জুমবাংলা ডেস্ক: গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাটি বৈচিত্র্যময়। কোথাও লালমাটি, আবার কোনো এলাকার মাটি বেলে, অন্য এলাকার মাটি দোআঁশ। তবে লালমাটির এলাকাই বেশি। দুই দশক আগেও এসব জমিতে ধান চাষ হতো। বাকি সময় ওই জমি পতিত পড়ে থাকত। কয়েক বছর ধরে লালমাটির টেকটিলায় দেশি জাতের পাশাপাশি জলডুগি ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারসের চাষ শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় পাঁচ-ছয় বছরের ব্যবধানে আনারস চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে।
কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এক থেকে ১০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে আনারসের চাষ করেছেন। তাঁদের উৎপাদিত আনারস পাইকাররা জমিতে ও সড়কের পাশের দোকানে এসেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে এসব আনারস পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে পৌঁছে দিচ্ছেন ট্রাকে বা বিভিন্ন পরিবহনের সাহায্যে।
ঢাকা-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নের লোহাদী গ্ৰাম। এই গ্রামের সড়কের পাশে বেশ কিছু আনারস বিক্রির দোকান রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে আনারস কিনে নিয়ে যান। ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত দামে প্রতিটি আনারস কেনাবেচা হয় দোকানগুলোতে।
লোহাদী গ্রামের আনারস চাষি মো. আরমান বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে আনারসের চাষ করেছি। ক্যালেন্ডার ও জলডুগি দুই জাতের আনারসের চাষ করেছি। এ বছর আনারসের দাম অনেক ভালো। আমার এই এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ আনারস হয়েছে তা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। এ বছর আরও কিছু জমিতে নতুন করে আনারসের চারা রোপণ করব।
একই এলাকার অপর আনারস চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, চার বছর আগে তিন টাকা করে আনারসের চারা কিনি। প্রতিটি চারা লাগাতে খরচ হয় দুই টাকা করে। লাগানোর এক বছর পরই আনারস ধরতে শুরু করে। আমি তিন বছর ধরে ছয় বিঘা জমির আনারস বিক্রি করছি। এ বছর আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। তিন বিঘা জমির আনারস প্রায় ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।
তিনি আরও বলেন, একসময় আমার এই জমি পতিত পড়ে থাকত। কোনো ফসল হতো না। এখন আনারস চাষ করে এই জমি থেকে প্রতিবছর ভালো টাকা আয় করতে পারছি। আনারস চাষ করতে খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। কম খরচে আনারস চাষ একটি লাভজনক ফসল।
কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভুবনের চালা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান এরশাদ বলেন, এই সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে আনারস বিক্রি করতে দেখে লোভ সমলাতে পারলাম না। বাড়ির জন্য আটটি আনারস কিনেছি।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকার আনারস অনেক সুস্বাদু। আমি প্রায়ই এই এলাকা থেকে বাড়ির জন্য আনারস কিনে নিয়ে যাই।
একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় কর্মী মাসুদ রানা বলেন, আমি সপ্তাহে দুই দিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। সড়কের পাশে আনারস বিক্রেতাদের কাছ থেকে আনারস কিনে নিয়ে যাই বাসার জন্য। এখানকার আনারসগুলো অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। আনারসগুলো টাটকা ও বিষমুক্ত। প্রতিটি আনারস ২০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন চাষিরা।
কাপাসিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মিলি বলেন, কাপাসিয়ায় আগে শুধু দেশি জাতের আনারস পাওয়া যেত। এখন ক্যালেন্ডার ও জলডুগি আনারসের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে এলাকার চাষিদের মধ্যে জলডুগি ও ক্যালেন্ডার আনারস চাষের পরিমাণও বেশি।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রহমান বলেন, আনারসের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। আনারসে থাকে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’। এছাড়া এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ও ফসফরাস, যা মানব দেহের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, হাড় গঠনে সহায়তা করে, দাঁত ও মাঢ়ির সুরক্ষা দেয়, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী, হজম শক্তি বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় আনারস।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বশাক বলেন, কাপাসিয়ায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। উৎপাদিত আনারসের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন। পুরো কাপাসিয়ায় ৩ হাজার ২৫০ জন কৃষক নিয়মিত আনারসের চাষ করছেন। বিগত পাঁচ-ছয় বছরে আনারস চাষির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।