জুমবাংলা ডেস্ক: ‘আঙ্কেল আঙ্কেল এই দিকে আসেন.. এই দিকে আসেন; এই ছয় লক্ষ টাকার গাছের কাছে আসেন। এই গাছের সাথে একটা সেলফি তুলে যান। আঙ্কেল, আপনারা সাংবাদিক, দেখেন- ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ছোট্ট একটি বনসাই গাছের দাম তিনি দেখিয়েছেন ছয় লাখ টাকা! গোবর সার কেনার নামে তিনি খরচ দেখিয়েছেন দুই কোটি টাকা, মাস্টাররোলে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে বড় ধরনের দুর্নীতি।কাজ না করেও ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য’ খরচ করেছেন প্রায় ১০ কোটি টাকা।’
উপরের কথাগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এভাবেই আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী কথাগুলো বলছিলেন।
উপাচার্য নাসিরের অপসারণ দাবিতে টানা ৮ দিনের মতো আন্দোলন চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই সঙ্গে আমরণ অনশনে বসেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ-সমাবেশও করছেন তারা। দফায় দফায় মিছিল, ঝাড়ু হাতেও দাবি আদায়ে নেমেছেন তারা।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত পেটোয়া বাহিনীর হামলার পর আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে উঠে। সেদিন হল ত্যাগের নির্দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আদেশ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করার পর থেকে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেখে নিবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। নানাভাবে হয়রানীর শিকার হতে পারি। আমি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি।’
এসব ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন। হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেভাবে মেরে আহত করা হয়েছে; আমরা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এ জন্য আমি পদত্যাগ করেছি। এ জন্য যত হুমকি আসুক তাতে ভয় পাই না। আমি মৃত্যুর ভয় পাইনা।’
এদিকে এক অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত তদন্ত রিপোর্ট এবং সুপারিশ রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন কতটা এগিয়েছে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘তদন্তের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চেয়েছি তাদের কাছ থেকে তথ্য পেলে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে যে অবস্থা তাতে মনে হয় নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে পারব না আরও সময় লাগতে পারে।’
শিক্ষার্থীরা জানান, হামলা-মামলা যাই হোক দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারী উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীদের উপর নগ্ন হামালার প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় গোবরা ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান চৌধূরী টুটুল, জেলা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাসির উদ্দিন ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যোগদান করার পর থেকে নানা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লুটপাট শুরু করেন। এখানে যতটুকু উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয়েছে সবই তিনি নিজের লোক দিয়ে করিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল তৈরির জন্য উপাচার্য ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। এখন পর্যন্ত সে ম্যুরালের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে আড়াই কোটি টাকা।
ওই সূত্র আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম তৈরিতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অথচ কোনো কাজ করা না হলেও এর ব্যায় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। বরং খরচ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও লুটপাট করেছেন উপাচার্য।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দ্বিতীয় মেয়াদে পদাসীন হয়ে উপাচার্য নাসির আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি গাছ লাগানোর নামে কোটি কোটি টাকা গায়েব করে দিয়েছেন। গাছ লাগনোর জন্য গোবর কেনার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিষয়গুলো নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দার নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘অডিটোরিয়াম, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি ও শহীদ মিনার নির্মাণে এখন পর্যন্ত কোনো টাকা খরচ হয়নি। এসব প্রকল্প দৃশ্যমান না হলেও কাজ শুরুর আগে প্ল্যান ডিজাইন, সয়েল টেস্টসহ বিভিন্ন খাতে অনেক খরচ করতে হয় যা আমরা করেছি। এসব যেহেতু প্ল্যানিং বিভাগের কাজ, তাই কতটুকু কাজ হয়েছে, কত টাকা খরচ হয়েছে আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে (প্রকল্প পরিচালক) স্বাক্ষরিত বাৎসরিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উল্লেখিত খাতগুলোতে খরচ দেখানো হয়েছে। এ দূর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নামনা প্রকাশ করার শর্তে বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো কাজ না করা হলেও আমরা টাকা খরচ দেখিয়েছি। কাজ করার সময় আমরা টাকা খরচের বিষয়টি সমন্বয় করে নেবো।’
এ বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রোকৌশলী মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘অডিটরিয়াম, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য এখন পর্যন্ত টেন্ডার হয়নি। প্রাক্কলন ও ডিজাইনের সংশোধন করে পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত কপি আসলে আমরা টেন্ডার আহ্বান করবো।’ সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।