আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের মুকুট থেকে বিশ্বের প্রথম ধূমপানমুক্ত দেশের পালকটি ছিঁড়ে ফেলছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সোন (৫৩)। সোমবার ৪২তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েই বিশ্বের তামাক নিয়ন্ত্রণ ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল পাতা থেকে দেশের নাম মুছে ফেলার মতো আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনা করলেন লুক্সোন। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার সময়ই তিনি ঘোষণা দেন- ‘আমার এক নম্বর কাজ হবে অর্থনীতিকে ঠিক করা।’
এ লক্ষ্যেই নিউজিল্যান্ডের দীর্ঘদিনের ধূমপান নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বলেছেন, রাজস্ব খাত বাড়াতে সরকারের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আর এতেই তোপের মুখে পড়েছেন রক্ষণশীল ন্যাশনাল পার্টির নেতা প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সোন। অদ্ভুত এ পদক্ষেপে বিরক্ত সমালোচকরা বলছেন, অর্থনীতিকে বাঁচাতে ক্ষমতায় এসেই নাগরিকদের ধূমপানের মতো ভয়ংকর মৃত্যুপুরীতে ঠেলে দিচ্ছেন লুক্সোন। গার্ডিয়ান, বিবিসি।
নিউজিল্যান্ডে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো এ ধূমপান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের আমলে ২০২৫ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল দেশটি। যার লক্ষ্য ছিল তরুণপ্রজন্মকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা।
গত বছর পাশ করা আইনটি আন্তর্জাতিকভাবেও বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। যার প্রেরণায় অণুপ্রাণিত হয়েছিল যুক্তরাজ্য। ২০২২ সালে ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পাশ করা আইনগুলো ২০২৪ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। দেশটির জনস্বাস্থ্য গবেষণা মডেলিং জানিয়েছিল, ধূমপানমুক্ত আইনটি প্রতি বছর ৫ হাজার পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে পারে। নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরি জনসংখ্যার মধ্যে ধূমপানের হার, সংশ্লিষ্ট রোগ এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যাদের জন্য নীতিটি সবচেয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু স্বপ্নকে হঠাৎই দুঃস্বপ্নে পরিণত করল নতুন এ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী লুক্সোন বলেছেন, এই পরিবর্তনের ফলে তামাকের কালো বাজার রোধ হবে এবং দোকানগুলোকে অপরাধের লক্ষ্যবস্তু হওয়া থেকে বিরত রাখবে। আরও বলেছেন, শিক্ষা এবং অন্যান্য ধূমপান নীতির মাধ্যমে ধূমপানের হার কমিয়ে রাখবে। কিন্তু আইন হঠাৎ উলটে যাওয়ায় কড়া সমালোচনাও করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর নিন্দা প্রকাশ করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সংস্থা লুক্সোনের এ পদক্ষেপে হতবাক। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিচার্ড এডওয়ার্ডস বলেছেন, আমরা এ পদক্ষেপে আতঙ্কিত ও বিরক্ত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিকল্পনার ফলে হাজার হাজার মানুষের জীবন নষ্ট হবে। বেসরকারি শিল্প গ্রুপ হেলথ কোয়ালিশন আওতারোয়ার চেয়ার অধ্যাপক লিসা তে মোরেঙ্গা বলেছেন, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ক্ষতি এবং তামাক শিল্পের জন্য একটি বিশাল জয়।
লুক্সোন একসময় এয়ার নিউজিল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এ কাজেই ৭ বছর অতিবাহিত করেন। সে সময়েই বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন। পরে ২০১৯ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। দেশীয় সংগীতের প্রেমিকও বলা হয় তাকে। গত মাসের নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ ভোটে জয়ী হয় তার দল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।