জুমবাংলা ডেস্ক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত সাত দিনে মারা গেছেন ১ হাজার ৪৮০ জন। এ সময়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৪২৯ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৯৬ জন। শনাক্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান এমন হলেও কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা উপেক্ষা করে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার পরপরই পুরনোরূপে ফিরেছে করোনাভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রাজধানী ঢাকা। খুলেছে মার্কেট, শপিংমল ও দোকানপাট। কোথাও শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। গাদাগাদি করে চলছে গণপরিবহনও। একই অবস্থা লঞ্চ-ট্রেনেও।
শনিবার (১৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত সপ্তাহের তুলনায় গত সাত দিনে মৃত্যু বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর শনাক্তের হার আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। সুস্থ হয়েছেন ৫৫ হাজার ২৪ জন, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত একদিনে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪৮৯ জন। দেশের ৬২৭টি ল্যাবে গত একদিনে করোনার ২৯ হাজার ২১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর আগে এত নমুনা পরীক্ষা হয়নি। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। সার্বিক শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন আরো ৮ হাজার ৮২০ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ২৩ হাজার ১৬৩ জন। সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।
বিভাগ অনুযায়ী মৃত্যুর তালিকায় ঢাকা বিভাগের পরই রয়েছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগে ৪৯ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৩২, রাজশাহীতে ২০, বরিশালে ৫, সিলেটে ২, রংপুরে ১০ ও ময়মনসিংহে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঈদকে ঘিরে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের সুযোগে ঢাকা ছাড়ছেন ঢাকার অনেকে। প্রতিটি ফেরিঘাটে মানুষের ঢল নেমেছে। প্রতিটি লঞ্চে গাদাগাদি করে মানুষ যাচ্ছেন। শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ৮০টি লঞ্চ ও ১৩টি ফেরি চলাচল করছে, কিন্তু যানবাহন ও মানুষের চাপে কুলিয়ে উঠতে পারছে না সেগুলো। একই অবস্থা বাসস্টেশনগুলোতেও। সবখানেই স্বাস্থ্যবিধি উধাও।
বিধিনিষেধ শিথিল নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশে পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চলমান বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা সাপেক্ষে আমাদের সংক্রমণ বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিধিনিষেধ শিথিলের সুযোগে যেমন রাজধানীতে কয়েক লাখ মানুষের ভিড় বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বেডের সংখ্যাও।
টানা পাঁচ দিন ধরে করোনায় মৃত্যু দুইশ’র ওপরে থাকলেও শুক্রবার ২০০-এর নিচে নামে। গতকাল শনাক্ত কিছুটা কমলেও আবার ২০৪ জন মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসা দেওয়া ১৬ হাসপাতালের মধ্যে ছয়টি বড় সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই। তিনটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হলেও আইসিইউ নেই। অর্থাৎ ১৩ হাসপাতালের মধ্যে ছয়টি হাসপাতালেই আইসিইউ নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ২৭৫ বেডের মধ্যে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন ৬০ জন। বেসরকারি ডেডিকেটেড ২৮টি হাসপাতালের মধ্যে দুটি হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। আর আটটি হাসপাতালে সাধারণ বেড খালি নেই। আইসিইউ খালি নেই ১০টি হাসপাতালে।
গতকাল ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ১৫ হাজার শয্যা রয়েছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে এরই মধ্যে এসব শয্যা রোগীতে প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে হাসপাতালের শয্যা প্রায় শেষ হয়ে আসছে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, লকডাউন শিথিলে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে। এখনই হাসপাতালগুলোতে কোনো বেড ফাঁকা নেই, বরং বিছানার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। আমাদের আসলে সর্বনাশ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, করোনার উর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে গত ১৩ জুলাই জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। বিধিনিষেধ শিথিল করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সর্বাবস্থায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হলেও বাস্তবচিত্র তার উল্টো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।