কৃষ্ণগহ্বরে পড়ে গেলে কী ঘটবে আমাদের সঙ্গে?

কোনো কারণে হঠাৎ কৃষ্ণগহ্বরে পড়ে গেলে কী ঘটবে? প্রশ্নের ধরনটা এমন যেন কুয়া, গর্ত বা খানাখন্দের মতো কৃষ্ণগহ্বরও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এখানে-ওখানে ওত পেতে আছে! সে কারণেই হয়তো সবাই মহাজাগতিক এই বস্তু নিয়ে এত চিন্তিত! প্রকৃত ঘটনা আসলে তা নয়। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের অতি রহস্যময় এক বস্তু। উদ্ভটও বলা যায়। তাই তাত্ত্বিক আবিষ্কারের পর থেকেই সেটা পরিণত হয়েছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। আমজনতা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী, সবার কাছে তা সমান আকর্ষণীয়। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংও তাঁর জীবনের সিংহভাগ ব্যয় করেছেন কৃষ্ণগহ্বর গবেষণায়। সে জন্য এটিকে নিয়ে এমন উদ্ভট ও অবাস্তব প্রশ্ন ওঠে।

কৃষ্ণগহ্বরের আলো শোষণ

অবশ্য এগুলো সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই জানা বাকি। রহস্যের পর্দা খুলতে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তাই প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা। মহাকাশের এই কালো গর্তের মধ্যে কোনো আলো বা বস্তু পড়লে কী ঘটে, সেসব জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সেগুলো থেকেও অনেকে বোঝার চেষ্টা করছেন, কৃষ্ণগহ্বরে মানুষ বা নভোচারী পড়ে গেলে কী কী ঘটতে পারে? মানুষটা কি মারা যাবে? সাধারণ গর্তের চেয়ে এই পতনের অনুভূতি কি আলাদা? সেখানে গিয়ে কি মহাবিশ্বের গভীর-গোপন কোনো রহস্য জানা যাবে? খুলে যাবে কি স্থান ও কালের রহস্যজট? মাথাটাও কি ঠিকঠাক কাজ করবে?

এসব প্রশ্নের পরীক্ষামূলক কোনো জবাব আমাদের হাতে নেই। জবাব পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়, দেখেশুনে ভালো একটি কৃষ্ণগহ্বরে ঝাঁপ দেওয়া। ব্যস, তাহলেই ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু মুশকিল হলো, সেটিও বেশ কঠিন। কারণ, আমাদের সবচেয়ে কাছের কৃষ্ণগহ্বরটাও পৃথিবী থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। সেখানে শিগগির পৌঁছানোর মতো নভোযান এই মুর্হূতে আমাদের নেই। অতএব তাত্ত্বিকভাবে শুধু বিষয়টি জানার চেষ্টা করা যায়। চলুন, সেটিই করা যাক।

কৃষ্ণগহ্বরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে প্রথমে চোখে পড়বে, বস্তুটা আসলেই কৃষ্ণ বা কালো। মহাকাশের একটি কালো গর্ত। কারণ, সেখান থেকে কোনো আলোর কণা বা ফোটন বেরিয়ে আসে না। আবার সেখানে কোনো আলো পড়লে তা–ও আটকে গিয়ে ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকে। কোনো বস্তু থেকে আলো না এলে সেটি আমাদের চোখে কালো হিসেবে ধরা পড়ে। তাই কৃষ্ণগহ্বর আমাদের চোখে কালো। অবশ্য হকিং রেডিয়েশনের কথা সত৵ হলে, কৃষ্ণগহ্বর থেকেও কিছু আলো বিকিরিত হওয়ার কথা। সেই বিকিরণও আমাদের সাদা চোখে অদৃশ্য। কারণ, সেটি দৃশ্যমান আলো নয়। তাই কৃষ্ণগহ্বর আমাদের কাছে যে কুচকুচে কালো, তাতে সন্দেহ নেই।

আবার আক্ষরিক অর্থেই একে মহাজাগতিক কুয়া বা গর্ত বলা যায়। এটা স্থানের একটি গোলক। কারণ, সেখানে যেকোনো কিছু পড়ে গেলে আজীবন সেখানেই থেকে যায়। কারণ, কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ অতি শক্তিশালী। এর ভেতরে পদার্থ বা বস্তু খুবই ঘনভাবে ঠাসাঠাসি বা সংকুচিত হয়ে থাকার কারণেই এগুলোর মহাকর্ষ অতি শক্তিশালী।

সাধারণত বেশি ভরের বস্তু যথেষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে থাকে। যেমন পৃথিবী। পৃথিবীর সমান ভরের কোনো কৃষ্ণগহ্বরের প্রশস্ততা হবে মাত্র এক ইঞ্চি। মানে ছোট্ট একটি মার্বেলের সমান। কেউ যদি পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে পৃথিবীর ব্যাসার্ধের সমান দূরত্বে থাকে এবং যদি একটি মার্বেল আকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্র থেকে একই দূরত্বে থাকে, তাহলে দুই ক্ষেত্রেই সমপরিমাণ মহাকর্ষ অনুভব করবে।

কিন্তু এগুলোর যত কাছে যেতে থাকবে, ঘটনা ঘটতে থাকবে দুই রকম। যেমন পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছে গেলে কোনো মহাকর্ষই অনুভব করবে না। কারণ, গোটা পৃথিবীই তখন তার চারপাশে থাকবে। তাই সব দিক থেকেই পৃথিবী তাকে সমপরিমাণে টানবে। কিন্তু মার্বেল সাইজের কৃষ্ণগহ্বরটার কাছে গেলে ঘটনা ঘটবে উল্টো। সেখানে বিপুল মহাকর্ষ অনুভূত হবে। গোটা পৃথিবীর ভর টানতে থাকবে। এটিই আসলে কৃষ্ণগহ্বরের চরিত্র।