জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভালো কাজের মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, আমরা এখনি ক্ষমতায় চলে গেছি, কিন্তু তা নয়। ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন প্রয়োজন। তাই, ভালো কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে জনগণের সমর্থন আদায় করতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে, তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নেতাদের চালচলনে মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজ সোমবার বিকালে একইসাথে বিএনপি’র খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে এবং ময়মনসিংহে শহরের টাউন হলের তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আযোজন করা হয়।
খুলনায় বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আনিদ্য ইসলাম অমিতের সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়ার সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ আলমগীর পাভেল, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপি’র তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপির সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী প্রমুখ। কর্মশালায় খুলনা বিভাগের ১১টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ঈসমাইল জবি উল্লাহ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মাহাদী আমিন প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এ ছাড়াও ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবীবা, ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ময়মনসিংহে সোমবার সকাল ৯টায় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ময়মনসিংহ বিভাগের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৫১২ জন ডেলিগেট এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায়, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
‘দেশের মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে’ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এ কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক কঠিন হবে। যা দেশের ইতিহাসে আগে কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই নেতাকর্মীদের এমন আচরণ করতে হবে যেন দেশের জনগণ আগামী দিনে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বলেই সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা দিয়েছে। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে হবে।’ তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদেরকে এ বিষয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কর্মশালায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একটি দেশকে শক্তিশালী করতে হলে প্রাইমারি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিশুদের আদব-কায়দা শেখাতে হবে। আমাদের সমাজে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হবে।’
আগামীতে কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে চাঁদাবাজি আছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই দেশ সকল মানুষের জন্য। গত কিছুদিন ধরে সমাজের কিছু ব্যক্তি সংস্কারের কথা বলছে। ৫ মাস আগেও তারা এগুলো বলেননি। কিন্তু বিএনপি দু’বছর আগে থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে।’
বিএনপি দেশ ও দেশের মানুষের কথা সবসময়ই চিন্তা করে থাকে। এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে কৃষকদের পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ এবং ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফের বিষয়টি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামীতে জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে প্রত্যেক কৃষককে একটি করে কার্ড দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে সার ও উন্নত মানের বীজ তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। এক বিঘা জমি চাষ করতে যদি একজন কৃষককে ২০ হাজার টাকা সাপোর্ট দেওয়া যায় তাহলে তারা ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবে। এটা তাদের জন্য হবে বড় পাওয়া। এছাড়াও প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হবে ফ্যামেলি কার্ড।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপনারা সংগ্রাম করে যেভাবে টিকে ছিলেন, তার থেকে সহজ হবে এই কাজটা জনগণের ঘরে পৌঁছে দেওয়া। এতো কঠিন পথ যদি আপনারা পাড়ি দিয়ে আসতে সক্ষম হয়ে থাকেন। তাহলে একটু কষ্ট করলেও ৩১ দফা আমরা জনগণের মাঝে নিয়ে যেতে পারি। এই কাজ আপনারা খুব সহজে সকলকে সাথে নিয়ে করতে সক্ষম হবেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যামিলি কার্ড এবং কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড তৈরি করব। ফ্যামিলি কার্ডটি হবে পরিবারের মা বা স্ত্রীর নামে। এতে তার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বাড়বে। একই সঙ্গে কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড করা হবে। যা প্রতি মৌসুমে কৃষকের সার-বীজ বা আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবে।
তারেক রহমান বলেন, নারীর যোগ্যতা ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করা উচিৎ। এটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা উচিত। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে নারীদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ফ্রি করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করব। প্রান্তিক মানুষকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিনিমাম সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
এটি সব শ্রেণিপেশার মানুষ পাবে। ফ্যামিলি কার্ডটি পরিবারের মা বা স্ত্রীর নামে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তার মর্যাদা বাড়বে। আর যে অর্থ সাশ্রয় করবে সেই অর্থ সন্তানের স্বাস্থ্য ও লেখাপড়ায় ব্যয় করবে। এতে ভবিষ্যৎ সুন্দর একটি প্রজন্ম তৈরি হবে। সঞ্চিত অর্থ ৫ থেকে ১০ বছর পর তার অর্থনৈতিক শক্তি হবে। এতে পরিবারে তার আত্মমর্যাদা বাড়বে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য। বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য নয়। দেশের সম্পদ কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি আমরা চেষ্টা করব।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।