নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোর অপরাধ কমিয়ে আনতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করে প্রতিটি সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তাদের চলাচলের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে হবে।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুমবাংলার ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাতে এ লাইভ একযোগে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও জুমবাংলাডটকমের ফেসবুক পেইজ থেকে সম্প্রচারিত হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘কিশোর অপরাধীচক্রঃ আমাদের দুর্ভাবনা’ ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ তৈরির খবর পাওয়া যাচ্ছে ঘন ঘন। কে কার এলাকায় আসতে পারবে, কে পারবে না, কার ক্ষমতা কত বেশি, কে কার সিনিয়র এবং কে জুনিয়র এ নিয়ে কিশোরদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও হাতাহাতি প্রায়ই হচ্ছে। কখনো কখনো হত্যাকাণ্ডও ঘটছে। কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পরার প্রবণতা অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিশেষ করে করোনার এই কালে তা অনেকাংশেই বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন পরিবর্তনের পথ ধরে কিশোরদের হাতে কখন যে লাঠি ধারালো ক্ষুর এবং সেই ধারাবাহিকতায় আগ্নেয়াস্ত্র উঠে এলো তা নিয়ে আমাদের চারপাশে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক এবং রাজশাহী বিশবিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও অপরাধ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ড মো. হাসিবুল আলম প্রধান।
এ বছর ১০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন আবু কালাম সিদ্দিক। যোগ দেয়ার পরপরই তিনি রাজশাহীর কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাস দমনে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি রাজশাহীতে আসার পর এখানে এক ভয়ানক অবস্থা দেখতে পাই। ছেলেরা দলবেঁধে মেয়েদের উত্যক্ত করে। কিছু ‘বাইক পার্টি’ আছে। তারা ১০/১২টি বাইক নিয়ে রাস্তা দিয়ে ভীষণ জোরে বাইক চালায়। তখন সাধারণ জনগণ বিশেষত বয়স্করা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে অনেক অভিভাবক আমার কাছে এসে অভিযোগ জানায়। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকমাত্রায় জড়িত হয়ে পড়ার কারণে কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে প্রায় ৪০০ কিশোরকে আটক করেছি। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা আছে।’
আবু কালাম বলেন, কিশোর অপরাধী চক্রগুলো শুধু আইন দিয়ে দমন করা যাবে না। বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে কিশোরদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ।
অধ্যাপক ড মোঃ হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, ‘ভঙ্গুর পরিবারগুলোর সন্তানেরা বেশি বিপথগামী গয়। একটি পরিবার হচ্ছে মূল্যবোধ শেখানোর সবচেয়ে বড় জায়গা। সেখানে বাবা-মায়ের মধ্যে অমিল বা দূরত্ব সন্তানের জন্য মোটেই কল্যাণ বয়ে আনেনা, বরং সন্তানকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এলাকাভেদে অনেক কিশোর অপরাধীচক্র আছে, যারা ভয়ঙ্কররকম অপরাধে জড়িত আছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই এ অবস্থার শিকার সবচেয়ে বেশি।
সারা দেশে সৃষ্ট সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে পারলে কিশোর অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন ড মোঃ হাসিবুল আলম প্রধান।
অনুষ্ঠানটি গবেষণা ও উপস্থাপনা করেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ পরিচালক ও নকশীকাঁথা ব্যান্ডের ভোকাল সাজেদ ফাতেমী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।