নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মৌচাক রেল স্টেশন থেকে মাটিকাটা রেলগেট ও সরকার বাড়ি পর্যন্ত অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই অভিযানে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়, যা রেলওয়ের সুরক্ষা ও ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে অত্যন্ত জরুরি ছিল।
জয়দেবপুর জংশনের সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তার তত্ত্বাবধানে রেললাইনের দুই পাশে গড়ে উঠা অসংখ্য ছোট-বড় দোকান এবং আবাসিক ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। উচ্ছেদ অভিযানের খবর পেয়ে অবৈধ দখলদারদের অনেকেই তাদের স্থাপনা খুলে নিতে বাধ্য হন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই অভিযান সম্পর্কে জুয়েল মিয়া বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রেললাইন, যা ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রতিদিন এই রুট দিয়ে আনুমানিক আশিটিরও বেশি ট্রেন যাতায়াত করে। এছাড়া এ লাইন দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটের ট্রেন যাতায়াত করে। এই রেললাইনটি সুরক্ষায় আমরা বিভিন্ন সময় দখলদারদের নোটিশ দিয়ে আসছি। কিন্তু তাদের প্রভাবের কারণে তারা আমাদের নোটিশে কর্ণপাত করেনি। কয়েকদিন আগেও আমরা মৌখিকভাবে তাদের অবগত করি, যেন তারা স্বেচ্ছায় তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়। কিন্তু তারা না সরানোর ফলে আজ আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে পুনরায় দখল চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উচ্ছেদ কার্যক্রম দেখতে এসে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস, জাহাঙ্গীর, এবং রেজা তাদের মতামত প্রকাশ করেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই স্থাপনাগুলি অবৈধভাবে দখলদাররা ব্যবহার করে আসছে এবং ভাড়া দিয়ে লাভবান হয়েছে। এসব স্থাপনার কারণে রেল চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং বিভিন্ন সময় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও কিছু দখলদার অভিযানের ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন। দখলদারদের মতে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব স্থানে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন, তাই হঠাৎ করে স্থাপনা হারানো তাদের জন্য কষ্টের বিষয়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রেলপথের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান চালিয়ে যাবেন।
সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া বলেন, যারা পুনরায় দখলের চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও তিনি জানান, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রেললাইনেও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ভবিষ্যতে রেলপথ সুরক্ষায় নিয়মিত অভিযান চালানো হবে এবং জনগণের স্বার্থে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে রেল লাইনের নিরাপত্তা রক্ষা করা গেলেও এটি স্থানীয়দের জন্য অনেক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা জীবিকার তাগিদে এসব স্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন, তাদের জন্য নতুন করে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা এক চ্যালেঞ্জ। তবে সরকারি বিধিবদ্ধ সংস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রাধান্য পেয়েছে এই অভিযানে।
দেশের রেল চলাচলের উন্নয়নের স্বার্থে এবং ট্রেন যাত্রার নিরাপত্তা রক্ষায় এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাদের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।