সাইফুল্লাহ হিমেল : মতিঝিল থেকে ২৫ মিনিট হাঁটাপথে বাসা নিয়েছি। বাসা থেকে ১০ মিনিট হেঁটে মানিকনগর মডেল হাইস্কুলের সামনে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে মতিঝিল রুটে। দুপুরে শরীর ক্লান্ত থাকলে না হেঁটে অটোরিকশাতেই অফিসে যাই। ভাড়া ১৫ টাকা। এখন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। শীত মৌসুম শেষ হতে যাচ্ছে। গরমকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রকৃতি। দ্রুত হাঁটলে শরীর ঘামে। ঘামা শরীরে অফিসে এসির বাতাস দারুণভাবে ক্ষতি করে। গত বছর এই কায়দায় অসুস্থ হয়েছিলাম। এ বছর একটু সাবধানেই চলছি।
সেদিন অটোরিকশায় উঠে বসে আছি প্রায় সাত মিনিট হলো। পাঁচ সিটের গাড়ি। তিনজন উঠেছি। চালক অপেক্ষায় আছেন আরেকজন হলেই টান দেবেন বলে। আমি ওঠার পরও প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেল একজন যাত্রী এখনো পাওয়া গেল না। রাস্তায় মানুষের অভাব নেই। আশপাশে অনেক রিকশাও দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীর চাপ নেই তেমন। কথা প্রসঙ্গে আমার পাশের যাত্রী সিএনজিচালককে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভাই ৫০০ কামাইতে কত সময় লাগে’।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চালক বললেন, ‘সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খ্যাপ মাইরাও ৫০০ জোগাইতে পারি না। আগে দুপুর গড়াতেই ৫০০ কামাইতাম। কী আর কমু মামা, মানুষ গাড়িতে উঠতে চায় না। আগে ১০ টাকা ভাড়া ছিল। জিনিসপাতির দাম বাড়ছে, আমাগো পোষায় না। তাই ১৫ টাকা নেই এহন। মানুষ আর কত পারব? বলেন মামা; যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়তাছে তাতে সংসার চালানোই দায় হয়ে গেছে। টাকা বাঁচাতে মানুষ এখন হেঁটেই যাতায়াত করে। আগে এহানে গাড়ি লাগালে তিন মিনিটে যাত্রী হতো। এহন তো বইয়া থাহন লাগে রাস্তায় তাকায়ে।’
যাত্রীর একটা মাত্র কথার উত্তর দিতে গিয়ে চালক পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরলেন। কথা শেষ হতেই একজন যাত্রী চলে এলেন।
দুই. একসময় অনেক করে ফেসবুক চালাতাম। নিয়মিত নিয়ম করে। প্রায় সারা দিন অনলাইনে থেকে নিজেকে আপডেট রাখতাম। এখন বিরক্ত হয়ে গেছি। আপডেট থাকাটা উপকারে আসেনি খুব। এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করি না। মাথা শান্ত থাকে। কারো কথার প্রতিক্রিয়া জানাতে চিন্তা করতে পারি। কিন্তু যখন নিয়ম করে নিজেকে ফেসবুকে রাখতাম তখন কারো কথা ভালোমতো গ্রহণ করতে পারতাম না। হুট করেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতাম। অনেকবার সেই প্রতিক্রিয়া ক্ষতির কারণও হয়েছে। এখন ছয় ঘণ্টা অফিস করেও মাথা শান্ত থাকে। বাসায় ফিরে চাইলেই পড়ার টেবিলে বসতে পারি। আবার বিছানায় পিঠ দেয়ার সাথে সাথে ঘুমও আসে। সময়মতো ঘুম থেকে উঠতেও পারি নিয়ম করে। স্মার্টফোন থাকাকালে ঘুমানোর প্রস্তুতিকাল ছিল প্রায় দুই ঘণ্টা।
যাই হোক, ভালো আছি স্মার্টফোন ছাড়া। তবে অনলাইন থেকে একেবারেই দূরে নেই। অফিস চলাকালে অফিসের পিসিতে অনলাইনে যুক্ত থাকি। খুচরা আলাপ একদম মিথ্যে মনে হয়। আজ ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ। অফিসে এসে ফেসবুকে লগইন করতেই একটা ছবিতে দৃষ্টি আটকে গেল। আরেকটু টাইম লাইন ঘেঁটে বুঝলাম ছবিটি গতকালই ভাইরাল হয়েছে।
ছবির বর্ণনা দিয়েই শেষ করব আজকের লেখা। ছবিটি ছিল একটা ১০ টাকার নোট ও একটি পলিব্যাগে ১০ টাকার খাবার তেল বিনিময় সংক্রান্ত। এখানে দেখা যাচ্ছে, একজন দোকানি গ্রাহকের হাতে ১০ টাকার তেল তুলে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রচলিত বাজারে সাধারণত ১০ টাকার তেল কেনার প্রচলন ছিল না এতকালেও। তাই ছবিটি মানুষের বিবেকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও দ্রব্যমূলের নিখুঁত উপস্থাপন করেছে ছবিটি। সোশ্যাল মিডিয়ার পাঠকদের কতটা আঘাত করেছে ছবিটি তার প্রমাণ ছবির ক্যাপশন ও মন্তব্যে ফুঠে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পণ্যমূল্য কত বেড়েছে সেটি এখানে উপস্থাপন করে আপনার সময় নষ্ট করতে চাইছি না। কারণ আমার চেয়ে আপনি, ক্রেতাই বেশি অবগত। আমার লেখা পড়ে সময় নষ্ট না করে টিকে থাকার লাড়াইয়ে এক মিনিট এগিয়ে থাকুন। এই সরকার চেয়েছিল ১০ টাকায় চাল দিতে। দিতে পারেনি। দক্ষ ও নৈতিক প্রশাসন ছাড়া তা কোনোকালেই কেউ পারবে না। দুর্নীতি রোধে আইনের চেয়ে নীতির কার্যকারিতা বেশি। আপনার নীতি যদি দুষ্টু হয় তাহলে আইন সেখানে অকার্যকর। তাই কল্যাণকর দেশ গঠনে নীতির শুদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই। এই দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র পরিচালকরা আমাদের ১০ টাকার চাল দিতে ব্যর্থ হলেও ১০ টাকার তেল দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে তাদের এই সক্ষমতার সাথে জনসাধারণের অক্ষমতা সহায়ক। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে হয়তো আমাদের ১০ টাকার তেল কেনার ছবি নিয়ে আলোচনা করতে হতো না।
লেখক : সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।