বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : কোয়ান্টাম কম্পিউটার জগতে নিজেদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করেছে মাইক্রোসফট। ১৯ ফেব্রুয়ারি এক অনলাইন অনুষ্ঠানে নতুন প্রযুক্তির কোয়ান্টাম প্রসেসর উন্মোচন করেছে তারা। এর নাম মেয়োরানা ১। এই চিপকে বলা হচ্ছে বিশ্বের প্রথম টপোলজিক্যাল কোর আর্কিটেকচার চালিত কোয়ান্টাম প্রসেসর।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার জগতে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে এটি।
মাইক্রোসফটের দাবি, এই কোয়ান্টাম চিপ তৈরিতে পদার্থের নতুন অবস্থা সৃষ্টি করেছে গবেষকদল। পদার্থ তিনটি অবস্থায় সচরাচর দেখা যায়—কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়। প্লাজমা নামেও একটি অবস্থা আছে।
মাইক্রোসফট বলছে, এর বাইরেও নতুন একটি অবস্থা কাজে লাগিয়ে চিপটি তৈরি করা হয়েছে, যার নাম টপোলজিক্যাল কন্ডাক্টর, সংক্ষেপে টপোকন্ডাক্টর। মাইক্রোসফটের দলটি কিভাবে টপোলজিক্যাল কিউবিট তৈরি করেছে, এর কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য ও সঠিকভাবে পরিমাপ করা হয়েছে তার রূপরেখা প্রকাশ পেয়েছে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে। এই রূপরেখা মেনেই বাণিজ্যিক পর্যায়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী মেয়োরানা ১ চিপ তৈরি করা হয়েছে।
ঠিক যেভাবে সেমিকন্ডাক্টর আবিষ্কার বদলে দিয়েছিল প্রযুক্তির দুনিয়া, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে তেমনই বড় প্রভাব রাখবে টপোকন্ডাক্টর।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি নতুন প্রসেসরটিতে ১০ লাখ পর্যন্ত কিউবিট সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। ফলে জটিল সব গাণিতিক, বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান মুহূর্তেই করতে পারবে এই প্রসেসর।
এ প্রকল্প নিয়ে ২০০০ সাল থেকেই কাজ করছে মাইক্রোসফট। কোয়ান্টাম প্রসেসর নিয়ে গবেষণার শুরু থেকেই টপোলজিক্যাল কিউবিট ডিজাইন অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এ প্রতিষ্ঠান। তখন পর্যন্ত বিষয়টি ছিল তাত্ত্বিক।
টপোকন্ডাক্টর বাস্তবে তৈরি সম্ভব হবে কি না, নিশ্চিত ছিলেন না কোনো গবেষক। দীর্ঘ আড়াই যুগ পর সফলতা পেয়ে পুরো দল আনন্দিত। তবে গবেষকরা বলছেন, কাজ মাত্র শুরু। ১০ লাখ কিউবিটের প্রসেসর তৈরির যাত্রা এখনো বাকি।
হাতের তালুতে এঁটে যাওয়া এই মেয়োরানা ১ চিপটি যেসব বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক সমস্যার সমাধান করবে, তা বর্তমানের সেমিকন্ডাক্টরভিত্তিক কম্পিউটারের পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন—পদার্থের মধ্যে কেন দেখা দেয় ক্ষয় বা ফাটল? রসায়নের এই কঠিন প্রশ্নের সমাধান করতে সাহায্য করবে মেয়োরানা ১। এতে ফাটল নিরোধী বা নিজে থেকেই ফাটল মেরামত করতে পারে এমন উপকরণ তৈরি করা সম্ভব হবে। সেতু বা বিমানের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ফোনের স্ক্রিন বা গাড়ির দরজা তৈরিতেও এমন উপকরণ কাজে লাগবে। প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রধান উপজাতগুলো ভেঙে ফেলার উপায় বের করতেও কাজ করবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। নতুন সব জৈবিক অনুঘটক বা এনজাইম আবিষ্কারের মাধ্যমে বদলে যাবে স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষি খাতের চিত্র।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি কাজ করবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বর্তমানে কয়েক ট্রিলিয়ন ট্রানজিস্টরযুক্ত সেমিকন্ডাক্টর চিপ ব্যবহার করে কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এতে প্রচুর বিদ্যুৎ ও পানি অপচয় হয়। মাত্র একটি মেয়োরানা ১ চিপ ব্যবহার করেই স্বল্প পরিসরে এআই মডেল চালানো সম্ভব। ১০ লাখ কিউবিটের প্রসেসরটি তৈরি সম্ভব হলে অকল্পনীয় ক্ষমতাশীল এআই মডেল তৈরি করা যাবে। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনও হবে না।
Google Pixel 9a থেকে Samsung Galaxy A Series: বাজার কাঁপাতে আসছে!
কোয়ান্টাম প্রসেসর নিয়ে কাজ করছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। গত ডিসেম্বরে উইলো নামের একটি প্রসেসর তৈরি করে সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল গুগল। মেয়োরানা ১ আবিষ্কারের মাধ্যমে আবারও এ দৌড়ে এগিয়ে গেছে মাইক্রোসফট। তবে আইবিএমের মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন, শিগগিরই তাদের তৈরি প্রসেসরগুলো মাইক্রোসফটকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে টপোকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ফেলনা নয় মোটেই।
কোয়ান্টাম প্রসেসর তৈরির পাশাপাশি পদার্থের এই নতুন অবস্থা ভবিষ্যতে আরো অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।