বিনোদন ডেস্ক : টিভি নাটক যখন থেকেই বোকাবাক্স থেকে বেরিয়ে মুঠোফোনে এলো, তখন থেকেই মোটাদাগে বাড়তে থাকলো নাটকের সংখ্যা। একই গল্প, একই চরিত্র, একই আর্টিস্ট—শুধু নাম ও মোড়ক পরিবর্তন করে দর্শককে গিলানোর চেষ্টা চলছে বারবার। মুঠোফোনকেন্দ্রিক বিনোদনে আগ্রহের জায়গাটা অনেকদিক থেকেই ইউটিউবকে ছাড়িয়ে গেছে ওটিটি বা ওভার দ্য টপ।
দর্শকরা এখন টাকা খরচ করেও ভালো কনটেন্ট দেখতে চান। পেতে চান নিখাদ বিনোদন। দর্শক তো বটেই, যেসব শিল্পী মানসম্মত কাজ উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তারাও যেন হয়ে ওঠেন বিরক্ত! কেউ কেউ সরাসরি বড় পর্দায় পা রাখার চেষ্টাও করেছেন। তবে যারা নিজেদের আরেকটু যাচাই করতে চেয়েছেন, তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। হইচই, চরকি, বঙ্গ, আইস্ক্রিন, বিঞ্জে—এমন অনেক দেশি-বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিজেদের অভিনয় সত্তাকে চেনানোর সুযোগ পেয়েছেন অনেকে, বিশেষ করে ছোট পর্দার অভিনেত্রীরা।
সব সমীকরণ মিললেই বড় পর্দায়
ছোট পর্দার স্বল্প পরিসরের মধ্যেও যেসব অভিনেত্রী দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন; তাদের বেশিরভাগই ঝুঁকেছেন ওটিটিতে। উত্সব কিংবা বিশেষ দিবস ছাড়া নাটকে তাদের তেমন দেখাই মিলছে না। তেমনই একজন তাসনিয়া ফারিণ। ২০২১ সালে ওটিটিতে অভিষেক, এরপর একের পর এক দুর্দান্ত ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্মে দেখা মিলেছে তার। প্রতিটিতেই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র, গল্প এবং ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ। ওটিটিতে দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেলেও, এখনো দেশের বড় পর্দায় পা রাখেননি তিনি। ইরানি ও ভারতীয় ছবিতে ফারিণকে দেখা গেলেও, দেশে কিন্তু ওটিটি নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকতে চান। অন্তত দশটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও এখনই ‘হ্যাঁ’ বলেননি। সব সমীকরণ মিলিয়ে ভেবেচিন্তে পা ফেলতে চান।
ফারিণের কথায়, ‘চলচ্চিত্রে ভালোভাবেই পা রাখতে চাই। শুধু চলচ্চিত্র করার জন্য করতে চাই না। সত্যি বলতে, সবকিছু ছাপিয়ে যাওয়ার মতো কাজের প্রস্তাব এখনো পাইনি। পছন্দের গল্পের দেশীয় সিনেমায় কাজের জন্য অপেক্ষায় আছি আমি।’ জনপ্রিয়তা আর দর্শক গ্রহণযোগ্যতায় এখন শীর্ষে অবস্থান করছেন তাসনিয়া ফারিণ। ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘কারাগার’, ‘বাবা, সামওয়ান ফলোয়িং মি’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘অসময়’ সহ বেশকিছু ওটিটি কনটেন্টে দুর্দান্তরূপে দেখা গেছে ফারিণকে। কিছু কিছু ওয়েব সিরিজে তিনি নিজেই ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। তাসনিয়া ফারিণের ভাষ্য, ‘করার জন্য কাজ করতে চাই না। কিন্তু ভালো কাজের জন্য যদি কম কাজও হয়, সেটা ভক্তদের কাছে খারাপ লাগার কথা নয়। ২০২২ সালের ভালোবাসা দিবস থেকেই কাজ কম করছি।’
নাটকে নতুনত্ব নেই, তাই কাজ করতে অনীহা…
ঠিক একইভাবে ছোট পর্দায় একেবারেই কাজ কমিয়ে ফেলেছেন অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী। তবে এমনটা যে ওটিটির জন্য, তা স্বীকার করতে চান না তিনি। মেহজাবিন বলেন, ‘অনেক দিনই হলো নাটকের শুটিং করছি না। আবার কবে করব, তা-ও বলতে পারছি না। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, তাহলে কি আমি এই মাধ্যম ছেড়ে দিচ্ছি? না, ছাড়ছি না। এক যুগের বেশি সময় কাজ করে আসছি, এখন একটু চ্যালেঞ্জিং, একটু নতুত্ব আছে—এমন কাজ করতে চাই আমি। সেটি রোমান্টিক, থ্রিল বা ফ্যান্টাসি হোক না কেন।’
