জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কপ সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন বিশ্বনেতারা। কার্বন নিঃসরণ কমাতে পথে নেমেছেন পরিবেশবাদীরা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, জীবজন্তু কিংবা উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা প্রয়োজন। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু অর্জন সম্ভব নয়। প্রকৃতিকে রক্ষা করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টার। আর তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার এই আন্দোলনে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আপনি কী করতে পারেন সেই বিষয়গুলো দেখে নেওয়া যাক।
১। গণপরিবহন ব্যবহার করুন
গণপরিবহন ব্যবহারের অভ্যাস করুন। গাড়ি ছাড়া চলতে পারাটা পরিবহন সৃষ্ট কার্বন নিঃসরণ কমাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে, গাড়ি ছাড়া চলাফেরা করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেসব জায়গায় গণপরিবহন ব্যবস্থা ভালো নয় সেখানে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতাও বেশি।
তারপরেও দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো পরিবর্তনের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব। হাঁটাহাঁটির চর্চা কিংবা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।
বৈদ্যুতিক গাড়ির কথা আজকাল শোনা গেলেও এখনও এর দাম অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। এছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদনে কী ধরনের জ্বালনি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাও দেখার বিষয়। বায়ু কিংবা সৌরশক্তির মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বৈদ্যুতিক গাড়িকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তুলবে।
বিমান উড্ডয়নেও প্রচুর কার্বন নিঃসৃত হয়। যারা দেশের বাইরে কিংবা দূরে কোথাও ভ্রমণে যান তাদের বিমানের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতি কিলোমিটার ভ্রমণে কার্বন নিঃসরণের হার সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে, ট্রেনে যদি চলাচল করেন সেক্ষেত্রে নিঃসরণ কমবে পাঁচগুণ।
২। লাল মাংস খাওয়া কমিয়ে দিন
বিশ্বের ১৪ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাসের কারণ গবাদি পশু। আর তাই গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে খাদ্যতালিকা থেকে কমাতে হবে দুধ ও মাংস। বিশেষ করে গরুর মাংসের মতো রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়া কমানো গেলে কার্বন নিঃসরণ অনেকাংশেই কমবে।
নিরামিষাসীরা বিষয়টি শুনে খুশি হবেন। কিন্তু মাংস বা অন্যান্য খাবার কতটুকু কার্বন নিঃসরণ সৃষ্টি করে তা নির্ভর করছে তার উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর।
আর তাই মাংস পুরোপুরি ছাড়তে না পারলেও পরিমাণে কমানো যেতে পারে। ফলে শুধু টাকাই বাঁচবে না, খাদ্য অপচয়ও কমবে। ওয়েস্ট অ্যান্ড রিসোর্স অ্যাকশন প্রোগ্রামের মতে, বিশ্বের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ খাদ্যই অপচয় হয়। খাদ্য অপচয় কমানোর মাধ্যমে গ্রিন হাউজ নিঃসরণ কমানোও সম্ভব হবে।
৩। কেনার আগে চিন্তা করুন
এক জোড়া জিন্স বানাতে তিন হাজার ৭৮১ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তুলা উৎপাদন, প্রস্তুত, পরিবহন ও পরিষ্কার করতে কী পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে, তার সব মিলিয়ে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
আর তাই ঘনঘন নতুন পোশাক না কিনে, পুরোনো পোশাক ঠিকঠাক করিয়ে পরার অভ্যাস করা উচিত। পুরোনো কাপড় ফেলে না দিয়ে মানুষকে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, কাপড় কেনার ক্ষেত্রেও টেকসই কি না, কতদিন পরা যাবে এসব বিবেচনা করে তবেই কেনা উচিত।
বহু প্রতিষ্ঠানই আজকাল পোশাক ভাড়া দিয়ে থাকে। অনেকেই আছে যারা কোনো অনুষ্ঠান বা বিশেষ দিনের জন্য পোশাক কিনেন, যেগুলো দুই-একবারের বেশি পরা হয় না। সেক্ষেত্রে নতুন পোশাক কেনার চেয়ে, ভাড়া করাই শ্রেয়। এছাড়া, ব্যবহৃত বা সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকও কেনা যেতে পারে।
৪। শক্তি অপচয় কমান
গ্যাস বা তেলের পরিবর্তে গৃহস্থালি কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে পারে কার্বন নিঃসরণ। ঘর ঠাণ্ডা করতে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি রাখতে পারেন। ঘর গরম করার ক্ষেত্রেও হিটারের তাপমাত্রা কমিয়ে ব্যবহার করুন।
গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিকস বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স সঠিকভাবে বাছাই করার মাধ্যমেও কার্বন নিঃসরণ কমানো যেতে পারে। কম বিদ্যুৎ খরচ বা জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে চালানো সম্ভব এমন জিনিস কেনা উচিত।
প্যারিস চুক্তির জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে ৬০০ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি
জ্বালানি-সাশ্রয়ী অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি অপচয় সম্ভব হবে। আর তাই এরপর ওয়াশিং মেশিন বা অন্য কোনো অ্যাপ্লায়েন্স কেনা বা পরিবর্তন করার সময় এসব বিষয় মাথায় রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।