আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পবিত্র রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে বার্তা দিয়েছেন কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম মোহম্মদ শফিক কোয়াসমি।
তিনি বলেছেন, ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক- এক মধুর সম্পর্ক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাই আমি চাইবো, এ সম্পর্ক সব সময় অটুট থাকুক। দুই দেশের সম্পর্কে শান্তি বজায় থাকুক।
ইবাদতের মৌসুম এই রমজান মাস। মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে এই মাসের প্রভাব ব্যাপক। তাই বাংলাদেশের প্রত্যেক মুসলমানের মাসটিকে সার্থকভাবে ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে অতিবাহিত করা একান্ত ঈমানী কর্তব্য। আমি চাইবো, সব শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসে বাংলাদেশে পবিত্রতা বজায় থাকুক।
তিনি আরও বলেন, রমজান একটি অফুরন্ত নেয়ামতের মাস। আল্লাহ নিজেই সিয়াম সাধনার প্রতিদান দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষের জন্য প্রতিটি ভালো কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে। কিন্তু সিয়াম শুধু আমার জন্য। অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।
রমজান মাসে সিয়াম পালন মুসল্লিদের জীবনে বয়ে আনে অপরিসীম কল্যাণ। রমজান ও সিয়ামের উদ্দেশ্যাবলী অর্জন করতে পারলে জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর ও পবিত্র। রমজান ও সিয়াম থেকে যথার্থ কল্যাণ পেতে হলে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে সিয়ামের যথার্থ অনুশীলন করতে হবে। রমজানের পবিত্রতা-বিরোধী সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। মানুষের প্রতি, বিশেষ করে সমাজের অসচ্ছল অভাবী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দয়াদ্র হতে হবে।
সমাজে দ্বীনি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সর্বত্র পাপ ও দুষ্কর্মের বদলে পূর্ণ ও আল্লাহভীতির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শোষণ ও নির্যাতনমূলক সব কাজকর্ম যেমন- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভেজাল দেওয়া, ধোঁকা-প্রতারণা, মুনাফাখোরী ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। রমজানে ফিতরা ও যাকাত দেওয়া ছাড়া বিভিন্ন প্রকার অপচয় বন্ধ করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সামগ্রী অভাবি শ্রেণিকে দিতে হবে।
আল্লাহর নবী (সা.) এই মাসটিতে সবচেয়ে বেশি দানশীল হতেন। উদারতা দেখানোর সবচেয়ে উপযুক্ত মাস রমজান।
মোহম্মদ শফিক কোয়াসমি আরও বলেন, রমজানের ভালো কাজের প্রতিদান বছরের অন্য সময়ের তুলনায় দশগুণ। এই বরকতময় মাসে সব ধরনের সৎ কাজ ও বদান্যতার দশগুণ প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন আল্লাহতায়ালা।
নাখোদা মসজিদের ইমাম বলেন, রমজান মুমিনের জীবনে অনন্য প্রাপ্তি। সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের বহুমুখী কল্যাণের সন্ধান দেন। মানুষের গতিপথ বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে অভিশপ্ত শয়তান সবসময় পাঁয়তারা করতে থাকে। কিন্তু রময়ানের চাঁদ উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শয়তানকে বন্দী করে দেওয়া হয়। শয়তানের কু-মন্ত্রণা দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। রমজানে মানবতার প্রত্যাশিত ঠিকানা জান্নাতের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। আর অভিশপ্ত জাহান্নামের দুয়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে সব মুসল্লি জীবনের স্রোতধারা সঠিক পথে প্রবাহিত করতে চান, তাদের জন্য রমজান আশীর্বাদস্বরূপ।
রমজানের বরকর নিয়ে এই ইমাম বলেন, পবিত্র রমজানের প্রতিটি মুহূর্তের মধ্যে এত বেশি বরকত লুকিয়ে আছে যে, এই মাসে করা নফল কাজগুলো ফরজ কাজের মর্যাদা পায়, আর ফরজ কাজগুলো সত্তর গুণ অধিক মর্যাদা পায়। রমজান মাস এলে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। সৎ পথে চলার পথ সহজ হয়ে যায়। অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে রোজা ঢালস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করেন, তার অতীত ও বর্তমানের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে বলে, হাদিসে উল্লেখ আছে। যারা অনাচারের মাধ্যমে জীবনটাকে অতিষ্ট করে তুলেছেন, রমজান তাদের ক্ষান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
তাই সব মুসলমানের মধ্যে সংযম, দানশীলতা ও সিয়ামের ভাবধারার প্রসার ঘটানোই রমজানের মূল শিক্ষা এবং সবাইকে সিয়াম সাধনার যথার্থ অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর জন্য সচেষ্ট হতে হবে। এসব কাজ করতে পারলেই রমজানের সিয়াম আমাদের দান করবে অফুরন্ত নেয়ামত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।