নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর এখন চরম বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবা মো. মোশারফ শেখ। মামলার বাদী হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পক্ষ তাকে মামলা প্রত্যাহার করতে চাপ দিচ্ছে। একইসাথে, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা ঘটনাবলী মিথ্যা বলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকিও।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে এ বিষয়ে কথা হয় মামলার বাদী মো. মোশারফ শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, “আমার ছেলে মো. আবু বক্কর সিদ্দিক একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়ে। হুজুর ও দুই ছাত্র মিলে আমার ছেলেকে নির্যাতন করে এবং বস্তায় পুরে দ্বিতীয় তলার একটি রুমে ফেলে রাখে। আমি খবর পেয়ে মাদরাসায় গিয়ে ঘটনাটি নিজ চোখে দেখি। ছেলেকে আহত অবস্থায় পাই। পরে স্থানীয়রা জড়ো হলে পুলিশ আসে এবং হুজুর পুলিশের সামনেই মারধরের কথা স্বীকার করে।”
মোশারফ শেখ অভিযোগ করে বলেন, “এখন আমাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যদি আমি হুজুরকে জেল থেকে বের করে না দেই, তাহলে উল্টো আমার নামে মামলা দেয়া হবে। শুনেছি তারা ৩৬ জনের একটি তালিকা করছে, যাদের নামে মামলা দিয়ে সব খরচ আমার ঘাড়ে চাপানো হবে। এমনকি তারা ভুয়া ভিডিও বানিয়ে প্রচার করছে যে, আমি ও আমার স্ত্রী ছেলেকে মেরে মাদরাসায় পাঠিয়েছি। তারা ছবি বা সঠিক প্রমাণ দেখায় না, শুধু মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। চাচ্ছে আমি বলি যে হুজুর মারে নাই, বরং আমরাই ছেলেকে মেরেছি। তারা হুজুরকে মুক্ত করতে আমাকে বলির পাঁঠা বানাতে চায়।”
ভুক্তভোগী পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মোশারফ শেখ প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলউদ্দিন বলেন, “এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত মামলার বাদী কিংবা তার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে যদি মামলার বাদীকে কোনো পক্ষ মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে বা প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেই আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এদিকে, বুধবার (২ জুলাই) বিকালে কালীগঞ্জের ফুলদী নূরে মদিনা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে কালীগঞ্জ ইমাম পরিষদ, কওমি ওলামা পরিষদ এবং তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া। তাঁরা দ্রুত মামলাটি প্রত্যাহার ও শিক্ষক জাকারিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুরের কালীগঞ্জে ফুলদী নূরে মদিনা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মো. আবু বক্কর সিদ্দিক (৮) নামের এক ছাত্রকে বস্তায় ভরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ওই মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মো. জাকারিয়া শেখের (২৯) বিরুদ্ধে। ঘটনাটি শনিবার (২৮ জুন) সকালে ঘটনার পর ওই দিন রাতেই ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবা মো. মোশারফ শেখ বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় শিশু আইন ২০১৩-এর ৭০ ধারায় মামলা করেন। পরে সেই মামলায় পরদিন রবিবার (২৯ জুন) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।