আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অনেক সমস্যার সমাধান আমাদের হাতের কাছেই থাকে। ভারতের দিল্লির এক বাসিন্দা ছাদে সৌর প্রণালী বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তিনি পরিবেশের উপকারও করছেন। -খবর ডয়েচে ভেলে।
ঘরে একটা পাখা রয়েছে, টেলিভিশনও আছে। এমনকি এয়ার কন্ডিশনরও চলছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্র চোখে পড়ে। এত বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করা সত্ত্বেও দিল্লির বাসিন্দা অমিত মেহতার বিদ্যুতের বিল কিন্তু শূন্য। সেটা কী করে সম্ভব? সেই রহস্যের সমাধান করতে হলে তার বাসার ছাদে নজর দিতে হবে।
তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছাদে পাঁচ কিলোওয়াট ক্ষমতার সৌর প্রণালী বসিয়েছিলেন। সে কারণে তাকে আর বিদ্যুতের মাশুল দিতে হয় না।
অমিত বলেন, ‘আমি প্রায় দুই লাখ পঁচিশ হাজার ভারতীয় টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। প্রায় ছয় মাস ধরে আমি কোনো ইলেকট্রিক বিল দিচ্ছি না। তার আগে আট থেকে দশ হাজার টাকা বিল আসতো। ফলে আমি এর মধ্যেই বিনিয়োগের অংকের দেড় লাখ থেকে এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা ফিরে পেয়েছি। আগামী এক বছরে বাকি টাকাও উদ্ধার হয়ে যাবে। এমন সোলার প্যানেলের আয়ু প্রায় ২০ বছর। অর্থাৎ ২০ বছরের জন্য আমি বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পাবো।’
জ্বালানি সংকটের কারণে গোটা বিশ্বে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ বাড়ছে। ভারত সরকার সোলার প্যানেল বসানোর জন্য ভরতুকিও দিচ্ছে। অমিত মেহতার মতে, দিল্লির মতো শহর সৌরশক্তির জন্য আদর্শ।
তিনি বলেন, ‘দিল্লির যা আবহাওয়া, তাতে আজকাল আট থেকে নয় মাস সূর্যের আলো থাকে। শুধু তিন থেকে চার মাস তেমন সূর্যের আলো পাওয়া যায় না। কিন্তু সেই বিরতিও নিয়মিত নয়। কিছু আলো থাকেই, উত্তাপ থেকেই আসে। যত বেশি সূর্যের আলো, তত বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হয়। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়, কারণ রুম হিটার ব্যবহার করা হয় না। আমার মতে, ভারতে সবারই প্রাকৃতিক আলো, অর্থাৎ সূর্যের আলো কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা উচিত৷’
অমিত মেহতা সৌরশক্তির সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে ধারণ করেন না, বরং বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই একই কোম্পানি তার বাসায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। প্রায়ই তিনি নিজস্ব চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন।
নিজের দেওয়ালে মিটারসহ অন্যান্য যন্ত্রগুলোর বিন্যাস বর্ণনা করে অমিত বলেন, ‘এই সব তার সৌর প্রণালীর সঙ্গে যুক্ত। এই ইনভার্টারের মাধ্যমে সৌরশক্তি সরাসরি গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এখানে ওয়াইফাই রাউটার আছে, যা দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা জানিয়ে দেয়। আমার স্মার্ট ফোনে সেটা জানার অ্যাপ রয়েছে।’
অমিত মেহতার ছাদের উপর সৌর প্রণালী ছাড়া একটি বাগানও রয়েছে। বড় শহরে জমির অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। সে কারণে গোটা বিশ্বে রুফটপ গার্ডেনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গাছপালা বাতাস শুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। সেগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে আমাদের অক্সিজেন দেয়। কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যেও প্রকৃতির ছোঁয়া আনে এমন গাছপালা।
অমিত মেহতা বলেন, ‘আমি কিছুটা অরগ্যানিক চাষও করছি। তাই সপ্তাহে এক বা দুই দিন বাজার থেকে শাকসবজি কিনতে হচ্ছে না। আমার কাছে দ্বিতীয় সুবিধা হলো, এই কাজ হবি হয়ে উঠেছে, সুন্দরভাবে সময় কাটানো যাচ্ছে। তার উপর পরিবেশ বা প্রকৃতির জন্য কিছু করার সুযোগও হচ্ছে। কী করা উচিত, তা অন্যদের বলে লাভ নেই। নিজের কাজের মাধ্যমে তাদের সেটা দেখিয়ে দিতে হবে।’
সৌরশক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অমিত মেহতা নিজের এবং পরিবেশের উপকার করছেন।
৫০ বছর বয়সী মাকে নিজ হাতে বিয়ে দিলেন মেয়ে, মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কাহিনী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।