রিয়ন দে, চাঁদপুর: চাঁদপুরে প্রায় আড়াই হাজার চাষি ভাসমান পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ করেন। এতে তাঁরা অনেকটা লাভের মুখও দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মৎস্যখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, পানি দূষণ ও বাজারে মাছের দাম কমে যাওয়ায় এই চাষিরা লোকসানে পড়েছেন। এতে থমকে যাচ্ছে মাছ চাষের ‘ডাকাতিয়া মডেল’।
খাঁচায় মাছচাষিরা বলছেন, লোকসান কাটাতে সরকারের কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ চান তাঁরা। না হলে এই পেশায় তাঁরা টিকতে পারবেন না।
জেলা শহরের রঘুনাথপুর এলাকার খাঁচায় মাছচাষি মো. আলমগীর বলেন, ‘আমি ডাকাতিয়া নদীতে ৪শ খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালের পর নানা সংকটে আমার এখন ১শ খাঁচা আছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে খাঁচায় মাছ চাষ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।’
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, দেশে ২০০২ সালে চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। এ কারণে এটি ‘ডাকাতিয়া মডেল’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে চাষ করা মাছ সুস্বাদু হয়।
আজ সোমবার শহরের পুরানবাজার, নতুনবাজার ও রঘুনাথপুর এলাকা ঘুরে খাঁচায় মাছচাষিদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় তাঁরা নানা হতাশার কথা তুলে ধরেন।
চাষিরা জানান, অন্য পদ্ধতির চেয়ে খরচ কম হওয়ায় এবং অনেকটা লাভজনক হওয়ায় ‘ডাকাতিয়া মডেল’ ক্রমান্বয়ে পদ্মা, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতেও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে মৎস্যখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য, পাটের জাগ ও পচা কচুরিপানায় নদীর পানি দূষিত হয়ে খাঁচার মাছ মরে যাওয়া এবং বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চাষিদের লোকসান শুরু হয়। এসব কারণে গত এক বছরে প্রায় শতাধিক খাঁচা বন্ধ হয়ে গেছে।
খাঁচায় মাছচাষি মো. আরিফ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যের দাম বস্তাপ্রতি ৩ থেকে ৪শ টাকা বেড়েছে। সে তুলনায় মাছের দাম বাড়ে নাই। খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
পুরানবাজার এলাকার চাষি শাহনাজ আলমগীর বলেন, ‘স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আমরা খাঁচাটা একটু বড় করতে পারতাম। এভাবে মাছ চাষ করে আমিষের চাহিদা ও ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারতাম।‘
কয়েকজন চাষি বলেন, বিভিন্ন কল-কারখানার ময়লা পানির দূষণে ডাকাতিয়ার অনেক খাঁচায় মাছ মারা যাচ্ছে। তাঁরা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলেও পরিদর্শনে আনতে পারেননি।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চাঁদপুরে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে খাঁচায় মাছচাষি ছিলেন ৫৭৮ জন। তখন উৎপাদন ছিল ২২৭ মেট্রিকটন। খাঁচার আয়তন ছিল ১০ হাজার ৭৩৯ ঘনমিটার। এ পদ্ধতি লাভজনক হওয়ায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে খাঁচায় মাছ চাষি বেড়ে ২ হাজার ৪৪০ জন হন।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘খাঁচার মাছ সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। তবে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে চাষীরা কষ্টে আছেন। আমরা সরকার কাছে আবেদন করেছি, কৃষির মতো মাছের খাদ্যের দামেও যাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো থেকেও যাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয়। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা ঘুরে ঘুরে চাষিদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে পাশে আছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।