জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের শ্রীপুরে চাকরি হারিয়ে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণ গ্রহীতার ঘরে তালা মেরে দিয়েছে আম্বালা ফাউন্ডেশন নামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখন স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘরে তালা লাগানোর বিষয়টি জানতে পারেন ঋণ গ্রহীতা। ভুক্তভোগীরা হলেন, স্বামী আলাউদ্দিন ও গার্মেন্টস শ্রমিক শামীমা আক্তার।
জানা যায়, প্রায় ২০/২২ বছর আগে আলাউদ্দিনের বাবা আবুল বাশার শ্রীপুরের চন্নাপাড়া গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। শামীমা একটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে অপারেটর পদে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি হারিয়েছেন। স্বামী আলাউদ্দিন বাসের সুপারভাইজার পদে কাজ করেন।
ঋণ গ্রহীতা শামীমা আক্তার জানান, গত বছরের মে-জুন মাসে মাসিক ৯ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তিতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখা থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। ঋণের টাকায় স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন তিনি। ঋণের টাকা প্রতি মাসেই যথা সময়ে পরিশোধ করে আসছিলেন। জানুয়ারি মাসে গার্মেন্টস থেকে চাকরি হারিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। অপরদিকে শাশুড়ি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংসারে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, শাশুড়ির চিকিৎসা সব মিলিয়ে চাকরি হারিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি তিনি। গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়িকে দেখতে ঘরে তালা দিয়ে হাসপাতালে যান তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফিরে এসে ঘরের দরজায় দুইটি তালা দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা এনজিও কর্মীরা তালা লাগিয়েছেন বলে জানান।
শামীমা বলেন, আমি যখন ১ লাখ টাকা ঋণ নিই, তখন আমাকে ৩২ হাজার নগদ টাকায় বাধ্যতামূলকভাবে একটি সেলাই মেশিন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ঋণ বাবদ যাবতীয় খরচ ও সঞ্চয় বাদে আমাকে ১ লাখ টাকার জায়গায় মাত্র ৫৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমি তখন সেলাই মেশিন না নিতে চাইলে আমাকে ঋণ দেওয়া হবে না বলে জানায়। আমি ওই টাকায় একটি অটোরিকশা কিনেছি। প্রতি মাসের প্রথম বুধবার কিস্তি পরিশোধের কথা। আমার মাত্র একমাস কিস্তির টাকা বকেয়া পড়েছে, তাই তারা (এনজিও কর্মীরা) আমার ঘরে তালা লাগিয়েছে। আমার যদি চাকরিটা না যেত তাহলে ঋণের টাকা বকেয়া পড়ত না। খেয়ে না খেয়ে আগে ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি। আমি এখন আমার ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ১৫ বছরের মেয়ে শাহরিয়া আফরিন, মাদ্রাসার ছাত্র ১৩ বছর বয়সী ছেলে মোঃ মিনহাজ ও ৬ বছর বয়সী ছেলে আলভিকে নিয়ে ঘরের সামনে বিকেল থেকে অপেক্ষা করছি। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলে আমরাও কিস্তির জন্য আপনার ঘরের সামনে গিয়ে বসে থাকি, আমাদের খুব কষ্ট হয়।
শামীমার স্বামী আলাউদ্দিন বলেন, দুজনের আয়ে মা-বাবা ও সন্তান নিয়ে কোনো রকম চলতে হয়। এরমধ্যে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ মাসের কিস্তি বকেয়া পড়েছে। আমরা স্বাধ্যমতো চেষ্টা করেছি কিস্তি দিতে কিন্তু মা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দিতে পারিনি। তাই তারা আমার ঘরে তালা মেরে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে আম্বাল ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার মাঠকর্মী কবির হোসেন বলেন, আমাদের লোনটা নিতে গেলে ১ লাখ টাকায় ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় লাগে। ১ হাজার টাকা বীমা, আনুষঙ্গিক ২৬৫ টাকা খরচ আছে। আর জোর করে সেলাই মেশিন দেওয়ার বিষয়টি হলো, যেদিন আমি ঋণ প্রস্তাব করি উনিই আমাকে বলেছিলেন, এক লাখ টাকা লোন দিলে আমি একটি সেলাই মেশিন নেব। পরদিন যখন স্যারেরা ভিজিট করে লোনটি নাকচ করতে চায় তখন উনিই সেলাই মেশিনের বিষয়ে রাজি হন।
ঘরে তালা লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, যখন একজন ঋণগ্রহীতা থাকেন না, তখন জামিনদারকে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। আমি সবসময়ই তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা কল ধরছিলেন না। আমরা গতকাল এসে তাদেরকে বাসায় পাইনি। যাওয়ার সময় ঘরে জামিনদারের উপস্থিতিতে তালা লাগিয়েছি।
কিস্তি না পেয়ে ঘরে তালা লাগানো বিষয়ে আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক আশিকুল ইসলাম বলেন, এই একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে অনেক বিরক্তিকর পরিস্থিতে পড়েছি। শামীমা আক্তারকে দেওয়া লোনের কিস্তি সঠিক সময়ে আসছিল না। প্রতি মাসেই মূল কিস্তি থেকে ৫শ টাকা ১ হাজার টাকা কম দিত। গত বুধবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে আমার মাঠকর্মী কিস্তির টাকা জন্য তার বাসায় যায়। কিন্তু তাদের ঘরের দরজা খোলা থাকলেও তারা বাসায় ছিল না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তারা না আসায় আমরা তাদের আসার অপেক্ষা করছিলাম। সবশেষ রাতে আসার সময় ঋণের জামিনদারকে ডেকে এনে তার সামনেই ঘরে তালা লাগিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের এরিয়া ম্যানেজার টিটু চক্রবর্তী বলেন, কিস্তি দেওয়ার কথা বলে কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে বাড়ি থেকে চলে গেছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে ঋণ খেলাপিদের বাড়িতে তালা লাগানোর নিয়ম নেই। এটা পরিস্থিতির শিকার।
শ্রীপুর থানার ওসি মোঃ শাহ্ জামান বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।