হাসান তনা, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): চার বন্ধু মিলে স্বাবলম্বী হওয়ার অদম্য চেষ্টা। তাই চার লাখ টাকা ব্যয়ে হাঁসের বাচ্চা এনে তৈরি করেন খামার। খামারে নিয়ে আসা হাঁসের বাচ্চাগুলো দিন দিন বড় হতে থাকে। প্যাঁক প্যাঁক শব্দে মুখরিত খামার। চোখে-মুখে সাফল্য আর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন মনে হয় এবার পুরণ হবে তাদের। অন্যের কাছে কাজ খুঁজতে হবে না চার বন্ধুর। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের জন্যও এবার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
কিন্তু চার বন্ধুর লালিত এ স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিল ক’দিনের টানা বর্ষণ। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের টানা বর্ষণে খামারে পানি উঠে মারা গেছে প্রায় ৭ শতাধিক হাঁস। ভেসে গেছে ২০ বস্তা হাঁসের খাবার। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন এই চার বন্ধু।
চার বন্ধুর একজন তাহেরুল ইসলাম। জয়পুরহাট সরকারি কলেজের বিবিএতে পড়েন। করোনায় কলেজ বন্ধ। তাহেরুলের মাথায় আসে করোনায় বাড়িতে বসে না থেকে কিছু একটা করার। মাঠে একদিন চার বন্ধু মিলে আড্ডা দেয়ার সময় পরামর্শ করে। যেই কথা, সেই কাজ। চার বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করে একটি হাঁসের খামার দেয়ার। অন্য বন্ধুরা হলেন-নুরুদ্দিনের পুত্র ফারুক হোসেন, কবির উদ্দিনের পুত্র বাবু মিয়া ও মৃত বেলায়েত মুন্সির পুত্র গোলসান। চার বন্ধুর সকলেই উপজেলার মাগুড়া এলাকার কুটিপাড়ার বাসিন্দা।
ব্যবসার মূলধন হিসেবে প্রত্যেক বন্ধু ১ লাখ টাকা করে দেয়। মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন নদীর পাশে তাহেরুল তার নিজের জমিতে ঘর তৈরি করে। অল্প ক’দিনের মধ্যে তৈরি হয় ৪৫ ফুট একটি ঘর ও ৪৫ ফুট বারান্দা বেস্টিত হাঁসের খামার। গত ১৮ জুলাই ২০২০ সালে নওগাঁ সরকারী হাঁসের খামার থেকে একদিনের খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ২ হাজার ১০০ বাচ্চা কিনে এনে খামারে তুলে। এক একটি বাঁচ্চার দাম পড়ে ২৫ টাকা ২৫ পয়সা।
প্রতিদিন পালাক্রমে বন্ধুরা হাঁসের খাবার, পরিচর্যা ও পাহারা দিত। গত শনিবার রাত ১০ টার দিকে টানা বর্ষণ শুরু হলে তারা রাত ১ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পাহারা দেয়। সবই ছিল ঠিকঠাক। সবাই চলে যায় যার বাড়িতে। প্রতিদিনের মত রবিবার সকালে হাঁসের খাবার দিতে গিয়ে দেখে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে খামারের ঘরটি তলিয়ে গেছে। দ্রুত ঘরে ঢুকে দেখে অনেক হাঁস মারা গেছে। বাকী হাঁসগুলো খামারের বিভিন্ন উচুঁস্থানে উঠে আছে। তারা গুণে দেখতে পায় ৭ শতাধিক মারা গেছে। চার বন্ধু চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করে। চার বন্ধু দ্রুত অন্য হাঁসগুলো বাচাঁনোর জন্য উঁচু ঘরে স্থানান্তর করে।
হাঁসের খামারের অন্যতম উদ্যোক্তা তাহেরুল ইসলাম জানান, গত শনিবার রাত ১ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পাহারা দিয়েছি। তখন কোনও পানি ছিল না। ওই রাতের টানা বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে খামার তলিয়ে যায়। অনেক হাঁস উঁচু জায়গায় অবস্থান নিলেও যেসব হাঁস নিচে ছিল বা নিরাপদ স্থান করে নিতে পারেনি, সে সকল হাঁস পানির প্রবল স্রোতে বা ঠান্ডায় মারা যায়। এছাড়া ২০ বস্তা খাবারও ভেসে গেছে। নিজের শিশুর মতো করে হাঁসগুলো আমরা পরিচর্যা করে বড় করেছি। এক একটি হাঁসের বর্তমান বাজার দর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হবে।
তাহেরুল বলেন, ‘ হাঁসগুলো মরে যাওয়ায় আমরা চার বন্ধু বিপাকে পড়েছি। আর কিছুদিন পরেই হাঁসগুলো বিক্রি করে খামার বড় করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু সে পরিকল্পনা এখন অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে।’
মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হোসেন শিহাব মিঞা জানান, চার বন্ধু মিলে খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু গত শনিবার রাতের অতি বর্ষণে তাদের হাঁস মরে যাওয়ায় ছেলেগুলো বিপদে পড়লো।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভেটেনারী সার্জন ডাঃ হোসেন মোঃ রাকিবুল রহমান সোমবার রাতে মুঠোফোনে জানান, ‘হাঁস মারা যাওয়ার ঘটনাটি আমি শুনেছি। ছুটিতে থাকায় আমার স্টাফকে দিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কয়েকজন মিলে তারা এ খামারটি দিয়েছে। বন্যায় খামারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনও সহযোগিতার সুযোগ থাকলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।