সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ নেপচুন। এর কক্ষপথের বাইরের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে লাখো মহাজাগতিক বস্তু ঘুরে বেড়াচ্ছে। অঞ্চলটির নাম কুইপার বেল্ট। ১৯৫১ সালে ডাচ্-আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কুইপার এই বেল্ট বা বেস্টনীর অস্তিত্বের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন। তাঁর সম্মানে এ অঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছে কুইপার বেল্ট।
জায়গাটি নতুন গ্রহের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়। এখানে রয়েছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বরফপূর্ণ বস্তু। অনেক গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ও ধূমকেতু আবিষ্কৃত হয়েছে এ অঞ্চলে। এর কোনো কোনোটির ব্যাস ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। ফলে কুইপার বেল্টে আরও অনেক গ্রহ বা গ্রহের মতো বস্তু (যেমন বামন গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদি) থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কুইপার বেল্টের অবস্থান সৌরজগতের শেষ প্রান্তে। সৌরজগতের সীমান্ত বলা যায় এ বেল্টকে। এটা আসলে কত দূরে, তা একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। এই দূরত্বকে বলে এক অ্যাস্ট্রনমিক্যাল ইউনিট বা এইউ। বাংলায় এই দূরত্বকে অনেকে বলেন জ্যোতির্বিদ্যাগত একক। তবে বাংলা হওয়া উচিত সৌরজাগতিক দূরত্ব। কারণ এই একক দিয়ে সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর দূরত্ব বোঝানো হয়।
যাই হোক, দীর্ঘকাল ধরে সৌরজগতের ভেতরে আমাদের জানা সবচেয়ে দূরের বস্তু ছিল বামন গ্রহ প্লুটো (বর্তমানে আরও দূরবর্তী বস্তু পাওয়া গেছে, তবে সেটা গ্রহ, উপগ্রহ বা বামন গ্রহ কিংবা গ্রহীয় কোনো বস্তু নয়)। এটি প্রায় ৩৯ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরে অবস্থিত, যা কুইপার বেল্টেরও অংশ।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, কুইপার বেল্ট সূর্য থেকে প্রায় ১ হাজার অ্যাস্ট্রনমিক্যাল ইউনিট পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ প্লুটো পর্যন্ত ৩৯ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিটের মধ্যে গ্রহ রয়েছে ৮টি, বামন গ্রহ ৫টি এবং উপগ্রহ রয়েছে প্রায় ৩০০টি। তাহলে বাকি কুইপার বেল্টের মধ্যে এরকম আরও কত গ্রহীয় বস্তু থাকতে পারে, তা অনুমানের চেষ্টা করা যাক।
কুইপার বেল্ট নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, এ অঞ্চলে প্রায় ২০০ থেকে ১০ হাজারের বেশি বামন গ্রহ থাকতে পারে। কারণ ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে ৫টি বামন গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে। আরও যে পরিমাণ বস্তু এ বেল্টে রয়েছে, তাতে ১০ হাজারের বেশি বামন গ্রহ থাকতেই পারে। বর্তমানে আমাদের পরিচিত ৭০টি বস্তু রয়েছে এ অঞ্চলে। এগুলোর কোনোটি ভবিষ্যতে বামন গ্রহের স্বীকৃতি পেতে পারে। এর মধ্যে অবশ্য প্লুটোই সবচেয়ে বড়।
আবার অনেক জ্যোতির্বিদের মতে, কুইপার বেল্টে কোনো গ্রহ থাকার সম্ভাবনা নেই। কারণ নেপচুন গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবে এই অঞ্চলে কোনো গ্রহ তৈরি হতে পারার কথা নয়। কারণ নেপচুনের প্রভাবে ছোট ছোট বস্তুগুলো একত্রিত হতে পারে না।
তবে নেপচুনের প্রভাব কাটিয়ে পাঁচটি বামন গ্রহ যেহেতু তৈরি হতে পেরেছে, তার অর্থ, এরকম আরও হতে পারে। ২০২৩ সালে জাপানের শান্দাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্যাট্রিক সোফিয়া ও জাপানের ন্যাশনাল আস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী তাকাশি ইতো দ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা দেখান, পৃথিবীর মতো একটি নতুন গ্রহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কুইপার বেল্টে। হতে পারে সেটা সৌরজগতের নবম গ্রহ। তবে সে জন্য আরও অনেক গবেষণা বাকি।
এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য বলা হলো, সেগুলোর সব কি শুধু অনুমান? না, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নিউ হরাইজনস মহাকাশযান কুইপার বেল্টে ঢুকেছে। ২০০৬ সালে এই নভোযান যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এটি প্লুটোর পাশ দিয়ে উড়ে যায়। এরপর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি নভোযানটি ঢুকে পড়ে কুইপার বেল্টে। এ সময় নভোযানটি হাজারো ছবি তুলে নাসায় পাঠিয়েছে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।