কৃষ্ণগহ্বরের আকৃতি বিভিন্ন হতে পারে। সেটি নির্ভর করে কতটা ভর তার ভেতর ঘনবদ্ধ বা সংকুচিত আছে। পৃথিবীকে যদি পিষে ফেলে যথেষ্ট সংকুচিত করা সম্ভব হতো, তাহলে আমরা এমন একটি কৃষ্ণগহ্বর পেতাম, যার আকৃতি হতো মার্বেল আকারের। মার্বেলটির প্রায় এক সেন্টিমিটার দূরত্বে কোনো আলো পড়লে সেই আলো আর ফিরে যেতে পারত না।
ভর আরও বাড়িয়ে এই দূরত্ব আরও বাড়ানো সম্ভব। যেমন সূর্যকে যথেষ্ট সংকুচিত করলে এমন কৃষ্ণগহ্বর পাওয়া যেত, যেটি মাত্র ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত। তখন সেটি স্থানকে আরও বাঁকিয়ে ফেলতে পারত এবং তার ঘটনা দিগন্ত হতো মাত্র তিন কিলোমিটার। অর্থাৎ কৃষ্ণগহ্বরটার কেন্দ্র থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে কোনো আলো পড়লে সেটি চলে যেত না ফেরার দেশে। বোঝা যাচ্ছে, ভর যত বেশি, কৃষ্ণগহ্বরের আকারও তত বড়।
আসলে কৃষ্ণগহ্বর কত বড় হবে, তার কোনো তাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা নেই। এখন পর্যন্ত মহাকাশে সবচেয়ে ছোট যে কৃষ্ণগহ্বর শনাক্ত করা গেছে, তার প্রশস্ততা প্রায় ২০ কিলোমিটার। আর সবচেয়ে বড়টার প্রশস্ততা ১০ বিলিয়ন কিলোমিটার। সত্যিকারের দানব! কৃষ্ণগহ্বরের দিকে এগিয়ে গেলে দ্বিতীয় যে ব্যাপার চোখে পড়বে, সেটি হলো অধিকাংশ সময় সেখানে শুধু কৃষ্ণগহ্বর নয়, আরও কিছু থাকে। এর চারপাশে প্রায় সব সময় বিভিন্ন বস্তু ঘুরপাক খাচ্ছে। সেগুলো কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর পড়েও যাচ্ছে চিরতরে। অর্থাৎ কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে একগাদা বস্তু পাক খায়।
এসব বস্তু মিলে যে কাঠামো গড়ে তোলে, তা অ্যাক্রেশন ডিস্ক বা চাকতি। এটা গ্যাস, ধুলা ও অন্যান্য পদার্থ দিয়ে গঠিত। এসব পদার্থ হয়তো কোনো কারণে সরাসরি ভেতরে পড়ে যেতে পারেনি, বরং সেগুলো একটি কক্ষপথ মেনে অনবরত পাক খাচ্ছে। এগুলো আসলে ভেতরে পড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। ছোট কৃষ্ণগহ্বরের এই চাকতি হয়তো আহামরি কিছু নয়, কিন্তু অতিভারী বা দানবীয় কৃষ্ণগহ্বরের অ্যাক্রেশন ডিস্ক থেকে চোখ ফেরানো যাবে না। ভয়ংকর সুন্দর সেটা!
এসব গ্যাস, ধুলা আর পদার্থ অতি দ্রুতবেগে ঘুরছে। তাতে বস্তু ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যেতে বাধ্য। ফলে বিপুল শক্তি নিঃসৃত হচ্ছে। এভাবে তৈরি হতে পারে মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আলোক উৎস, যেগুলো কোয়াসি স্টার বা কোয়েসার নামে পরিচিত। এগুলো মাঝেমধ্যে কোনো কোনো গ্যালাক্সির সব কটি নক্ষত্রের মিলিত আলোর চেয়ে কয়েক হাজার গুণ উজ্জ্বল হতে পারে। তবে আপনার সৌভাগ্য বলতে হবে, সব কৃষ্ণগহ্বরে কোয়েসার তৈরি হয় না। কারণ, এ রকম নাটকীয় দৃশ্য তৈরি করার জন্য বেশির ভাগ সময় অ্যাক্রেশন ডিস্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ পদার্থপূর্ণ বা উপযুক্ত অবস্থায় থাকে না।
আপনার সৌভাগ্য এ জন্য যে সে রকম নাটকীয় কিছু ঘটলে কৃষ্ণগহ্বরের কাছে যাওয়ার আগেই আপনি সম্ভবত মহাশূন্যে উধাও হয়ে যেতেন দুম করে। স্রেফ বাষ্পীভূত হয়ে যাবেন। কাজেই কৃষ্ণগহ্বরে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তার অ্যাক্রেশন ডিস্কটা তুলনামূলক শান্তশিষ্ট কি না, তা একবার খোঁজ নেওয়া ভালো। অন্যদিকে স্টিফেন হকিংয়ের পরামর্শ হলো, ঝাঁপ দেওয়ার জন্য ছোটগুলোর তুলনায় বড় ধরনের কৃষ্ণগহ্বর বেছে নেওয়া উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।