জুমবাংলা ডেস্ক: ঈদুল আজহার আর মাত্র তিন দিন বাকি। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) পালিত হবে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় এ উৎসব। কোরবানিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। তেমনই একটি হাট গাবতলীর হাট। তবে এই হাটে একসঙ্গে দেখা মিলছে শাকিব খান, হিরো আলম, নেইমার ও মেসিদের। সময় নিউজের প্রতিবেদক আবু সাঈদ নিশান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
নামে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। সুপারস্টারদের নামের বিভিন্ন ভাইরাল গরুর একসঙ্গে দেখা মিলছে গাবতলীর হাটে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য গরু হাটে এসে পৌঁছেছে। অঞ্চলভেদে গরুর নামেও রয়েছে বৈচিত্র্য।
রবিবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর গাবতলীর হাট ঘুরতে গেলে এক দল শিশু ভাইরাল ও বৈচিত্র্যময় গরুর কাছে নিয়ে যান প্রতিবেদককে। তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখা মেলে এবারের হাটের সবচেয়ে বড় গরু ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডের’।
গাবতলীর বাস টার্মিনাল পার হয়ে একটু সামনে এগোতেই ভাঙা একটি বাড়ি। সে বাড়ির সামনেই অবস্থান নিয়েছে সূদুর নাটোর থেকে আসা ব্ল্যাক ডায়মন্ড। ১৮ লাখ টাকা দামের গরুটি শনিবার রাতে ট্রাকে করে নাটোর থেকে গাবতলীর হাটে নিয়ে আসেন মোহাম্মদ শামসুল মোল্লা।
তিনি বলেন, ‘আড়াই বছর ধরে লালন পালন করে কোরবানির জন্য গরুটি নিয়ে এসেছি। হাটে হয়তো এরচেয়ে বড় গরু আছে, কিন্তু দেশি গরুর মধ্যে এমন সুস্থ-সবল ও মানের দিক থেকে ভালো গরু আর একটাও নাই।’
মানুষ কীভাবে বুঝবে আপনার এই গরু দেশি ও মানে ভালো জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কোরবানি হচ্ছে সত্য কথার, মিথ্যা কথায় কোরবানি হয় না। আমার গরুর মতো এত টাইট গরু হাটে নাই। প্রতিদিনই এই গরুকে হাঁটাইছি। এর শরীর ধরলেই বুঝবেন এইটা পিওর দেশি গরু।’
গরুর খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, গরুকে আমি হাবিজাবি কিছু খাওয়াই নাই। গমের ছাল (ভূসি), খেসারির ময়দা, খড় ও প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়ায়ে গরু বড় করেছি। অন্য কিছু খাওয়াই নাই। তবে মাঝে মাঝে গরুকে শবরি কলা খাওয়াইছি। এতে গরু আরও স্বাস্থ্যবান হয়েছে।
কেমন দাম উঠেছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দাম তো ১৮ লাখ টাকা চেয়েছি। কিন্তু এখন অবদি ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
যে দাম চেয়েছেন তাতে বিক্রি করতে পারবেন কী না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, চেষ্টাতো আছে। প্রতিদিন ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা খরচ হয় গরুর পেছনে। ১৮ লাখে বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ থাকে। নইলে লস হয়ে যাবে। এখন দেখি কি হয়। নিয়ত আছে আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যেটা নসিবে রাখছে তাই মেনে নেবো।
ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি
এ সময় কথা হয় মিরপুর ১২ নম্বর থেকে গরু কিনতে আসা ইকবাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি গরুর বাজার যাচাই করতে আসছি মূলত। এবার গরুর দাম অনেক বেশি। সেই তুলনায় ক্রেতা কম। অনেকেই অনলাইনেও গরু কিনছেন।
