বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বেশিদিন বাকি নেই ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২-এর, যা কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কাতার বরাবরই পৃথিবীর বুকে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। আর এবার ফুটবল বিশ্বকাপে সম্পূর্ণ নতুন রূপে সেজেছে কাতার। ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা মনে রাখার মতো তৈরির লক্ষ্যে অনেক অসাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে ফুটবলের এই মহা আসরে। এই পোস্টে কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন কিছু অসাধারণ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
শীতলীকরণ প্রযুক্তি
কাতার একটি উষ্ণ দেশ, এই কথা সবার জানা। তাই খেলার মাঠ ও দর্শক গ্যালারির তাপমাত্রা রাখা হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সবার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক। ব্যবহৃত এই শীতলীকরণ প্রযুক্তি সাধারণ শীতলীকরণ প্রযুক্তির চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি টেকসই ও এনার্জি-এফিসিয়েন্ট। এই ইন্টেলিজেন্ট কুলিং প্রযুক্তির অসাধারণ একটি ফিচার হলো স্টেডিয়ামে থাকা মানুষের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে তাপমাত্রা সেট করা যাবে।
সুতরাং বাইরের তাপমাত্রা যত কম বা বেশি হোক না কেনো, স্টেডিয়ামে থাকা খেলোয়াড় ও ফ্যানরা অন্তত তাপমাত্রার কারণে কোনো ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বেন না। এছাড়াও স্টেডিয়ামের বাতাস (এয়ার) ক্লিন ও পিউরিফাই করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
কার্বন-নিউট্রল ওয়ার্ল্ড কাপ
কাতার অঙ্গীকার করেছে যে তারা প্রথম কার্বন-নিউট্রল ওয়ার্ল্ড কাপ হোস্ট করতে যাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই ইভেন্টের কার্বন ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেলতে গ্রিন প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো দুটি স্টেডিয়ামের মধ্যকার দূরত্ব এক ঘণ্টার কম ড্রাইভিং দূরত্বের মধ্যে রাখা হয়েছে, এতে ফ্যানরা একই দিনে দুটি বা তার বেশি ম্যাচ যোগ দিতে পারবে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় অনেক এনার্জি সাশ্রয় হবে, যা পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সম্পূর্ণ ডিসমাউন্টেবল স্টেডিয়াম
৯৭৪Ñ এটি প্রথমত কাতারের ইন্টারন্যাশনাল ডায়ালিং কোড (+ ৯৭৪), আবার রিসাইকেলড শিপিং কন্টেইনারের সংখ্যাও এটি। আর এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে স্টেডিয়াম ৯৭৪ তৈরি হয়েছে, এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম স্টেডিয়াম যা তৈরিই করা হয়েছে ডিকনস্ট্রাক্ট করার লক্ষ্যে।
এই অস্থায়ী ৪০ হাজার সিটের ভেন্যু ডিসমেন্টেল করা হবে ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলোতে এসিস্টেন্স হিসেবে প্রদান করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অথবা কিছু লিগাসি প্রজেক্টের সিরিজে এটি পুনরায় তৈরির কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে এই স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্মার্ট ওয়াই-ফাই ও চার্জিং স্টেশন
EIPalm শেডিং ওয়াইন্ড টার্বাইন সোলার প্যানেল ও বাইফেসিয়াল ফটোভোল্টেক প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যার ছায়ায় বসে ফোন ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে বা ওয়্যারলেসলি চার্জ করা যাবে। এছাড়া EIPalm-কে ওয়াইফাই হটস্পট হিসেবেও ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। অ্যাডভার্টাইজিং, মিস্ট কুলিং, সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা, লাইটিং ও স্পিকার EIPalm-এর অংশ।
রিয়েল-টাইম ন্যাভিগেশন
দোহার আশপাশে থাকা সেন্সরের সাহায্যে ট্রাফিক, ট্যাক্সি, পার্কিং, নতুন মেট্রো সিস্টেম এবং ভেন্যু এনট্রেন্স ও এক্সিটের তথ্য পাওয়া যাবে একটি কাস্টম-মেড স্মার্টফোন অ্যাপে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে স্টেডিয়াম, শপিং সেন্টার ও এন্টারটেইনমেন্ট ভেন্যুর ইনডোর স্পেসে সহজে ন্যাভিগেট করা যাবে। দোহার আশপাশে কানেক্টেড সেন্সর বসানো হয়েছে যার দ্বারা কাতারের আশপাশে সহজে চলাচল করা যাবে।
মেট্রো, ট্যাক্সি, পার্কিং, এনট্রেন্স ও এক্সিট পয়েন্ট ইত্যাদি তথ্য প্রদানে সাহায্য করবে এসব সেন্সর, যার ফলে রিয়েল-টাইম ইনফরমেশন ব্যবহার করে সেরা রাউট খুঁজে বের করা যাবে। আর এর সবই উল্লিখিত স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে সম্ভব হবে।
এলইডি লাইটিং
স্টেডিয়ামে এলইডি লাইটিং নতুন কিছু নয়, কিন্তু কাতার এই সামান্য বিষয়টিকেও অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে, যা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২-এ দেখা যাবে। কালার-চেঞ্জিং লাইটের পাশাপাশি অনেক ধরনের লাইট ইফেক্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের জন্য, যা Al Bayt ও Luasil স্টেডিয়ামে ওপেনিং ও ক্লোজিং অনুষ্ঠানে ব্যবহার হবে। এসব লাইট এনার্জি-এফিসিয়েন্ট, নন-টক্সিক ও সাধারণ লাইটের চেয়ে ৬ গুণ অধিক সময় ধরে কাজ করে।
ওয়েরেবল ইলেকট্রনিকস
ইতিমধ্যে কাজ চলছে এমন কিছু প্রযুক্তির মধ্যে একটি হলো ওয়েরেবল ইলেকট্রনিকস। কেমন হয় যদি গায়ে থাকা শার্টে থাকা সেন্সরের মাধ্যমে হার্টবিট বা হাইড্রেশন মাপা যেত? এই ধরনের প্রযুক্তির পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিকস নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে, যা কাতার বিশ্বকাপে ফ্যানরা ব্যবহারের সুযোগ পেতে পারেন। বিশেষ মুহূর্তে এই ধরনের পরিধানযোগ্য স্মার্ট ইলেকট্রনিকস বেশ কাজে আসতে পারে।
ফুড টেকনোলজি
নিজেদের সিটে বসে স্মার্টফোন অ্যাপ, Asapp-এর মাধ্যমে ফুড অর্ডার করতে পারবেন দর্শকরা। থাকছে না কোনো ধরনের অর্ডার লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা কিংবা খেলার গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্ট মিস করার সম্ভাবনা। অ্যাপের মাধ্যমে ফুড অর্ডার করার পর এক্সপ্রেস কিউর মাধ্যমে খাবার সিটে পৌঁছে যাবে।
রোবট রেফারি
কাতার বিশ্বকাপে আরো নিখুঁতভাবে অফসাইড ধরতে ইতিমধ্যে রোবট দ্বারা পরীক্ষা চালিয়েছে ফিফা। সবকিছু ঠিক থাকলে কাতার বিশ্বকাপে খেলার মাঠে দেখা মিলবে এসব রোবট লাইন্সম্যানের।
কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার হবে এমন সব প্রযুক্তির মধ্যে কোনটি আপনার সবচেয়ে ভালো লেগেছে? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।