আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জার্মানির নেতৃত্বে ইউরোপের কিছু দেশ এক সার্বিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ভবিষ্যতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প কাজে লাগবে বলে প্রবক্তারা দাবি করছেন৷
ক্রিমিয়ার সেতুর উপর হামলার প্রতিশোধ নিতে রাশিয়া সম্প্রতি যেভাবে গোটা ইউক্রেন জুড়ে নির্বিচারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানি ইউক্রেনকে অবিলম্বে একটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ করেছে৷ কিন্তু শুধু ইউক্রেন নয়, ভবিষ্যতে গোটা ইউরোপেই এমন হামলার আশঙ্কা বাড়ছে৷ ফলে জার্মানির নেতৃত্বে ১২টিরও বেশি দেশ ইউরোপীয় স্তরে এক সার্বিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু করছে৷
বৃহস্পতিবারই তথাকথিত এই ইউরোপিয়ান স্কাইশিল্ড ইনিশিয়েটিভ-এর রূপরেখা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ ব্রাসেলসে ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনের পাশাপাশি এই উদ্যোগে অংশগ্রহণে আগ্রহী দেশগুলি এক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস গত আগস্ট মাসের শেষে এই প্রকল্পের ঘোষণা করে বলেন, এর মাধ্যমে গোটা ইউরোপের নিরাপত্তা আরো মজবুত হবে৷ তার মতে, এ ক্ষেত্রে কোনো একটি দেশের পদক্ষেপের বদলে ইউরোপীয় স্তরে সার্বিক উদ্যোগ নিলে আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি আরও জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷ কারণ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অত্যন্ত জটিলভাবে কাজ করে৷ রাশিয়ার বর্তমান হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপে এমন প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷
আগস্ট মাসে শলৎস বলেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলি, চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলি জার্মানির নেতৃত্বে এমন উদ্যোগে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ স্পেনসহ অন্যান্য কিছু দেশও ভবিষ্যতে এমন প্রণালীর ছত্রছায়ায় আসতে পারে৷ পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে ফ্রান্স আপাতত এমন বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন দেখছে না৷
প্রস্তাবিত স্কাইশিল্ড প্রকল্প ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বর্তমান দুর্বলতা কাটিয়ে সার্বিক সুরক্ষা দেবে বলে এর প্রবক্তারা দাবি করছেন৷ যেমন বর্তমানে জার্মানি স্টিঞ্জার ও অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল দিয়ে স্বল্প দূরত্বের হামলা প্রতিহত করতে প্রস্তুত৷ বোমারু বিমান ও হেলিকপ্টারও সেই কাজ করতে প্রস্তুত৷
আমেরিকা থেকে পাওয়া পেট্রিয়ট সিস্টেম ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সুরক্ষার সেই ছাতা দুর্ভেদ্য নয় বলে জার্মান সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে৷ ইউরোপে মার্কিন সামরিক বাহিনীও সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের উদ্যোগ জোরদার করা সত্ত্বেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
ইসরায়েলে তৈরি অ্যারো থ্রি সিস্টেম সেই দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে পারে, যা বায়ুমণ্ডলের বাইরে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে শত্রুর নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে এবং সেইসঙ্গে আরও বড় অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে৷ তবে জটিল এই প্রণালী ইউরোপের ছোট ছোট দেশের জাতীয় সীমানায় সীমিত রাখলে আদর্শ সুরক্ষা পাওয়া কঠিন৷ তাই বিস্তীর্ণ এলাকা এর আওতায় আনতে পারলে সুরক্ষার বলয় আরও কার্যকর হবে৷ তাছাড়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই প্রণালীর ব্যয় বণ্টন করে নিতে পারলে আখেরে সবারই লাভ হবে বলে প্রকল্পের প্রবক্তারা দাবি করছেন৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।