কেমন গরু দেখলেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হাটে অনেক বড় বড় গরু আসছে। তবে আমার আগ্রহ ভাইরাল গরুতে। কেননা, বাংলাদেশের সব ভাইরাল গরু এ হাটেই আসে।
এখন পর্যন্ত কোনো ভাইরাল গরু পেয়েছেন কী না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখনও ওইভাবে পাই নাই। তবে ‘হিরো আলম’ আর ‘ক্রিকেটার শান্ত’ নামে দুটি ভাইরাল গরুর নাম শুনেছি। সেগুলো খুঁজছি।
ভাইরাল গরুর খোঁজ করতে গিয়ে কথা হয় আরেক ক্রেতা শেখ নেহালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন গরু বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন। যারা কিনতে আসছেন দাম শুনে তারাও এখন আর কিনছেন না। পরে কেনার কথা ভাবছেন। কারণ, এখন দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে গরু কিনে রাখার জায়গা না থাকায় আগে থেকে গরু কিনছেন না। ঈদের দু-এক দিন আগে এসব গরুর দামই অনেক কমে যাবে। তখন মানুষ কিনবে।’
দাম কমার বদলে বেড়ে যেতে পারে কি না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘হাটে পর্যাপ্ত গরু আছে। ইন্ডিয়া থেকেও বর্ডার পার হয়ে গরু ঢুকছে। সে হিসেবে গরুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। প্রতিবার হাটের সবচেয়ে বড় গরুটাই আমরা কেনার চেষ্টা করি। গতবারও ‘বগুড়ার ডন’ গরুটা আমরা কোরবানি দিয়েছি।’
ক্রেতা বাড়লে কমবে দাম
মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলীর হাটে গরু কিনতে আসা আরেক ক্রেতা জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার গরুর দাম অনেক বেশি। গতবার যে গরুর দাম ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবার সে গরুর দামই চাচ্ছে ২ লাখ ৬০-৭০ হাজার টাকা। প্রায় দ্বিগুণ। তাই এখনো কেনা হয় নাই গরু। তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দাম অনেক কমে আসবে। তখন ক্রেতার সংখ্যাও এখনকার তুলনায় অনেক বাড়বে।’
দাম বেশির কারণ মূলত ক্রেতার স্বল্পতা। ক্রেতা যখন আসা শুরু করবে, তখন দামটাও কমে আসবে। বেচাকেনা শুরু হলে চাহিদা অনুযায়ী দামটা সহনীয় হবে। এ ছাড়া এখন অনলাইনেও গরু কেনাবেচা হচ্ছে। তবে অনলাইনের চেয়ে অফলাইনে গরু কেনা ভালো বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
গরুর হাট ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয় ১৫ লাখ টাকা দামের আরেক গরুর। কুষ্টিয়া থেকে আসা মোহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, আমার গরুর নাম ‘বুদ্ধ’। দাম ১৫ লাখ টাকা। শুক্রবার হাটে আসছি। তিন বছর ধরে এই গরুকে লালন পালন করে বড় করছি।
কীভাবে এসেছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নরমালি এক ট্রাকে ৩-৪ টা গরু আসে। যেহেতু আমার গরুটা বড় এবং গরুর যাতে কষ্ট না হয় এ জন্য ট্রাকে শুধু বুদ্ধকে নিয়েই আসছি। ২০ হাজার টাকা খরচ পড়ছে।
কেমন দাম উঠেছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা দাম উঠেছে। দেখি শেষ মুহূর্তে কত পর্যন্ত দাম উঠে।
পাশেই দেখা যায় মানিকগঞ্জ থেকে আসা আরেকটি বড় গরুর, নাম মহারাজা। দাম ১০ লাখ টাকা। যার এখন অবদি দাম উঠেছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা।
গরুর মালিক মোহাম্মদ জামাল বলেন, গরু নিয়ে দুই দিন হলো আসছি। কিন্তু এবার ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে। তারপরও যারা আসছেন তারা দামদর করে চলে যাচ্ছেন। কিনছেন না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।