ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড উভয়ই প্লাস্টিক কার্ড, দেখতে একই রকম। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ নম্বর (PIN) এর মতো তথ্যসহ ১৬ ডিজিটের নম্বর থাকে। ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডগুলি একই রকম দেখতে- ATM থেকে টাকা তুলতে এবং পয়েন্ট-অফ-সেল টার্মিনালগুলিতে অনলাইন বা অফলাইন ক্যাশলেস লেনদেন করতে ব্যবহার করা হয়।
ডেবিট কার্ড সাধারণত ব্যাংক কার্ড অথবা চেক কার্ড হিসেবে পরিচিত। এগুলা এমন একটি প্লাস্টিক কার্ড, যা কেনাকাটার সময় ক্যাশ টাকার বিকল্প মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কার্যত, এই কার্ডকে ইলেকট্রনিক চেক বলা চলে। কারণ এই কার্ড দিয়ে দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করলে, সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন দেখানো হয়। ডেবিট কার্ড সাধারণত ক্যাশ অথবা ব্যক্তিগত চেক এর মত কাজ করে।
অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ড হল এমন একটি প্লাস্টিক কার্ড, যে কার্ডের বিপরীতে ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহকদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঋণ মঞ্জুর করে থাকে এবং গ্রাহক সেই মঞ্জুরকৃত ঋণের টাকা তার চাহিদা মত যে কোন সময় পণ্য এবং সেবা ক্রয় করতে পারে অথবা ক্যাশ টাকা উত্তোলন করতে পারে। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই টাকা আবার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকিবেন।
ক্রেডিট কার্ডে ক্রেডিট সীমা আপনার ক্রেডিট স্কোর, বয়স এবং আয়ের মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। উত্তোলিত টাকা প্রদানে বিলম্বের ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র বকেয়া পরিমাণের উপর সুদ নেওয়া হয়। এছাড়াও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে গিফট পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক, সিনেমার টিকিট, অনলাইন কেনাকাটা, ভ্রমণ বুকিং এবং আরও অনেক কিছুর জন্য ছাড় পেতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা ক্রয় করার জন্য গ্রাহককে সাথে সাথেই টাকা প্রদান করতে হয়। যা ব্যাংক একাউন্ট থেকে সরাসরি কেটে নেয়। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচকৃত টাকা গ্রাহককে সাথে সাথে প্রদান করতে হয় না। একটা নির্দিস্ট মসয়ের মধ্যে প্রদান করতে হয়।
ডেবিট কার্ডকে ক্যাশ কার্ড বলা চলে। অপরপক্ষ, ক্রেডিট কার্ডকে এক কথায় লোন কার্ড বলা চলে।
ডেবিট কার্ডের সাথে লিংক করা একাউন্টে যে পরিমাণ ব্যালেন্স থাকে, গ্রাহক শুধু সেই পরিমাণ টাকা ব্যবহার করতে পারেন। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ টাকা গ্রাহকের জন্য ঋণ মঞ্জুর করে থাকে, গ্রাহক শুধু সেই টাকা ব্যবহার করতে পারেন।
ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে একাউন্টে শুধু নিজের জমা করা টাকা ব্যবহার করা যায়। অপরপক্ষে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে, সেই টাকা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যবহার করা যায়।
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা থাকলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রাহককে সুদ বা মুনাফা প্রদান করা হয় । অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের আউটস্ট্যান্ডিং ব্যালেন্স থাকলে তার বিপরীতে গ্রাহক কর্তৃক ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সুদ প্রদান করতে হয়।
ডেবিট কার্ডে কোন একোয়াটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (ইএমআই) সুবিধা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডে একোয়াটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (ইএমআই) সুবিধা পাওয়া যায়।
ডেবিট কার্ডে কেনাকাটার পর পুনরায় পেমেন্ট করার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা পর পুনরায় পেমেন্ট করতে হয়, সেটা গ্রাহক পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারে অথবা সর্বনিম্ম বিল পরিশোধ করতে পারে।
ডেবিট কার্ডধারীকে কোন প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হয় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহককে জয়নিং, প্রসেসিং ফি, লেট পেমেন্ট ফি, বার্ষিক ফি প্রদান করতে হয়।
ডেবিট কার্ডের গ্রাহকের কাছে বিল পেপার হিসেবে কোন স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের কাছে স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয়। যেখানে লেনদেনের বিস্তারিত বর্ণনা থাকে, বর্তমানে ব্যালান্স কত আছে, মিনিমাম কত টাকা প্রদান করতে হবে এবং বিল প্রদান করার শেষ তারিখ উল্লেখ করা থাকে।
সেভিংস/কারেন্ট/এসটিডি অ্যাকাউন্টধারী যেকোনো গ্রাহক ডেবিট কার্ড নিতে পারে। অপরপক্ষে, ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করার জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন, গ্রাহকের কত টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ মঞ্জুর করা আছে, নিয়মিত ব্যাংকের লেনদেন করেন কিনা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার পরে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়।
ডেবিট কার্ডের বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্স্যুরেন্স সুবিধা প্রদান করে না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ইন্স্যুরেন্স সুবিধা প্রদান করে।ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড কি এবং পার্থক্য কি
ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে কোন প্রকার সুদ বা মুনাফা দিতে হয় না। কারণ, ডেবিট কার্ড দিয়ে গ্রাহক নিজের টাকা নিজেই উত্তোলন করে থাকেন। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের বিল প্রদান না করলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুদ প্রদান করতে হয়।
ব্যাংকের হিসাবধারী যেকোনো গ্রাহককে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড সহজে এবং যে কোন গ্রহকে প্রদান করা হয় না।
ডেবিট কার্ডের জন্য গ্রাহকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) যাচাই করা হয় না। বিপরীতে, ক্রেডিট কার্ডের জন্য গ্রাহকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) যাচাই করা হয়।
ডেবিট কার্ড গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সাথে সংযুক্ত করা থাকে। বিপরীতে, ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের একাউন্টের সাথে সংযুক্ত করা থাকে না।
ডেবিট কার্ডে সাধারণত একটি কারেন্সি (বিডিটি/বাংলাদেশি টাকা) প্রদান করা হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড মাল্টি কারেন্সির হয়ে থাকে।
আপনার খুব প্রয়োজন না হলে, ক্রেডিট কার্ড নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে অনেকেই খুব একসাইটেড থাকে কিন্তু নেওয়ার পর প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা ফেরত দিতে না পেরে বড় বিপদে পরে। বিশেষ করে মধ্যবিক্ত শ্রেণীর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যারা ক্রেডিড কার্ডের কারণে মানসম্মান হারাননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।