মাস্ক পরবেন।
মাস্ক একটু বড় আকারের বানাবেন যাতে চোখের নীচ থেকে থুতনি পর্যম্ত আবৃত থাকে। মাস্কের সামনের অংশে কোনভাবেই স্পর্শ করা যাবে না। মাস্ক প্রতিদিন বাসায় ফিরে ধুয়ে ফেলবেন।
যাদের জরুরি প্রয়োজনে নিয়মিত বের হতে হয়, তারা বাসায়ও মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো হয়। এতে বাসার অন্য সদস্যরা নিরাপদ থাকবে।
• চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া আর কারো পিপিই পড়ার প্রয়োজন নেই। পিপিই পড়ে শুধুমাত্র একটা রুমে অথবা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে থাকতে হবে। পিপিই পড়ে খাওয়া দাওয়া এমন কি টয়লেট করা যাবে না। চিকিৎসকরাও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে পিপিই পড়ে বের হবেন না।
• পিপিই নির্ধারিত এলাকায় খুলে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এলাকা ত্যাগ করবেন। রাস্তা ঘাটে পিপিই পরা অপরাধ, এতে আপনি প্রকারান্তরে অন্যের ক্ষতি করছেন।
পুরো পিপিই একটা ইনফেক্টেড বোমার মতো। এটা পরে হয়তো আপনি সুরক্ষিত, কিন্তু আপনার আসেপাশের সবাই অরক্ষিত, এটা মনে রাখবেন। বাসায় এটা পরে এলে অন্যরা সহজেই ইনফেক্টেড হয়ে যাবে। এটা খোলার সময়ে আপনি নিজেও ইনফেক্টেড হতে পারেন।
পিপিই ব্যবহারের প্রশিক্ষণের অভাবই চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং সুরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের এক সঙ্গে ইনফেক্টেড হওয়ার প্রধান কারণ।
• গ্লাভস ব্যবহার করে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ প্রতি ঘন্টায় ২৫ বার মুখের বিভিন্ন অংশে হাত দেয়। গ্লাভস পরে আপনি মুখের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিলে ইনফেক্টেড হয়ে যাবেন।
সেক্ষেত্রে বার বার গ্লাভস পরিবর্তন করতে হবে। গ্লাভস না পরলে আপনি বার বার হাত পরিষ্কার করবেন, সেটাই শ্রেয়। দরজা, লিফটের বাটন, বৈদ্যুতিক সুইচ ধরার সময় হাতের কনুই ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে।
• হাত ধোয়া কিংবা পরিষ্কারের বিকল্প নেই। সারাদিন বার বার সাবান দিয়ে কমপক্ষে ৪০ সেকেন্ড হাত ধুইতে হবে।
পানি ও সাবান না থাকলে হেক্সিসল অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিকসহ যারা রাস্তাঘাটে পাবলিক সার্ভিসের কাজ করেন, তাদেরকে পিপিই কিংবা গ্লাভস না দিয়ে পর্যাপ্ত মাস্ক, হেক্সিসল / হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা প্রয়োজন।
তারা প্রতি ঘণ্টায় নিয়মিত চারবার হাত পরিষ্কার করবে। ইনফেক্টেড জায়গা স্পর্শের সন্দেহ হলেই সাথে সাথে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
• সবাইকে জুতা ও মোজা পরার অভ্যাস করতে হবে। ঘরে ঢুকার আগে জুতার তলা অবশ্যই ব্লিচিং পাউডারের পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মোজা প্রতিদিন ধুইতে হবে।
• বাইরে বের হলে ৬ ফুট শরীরিক দূরত্ব বজায় রাখা উত্তম, কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। তাই গণপরিবহন পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। বাংলাদেশে শহরগুলো খুব ছোট, খুব সহজেই হেঁটে চলাচল করা সম্ভব। তাই, হাঁটার অভ্যাস করুন, শরীর আর মন দুটোই ভালো থাকবে। প্রয়োজনে সাইকেল বা নিজস্ব বাহন ব্যবহার করবেন।
আপনার প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভার থেকেও আপনি ইনফেক্টেড হতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিজে ড্রাইভ করুন অথবা ড্রাইভারের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। রাস্তাঘাটে, অফিসে, বাজারে মানুষ আপনার ঘাড়ে এসে পড়তে পারে, আপনি নিজ দায়িত্বে ৩-৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন।
• বাজার খোলা জায়গায় করা ভালো। কারণ, বদ্ধ সুপারশপে এসি থেকে ইনফেক্টেড হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলবেন। সেলুনে চুল কাটাবেন না, বাসায় নিজে অথবা অন্যের সাহায্যে চুল কাটাবেন।
সূত্র : যুগান্তর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।