আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইরানে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির জনপ্রিয়তা ছিল ৮৩ শতাংশ। কথাটা কতখানি সত্য এর প্রমাণ মিলছে গত দুই দিন ধরে। রাজধানী তেহরানে গতকাল সোমাবার ইরানের ইসলামী বিপ্লবী বাহিনীর কুদস ফোর্সের এই কমান্ডারের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাযা ঠিক কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তা খুঁজে বের করা যায়নি। কত কোটি মানুষ এতে যোগ দিয়েছে, সে সংখ্যাটি জানাতে পারেনি ইরান সরকারও। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ সপরিবারে তেহরানে ছুটে গিয়েছে সোলাইমানির জানাযায় যোগ দিতে। বোরকা পরা, মাথা-মুখ কালো চাদরে ঢাকা লাখো নারীকে গতকাল দেখা গেছে তেহরানের রাস্তায়।
চোখে পানি, মুখে মাতম আর বুকভরা প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে গতকাল সোলাইমানিকে বিদায় জানায় ইরান। যে স্পৃহার স্পষ্ট প্রকাশ ছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বক্তব্যে। সোলাইমানির পতাকা জড়ানো কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং সোলাইমানির সদ্য স্থলাভিষিক্ত ও দীর্ঘদিনের সহচর ইসমাইল ঘানি। জানাযায় ইমামতি করেন খামেনি। দীর্ঘদিন সোলাইমানির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কান্নাভেজা কণ্ঠে স্মৃতিচারণাও করেন। জানাযায় অংশ নেওয়া মানুষের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বক্তব্য দেন সোলাইমানির মেয়ে জয়নব—বার্তা একটাই, প্রতিশোধ।
জানাযায় যোগ দেওয়া বছর তিরিশের এক নারী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘তিনি (সোলাইমানি) আমাদের নায়ক ছিলেন। তাঁর হাতেই দায়েশ (আইএস) পরাজিত হয়।’ মোহাম্মদি নামের এ নারী আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পাপ করেছে। আমি তাঁর শাহাদাতের শোক করতে এখানে এসেছি। আমরা অবশ্যই এর প্রতিশোধ নেব। তবে যুদ্ধ করে নয়। কেউ যুদ্ধ চায় না।’
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, কয়েক কোটি লোক এই জানাযায় অংশ নিয়েছে। তেহরানের রাস্তাগুলোতে জানাযায় অংশ নেওয়া মানুষের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে পাতাল রেলস্টেশন থেকে যাত্রীরা বের হতে পারছিল না। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়মুখী প্রতিটি সড়ক ও আশপাশের গলিপথ সয়লাব হয়ে ছিল মানুষে।
এই জানাযাযাত্রা একটা সময় পর্যন্ত নীরব ছিল। একপর্যায়ে এক শিশু গাছের মগডালে উঠে স্লোগান দেয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’; মুহূর্তের মধ্যেই বিক্ষুব্ধ চেহারা ধারণ করে পুরো মিছিল। যোগ হয় আরো বহু স্লোগান, ‘কাফেরদের মৃত্যু হোক’, ‘আল-সৌদ পরিবারের মৃত্যু হোক’ (সৌদি রাজপরিবার)। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ-ঘৃণা উচ্চারিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
তেহরান থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের শহর কারাজ থেকে সপরিবারে জানাযায় এসেছিলেন মেহেদি গোরবানি। বলছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের বার্তা পরিষ্কার, আমরা আপনাদের ছেড়ে দেব না। যে রক্ত আপনারা ঝরিয়েছেন, তার মূল্য আপনাদেরই শোধ করতে হবে। এর শুরুটা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ করব আমরা।’
আফখামি নামের ৬১ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। এই অঞ্চলে তাদের যত ঘাঁটি আছে সব কটিতে আমরা হামলা চালাব। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আয়ত্তের মধ্যে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যা কিছু আছে, আক্রান্ত হবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাদের সরে যেতে হবে। শুধু ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার যথেষ্ট নয়।’
সূত্র : এএফপি, নিউ ইয়র্ক টাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।