সন্তান মানেই ভালোবাসা, স্নেহ আর নিরাপত্তার ছায়া। কিন্তু যদি সেই সন্তানই হয় এক জননীর অনলাইন জনপ্রিয়তার সিঁড়ি, তাহলে সমাজ যেমন ব্যথিত হয়, আইনও তখন নীরব থাকে না। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাভার উপজেলার এক আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর শারমিন শিলা, যিনি ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত, তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ক্রিম আপা গ্রেফতার হওয়ার খবর মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমাজের নানা স্তরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ক্রিম আপা গ্রেফতার: সন্তানের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ
ক্রিম আপা গ্রেফতার হওয়ার মূল কারণ ছিল তাঁর অনলাইন কনটেন্টে নিজের শিশু সন্তানদের সঙ্গে নিষ্ঠুর এবং অনভিপ্রেত আচরণ। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তাঁর শিশুকন্যাকে জোর করে কেকজাতীয় খাবার মুখে ঢোকানোর চেষ্টা করেন এবং তা ভিডিও করে পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
Table of Contents
শুধু এটুকুই নয়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ শিশুদের প্রতি এমন আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়। ‘একাই একশো’ নামের একটি শিশু সুরক্ষা আন্দোলনের সংগঠন জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। এরপরই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।
এই ঘটনায় ‘সন্তানকে ব্যবহার করে ভিউ ব্যবসা’ করার অভিযোগও উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন, যা শেষ পর্যন্ত শিশু নির্যাতনের প্রকৃত উদাহরণ হিসেবে গণ্য হয়।
পুলিশের তদন্তে জানা যায়, শারমিন শিলা এক বছর ধরে তাঁর দুই শিশুসন্তানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করে আসছিলেন। ভাইরাল হওয়ার লোভে শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করাতেন, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলেছে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর পরিচিতি ও ঘটনার বিস্তারিত পটভূমি
শারমিন শিলা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। তিনি ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর একটি বিউটি পারলারও রয়েছে সাভারের বাইপাইলে, যেখানে তিনি নিজের তৈরি নানা রকম প্রসাধনী বিক্রি করতেন।
শিশুদের নিয়ে তিনি ফেসবুক, টিকটক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের ভিডিও প্রকাশ করতেন। প্রথমে মজার ভিডিওর আড়ালে লুকিয়ে থাকা নিষ্ঠুর আচরণ অনেকের নজরে না এলেও, ধীরে ধীরে তার আসল রূপ সামনে আসে। একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি সন্তানদের মানসিক ও শারীরিকভাবে চাপে রাখছেন, কখনো খাবার খেতে জোর করছেন, কখনো চোখে পড়ছে তাদের অসন্তুষ্ট চেহারা।
বিষয়টি জানাজানি হতেই সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং স্থানীয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে। তিনি ভিডিওগুলোর মাধ্যমে এমন ইঙ্গিত দিতেন যেন সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয়নি, এমনকি সন্তানদের মুখে ‘মা ভালো আচরণ করেন’—এমন কথাও বলানো হতো। পরে জানা যায়, এসব ভিডিও তিনি পরে মুছে ফেলতেন।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় যখন সামাজিক আন্দোলনের মুখে তাঁকে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে ডেকে এনে বুঝানো হয় এবং পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
সমাজের প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
এই ঘটনা সমাজের নানা স্তরে এক প্রকার ঘৃণা এবং সচেতনতা তৈরি করেছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা যাতে জনপ্রিয়তা ও অর্থের লোভে শিশুদের ব্যবহার না করে, সে বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে প্রশাসন। শিশু নির্যাতনের মামলার প্রেক্ষিতে এই ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হতে পারে।
আশুলিয়া থানার ইনভেস্টিগেশন অফিসার কামাল হোসেন জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোকজন শিশুদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতোমধ্যেই শিশুদের মানসিক চিকিৎসা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
ক্রিম আপার গ্রেফতার এবং এর পেছনের ঘটনা আমাদেরকে আবারও মনে করিয়ে দেয়, শিশুদের রক্ষা করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। তাদের বিকাশমান মন-মানসিকতায় ক্ষতি করে এমন কিছু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
FAQ:
ক্রিম আপা কে এবং কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
শারমিন শিলা একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর যিনি ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত। তাঁকে তাঁর শিশু সন্তানদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ এবং তা ভিডিও করে প্রকাশ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনাটি কীভাবে প্রকাশ্যে আসে?
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি তাঁর শিশু কন্যাকে জোর করে খাবার খাওয়াচ্ছেন। এই ভিডিও ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং পরে প্রশাসন বিষয়টি আমলে নেয়।
কোন আইনে মামলা হয়েছে?
শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান এই মামলাটি দায়ের করেছেন।
এই ঘটনার ফলে কী বার্তা সমাজে গেছে?
এই ঘটনা সমাজে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, কনটেন্ট ক্রিয়েটরেরা যেন অর্থ ও ভাইরালিটির পেছনে শিশুদের ব্যবহার না করেন। আইন এবং সামাজিক আন্দোলন একসাথে কাজ করছে।
ক্রিম আপার বাচ্চাদের কী হবে?
সমাজসেবা অধিদপ্তর শিশুদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তারা মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এমন আচরণ প্রতিরোধে কী করা উচিত?
সামাজিক সচেতনতা, কনটেন্টের মনিটরিং এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এমন আচরণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুদের নিয়ে কোনো ধরণের কনটেন্ট তৈরি করলে তার আগে নীতিগত ও মানবিক চিন্তা করা জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।