গত ২৪ ঘণ্টায় আমি শতাধিক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ লিখেছি। সেগুলোর কোনোটিই খুব বেশি আহামরি ছিল না। আমি আমার পরিবারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। অনেক প্রজেক্ট নিয়ে সহকর্মীদের সাথে আলাপ করেছি। কিছু বন্ধুদের সাথে খবরাখবর আদানপ্রদান এবং আড্ডাবাজি করেছি।
এখানে হোয়াটসঅ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন ডেটা সেন্টারের শক্তিশালী কম্পিউটার সার্ভার ব্যবহার করে আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর মেসেজগুলোর গোপনীয়তাও রক্ষা করছিলো। এই প্রক্রিয়াটি এতটা সস্তা না যে চাইলেও কোনো কোম্পানি তা বজায় রাখতে পারে। এক্ষেত্রে আমি বা আমি যাদের সঙ্গে আলাপ করছিলাম, কেউই কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের জন্য টাকা খরচ করিনি। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছে।
সেক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ কীভাবে অর্থ উপার্জন করে?
অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপের পেছনে মেটার মতো একটি বিশাল কোম্পানি রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের মাদার কোম্পানি মেটা জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামেরও মালিক। আমার মতো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট যাদের, তাদেরকে বিনামূল্যে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে দেয় মেটা। মূলত, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অর্থ উপার্জন করে হোয়াটসঅ্যাপ। তারা তাদের পণ্য বা পরিসেবার প্রচার করতে আমার মতো ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ করতে চায়।
গত বছর থেকে কোম্পানিগুলো বিনামূল্যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল তৈরি করতে পারছে। সেসব চ্যানেল যারা সাবস্ক্রাইব করে, তাদেরকে মেসেজ পাঠায় চ্যানেলগুলো। সাবস্ক্রাইবরা সেগুলো পড়তে পারে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের প্রিমিয়াম সংস্করণ কিনলে অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের সাথে চ্যাট করা যায়। সেটি হতে পারে কোনও কিছু সম্বন্ধে সাধারণ কথোপকথন বা আর্থিক লেনদেন।
বিশ্বের অনেক জায়গায় এই ফিচারটি এখনও প্রায় শুরুর দিকে আছে। কিন্তু, উদারণস্বরূপ, ভারতের বেঙ্গালুরুতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাসের টিকেট কেনা যায় এবং আসনও বেছে নেওয়া যায়। মেটা’র বিজনেস মেসেজিং-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকিলা শ্রীনিবাসন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, ব্যবসায়িক কোম্পানি ও গ্রাহকরা যেন চ্যাট থ্রেডে সবকিছু ঠিকভাবে করতে পারে।’
বিষয়টিকে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এর মানে হল, আপনি যদি টিকেট কিনতে চান বা আপনি যদি রিফান্ড (টাকা ফেরত নেওয়া) করতে চান, তাহলে সেটি যেন চ্যাট থ্রেড থেকে বের না হয়েই আপনি করতে পারেন এবং আপনার অন্যান্য কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারেন…।’
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো লিংকের জন্য হোয়াটসঅ্যাপকে অর্থ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনো ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী যদি বিজ্ঞাপন হিসেবে থাকা সেসব লিংকে প্রবেশ করে, তাহলে তার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে একটি নতুন চ্যাট খুলে যায়।
শ্রীনিবাসন বলেন, শুধু এই একটি ফিচারটি থেকেই কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় হয়। মেটার নিকিলা শ্রীনিবাসন বলেন, ব্যবসার মূল লক্ষ্য হল হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। তবে অন্যান্য যেসব মেসেজিং অ্যাপ আছে, সেগুলো ভিন্ন উপায় অনুসরণ করে।
মেসেজের নিরাপত্তার জন্য আরেকটি সুপরিচিত প্ল্যাটফর্ম হল ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তারা বলে যে তারা কখনও বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ নেয় না। পরিবর্তে, সিগন্যাল অনুদানের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১৮ সালে হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রিয়ান অ্যাকটনের থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নগদ অনুদান গ্রহণ করে সিগন্যাল।
গত বছর সিগন্যালের প্রেসিডেন্ট মেরেডিথ হুইটেকার একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ক্ষুদ্র দাতাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য আমাদের যতটা সম্ভব, তাদের কাছাকাছি যেতে হবে। এটিই আমাদের লক্ষ্য। তিনি জানান, সিগন্যালের বিষয়ে যত্নশীল অনুদানকারীদের ওপর সিগন্যাল নির্ভর করে।
টাস্কফোর্স দেখে উল্টে গেল ডিমের মূল্যতালিকাটাস্কফোর্স দেখে উল্টে গেল ডিমের মূল্যতালিকা
তরুণ গেমারদের কাছে জনপ্রিয় একটি অ্যাপ হল ডিসকর্ড। এটিতে বিনামূল্যে সাইন আপ ও ব্যবহার করা গেলেও বিশেষ কিছু ফিচার ব্যবহার করার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। ডিসকর্ড অ্যাপে নিট্রো নামক একটি পেইড মেম্বারশিপও রয়েছে। এটি দিয়ে ভালো কোয়ালিটির ভিডিও দেখা এবং কাস্টম ইমোজি ব্যবহার করা যায়। তবে এর জন্য প্রতিমাসে নয় দশমিক ৯৯ ডলার লাগবে।
স্ন্যাপচ্যাটেও বিভিন্ন ধরনের মডেল আছে। এই অ্যাপে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় এবং চলতি বছরের অগাস্ট মাস পর্যন্ত এর পেইড সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১১ মিলিয়ন। এর পাশাপাশি ‘স্ন্যাপচ্যাট স্পেকট্যাকল’ নামক অগমেন্টেড রিয়েলিটি চশমাও বিক্রি করে তারা।
ফোর্বস ওয়েবসাইটের মতে, এর উপার্জনের আরও একটি পথ রয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২৩, এই সময়ের মাঝে শুধুমাত্র সুদ থেকেই তারা ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছে। তবে স্ন্যাপের আয়ের মূল উৎস বিজ্ঞাপন, যা থেকে বছরে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি ইলিমেন্টও সরকার ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ মেসেজিং সুবিধা দেয়। তাদের গ্রাহকরা তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত সার্ভারে নিজেরাই তা নিয়ন্ত্রণ করে। এই কোম্পানি ১০ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিলো। কিন্তু এরই মাঝে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে প্রায়। ইলিমেন্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ হডসন বলেছেন।
‘মূলত, অনেক মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণ করে যে মানুষ কী করছে, তারা কী ধরনের কথা বলছে, তারপর তারা ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে তাদের জন্য উপযুক্ত বিজ্ঞাপন দেখায়।’
মেসেজিং অ্যাপগুলোতে এনক্রিপশন ও গোপনীয়তার ফিচার আছে ঠিক-ই। কিন্তু অ্যাপগুলো তারপরও ব্যবহারকারীদের ব্যাপারে অনেককিছু জানে। সেজন্য তাদেরকে মূল কন্টেন্ট দেখার প্রয়োজন নেই। তাই, বিজ্ঞাপন বিক্রির জন্য তারা ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
‘এটা ওই পুরনো গল্প। আপনি যদি বিনামূল্যের ব্যবহারকারী হন, সেক্ষেত্রে আপনি এখানে কেবলই পণ্য,’ বলেন হডসন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।