‘রেডরাম’-এর নীলা, ‘সাবরিনা’-এর ডা. সাবরিনা এবং ‘দ্য সাইলেন্স’-এর রুবির মতো চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবিন চৌধুরী। কিছুদিন আগে ‘নীল জলের কাব্য’ নামের নতুন ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে এখনই বড় পর্দায় নিজেকে দেখতে চান না তিনি। তবে ওটিটিতে ভালো কিছু কাজের আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ওটিটিতেও যে সব গল্পে নতুনত্ব পাচ্ছি, ব্যাপারটি তাও না। তবে এখানে সম্ভাবনা আছে। ভালো কাজের সুযোগ বেশি। আর এটি সম্ভব হচ্ছে তুলনামূলকভাবে ভালো বাজেটের কারণে। এতে ভালো গল্প-ভাবনা, লেখার সময় পাওয়া যায়। সময় হাতে নিয়ে পরিকল্পনা করে কাজ করা যায়। ফলে ভালো কাজের সম্ভাবনা তৈরি হয়।’
যাচাইয়ের জায়গা ওটিটি
টেলিভিশনে গল্প বলার নানা বাধ্যবাধকতা। ওটিটিতে তা নেই। তাই ওটিটিকেন্দ্রিক কাহিনি হয় আরো বৈচিত্র্যময়। ছোট পর্দার সাবিলা নূর, সাফা কবিররাও তাই নিয়মিত হতে চান ওটিটিতে। তবে তারা এর পাশাপাশি বেছে বেছে নাটকেও কাজ করছেন। সিনেমায় সরাসরি পা বাড়ানোর আগে ওটিটিতে নিজেদেরকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে চাইছেন তারা। গত বছরই ‘মারকিউলিস’ ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে ওটিটিতে অভিষেক হয় সাবিলার। এতে দারুণ সাড়াও পান তিনি। ওটিটি ও সিনেমায় নিজের আগ্রহ নিয়ে সাবিলা নূর বলেন, ‘ওয়েব ফিল্ম কিংবা সিনেমা—দুই মাধ্যমে অভিনয়ের ইচ্ছে আছে। এখন তো ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে। ওয়েবেও ভালো কাজ হচ্ছে। পরান ও হাওয়া সিনেমার পর বিউটি সার্কাস এবং অপারেশন সুন্দরবন মুক্তি পেল। অবশ্য ভালো প্রস্তুতি দরকার ওয়েবে অভিনয়ের জন্য। সিনেমার জন্যও বড় প্রস্তুতি দরকার।’
সাফা কবিরের ‘টিকিট ও অন্যান্য’ছোট পর্দার অভিনেত্রী সাফা কবির চেষ্টার কোনো কমতি করছেন না। নাটকে সেই সুযোগ খুবই কম থাকায়, তিনি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন ওয়েবেও। সাফার কথায়, ‘বাঘবন্দী’, ‘উষ্ণের আত্মহত্যা’ এই দুটো ওয়েব সিরিজ অনেক আগেই করেছি। আমি যখন কাজ করেছি, তখন সেভাবে কেউ ওয়েব সিরিজ করত না, এখন যেভাবে করছে।’ তবে সেগুলোতে তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি সাফা। এবার মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ওয়েব সিরিজ ‘টিকিট’-এ একদমই ভিন্ন লুকে এবং সাহসী চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। এটি নিয়ে দারুণ আশাবাদীও তিনি। সাফা বলেন, ‘আমি আগে কখনো এমন চরিত্রে অভিনয় করিনি। সেই সাথে গল্পটা আসলে ডার্ক কমেডি, থ্রিলার ও স্যাটায়ার মিলিয়ে। আর চরিত্র করতে গিয়ে ভালোই কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। এমন চ্যালেঞ্জিং কাজ বরাবরই করতে চাই।’
একসময় নতুন সিনেমা মুক্তি নিয়ে থাকত উন্মাদনা। চলত নানারকমের প্রচারণা। ওটিটির কারণে সেই জায়গা এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে ওয়েব সিরিজ। সিনেমার মতো প্রচারণা, প্রিমিয়ার কিংবা রোড শো সবই হচ্ছে! তাছাড়া দেশে নাটক ও সিনেমার চেয়ে বেশি বেশি এখন ওটিটি কনটেন্ট নিয়েই কথা বলছেন দর্শকরা। তাই ছোট পর্দার অভিনেত্রীরাও ভালোভাবেই ঝুঁকছেন ওটিটিতে। বরং সিনেমায় যাওয়ার আগে নিজেদেরকে যাচাই করার একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবেও ভাবছেন। সেক্ষেত্রে দেশের বিনোদনে সবচেয়ে বড় এক্সপেরিমেন্টটাই হচ্ছে ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।