ধর্ম ডেস্ক : ঈদুল আজহায় কোরবানি করা পশুর মাংস বিক্রি করার কোনও সুযোগ নেই। অভিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, যিনি কোরবানি করবেন তিনি তার পশুর মাংস বিক্রি করতে পারবেন না। তবে কোরবানির মাংস কাউকে দান করা হলে তিনি কী করবেন, এ নিয়ে অবশ্য কোরবানিদাতার করণীয় কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানি করা পশুর কোনও কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে বিনিময় করা ইসলামে জায়েজ নয়। এর অর্থ হচ্ছে কোরবানির কাজে সহায়তাকারী কসাই ও তার লোকদেরও পারিশ্রমিক হিসেবে মাংস দেওয়া যাবে না।
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র আল কাউসারে এ বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া লিখেছেন, ‘মাসআলা : ৪৪. কুরবানির মাংস, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১’।
জানতে চাইলে মাওলানা জুনায়েদ আহমাদ ছিদ্দিক বলেন,‘আমরা কোরবানির মাংস আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করি। বিতরণ করার পর এই মাংসের মালিক তখন আর আমরা না, যাকে দেওয়া হলো তিনি মালিক। মালিক হিসেবে এই মাংস তিনি যা খুশি করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘কোনও দরিদ্র ব্যক্তি হয়তো ১০-১৫ কেজি মাংস দান হিসেবে পেলেন, তিনি তো একসঙ্গে সেই মাংস রান্না করতে পারবেন না। অথবা তার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। আবার শুধু মাংস নয় তার মশলা, চাল, ডালও লাগবে। সেক্ষেত্রে মাংস বিক্রি করে সে হয়তো সেই জিনিসপত্র সংগ্রহ করবে। তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মাংস সংগ্রহ করা অনুচিত কাজ।’
জরুরি কিছু মাসআলা:
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র ‘আল কাউসারে’ মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া কোরবানির পশুর মাংস সংক্রান্ত বিষয়ে মাসআলা বর্ণনা করেছেন।
কাজের লোককে কোরবানির মাংস খাওয়ানো
‘‘মাসআলা : ৬৯. কোরবানির পশুর কোনও কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েজ নয়। মাংসও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও মাংস খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন’’।
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
‘‘মাসআলা : ৭০. কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। তবে কোরবানির পশুর কোনও কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫’’।
কোরবানির পশুর হাড় বিক্রি
‘‘মাসআলা : ৬৭. কোরবানির মৌসুমে অনেক মহাজন কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। এতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনও কোরবানিদাতার জন্য নিজ কোরবানির কোনও কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েজ হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১’’।
কোরবানির মাংস ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া
‘‘মাসআলা : ৪৯. কোরবানির মাংস হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েজ।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০’’।
অন্য পশুর সামনে জবাই করা যাবে কিনা?
‘‘মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।’’
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র আল কাউসারে মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া লিখেছেন, ‘‘মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, মাংস বা কোরবানির পশুর কোনও কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারি দেওয়া যাবে।’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।