দৃশ্যটি প্রায় ঘরে ঘরেই দেখা যায়—খাবার টেবিলে বসেও কানে বা হাতে ফোন। কেউ হয়তো খেতে খেতে মেসেজ বা ই-মেইলে টুকটাক অফিসের কাজ সেরে নিচ্ছেন, কেউ–বা খেতে খেতেই ঢুঁ মারছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে। অনেক বাসায় আবার দেখা যায়—টিভির সামনে বসে শিশুকে খাওয়াচ্ছে, ওদিকে কানে ফোন।
রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে এমনটা খুবই পরিচিত ঘটনা—সবার হাতে ফোন, সামনে খাবার প্লেট। আমাদের জীবনে স্বাভাবিক হয়ে ওঠা এই বিষয়টি নিয়ে কখনো কি ভেবে দেখেছেন, খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার করাটা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর?
অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের জীবন এতটাই মোবাইল–নির্ভর হয়ে গেছে যে শুধু খাওয়ার সময় নয়, যতক্ষণ আমরা জেগে থাকি ততক্ষণ মোবাইল ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফোন ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না।
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, খাওয়ার সময় আমাদের মস্তিষ্কে যে হরমোনের কার্যকলাপ চলে, ফোনে কথা বলতে গেলে তাতে বিঘ্ন ঘটে। ফলে আমাদের পাচন ও বিপাক প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটে। খাবার হজমে গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে।
ডিভাইস বা ফোন ব্যবহার করে খাবার সময় আমাদের খাবারের পরিমাণের দিকেও নজর থাকে না। ফলে কারও বেশি খাওয়া হয়ে যায়, আবার কেউ হয়তো পুরোপুরি না খেয়েই উঠে পড়েন। মানে মনোযোগ কমে যায়। এতে পুষ্টি সরবরাহ ব্যাহত হয়।
আরেকটি ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ, খাওয়ার সময় মোবাইলে কথা বলার অভ্যাস থাকলে, হঠাৎ করে চোকিং হতে পারে, খাবার গলায় আটকে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি পাশাপাশি থাকে। খাওয়ার সময় কথা বললে খাদ্যনালিতে খাবার না গিয়ে শ্বাসনালিতে চলে যেতে পারে। তখন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এতে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।
আজকাল ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ কথাটা খুব বলা হচ্ছে। মানে খাবার সময় খাবারের স্বাদ, রং, গন্ধ সবকিছুর দিকে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে খাওয়া। তা না হলে খাবারের সম্পূর্ণ পুষ্টিমান পাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে শিশুদের খাওয়ানোর সময় হাতে ফোন দেওয়া একেবারে উচিত নয়। এতে তারা খাবারের স্বাদ-বর্ণ-গন্ধ কিছুই টের পায় না। বলা যায়, খাবার গেলা ছাড়া সত্যিকার অর্থে আর কিছু হয় না।
মনে রাখা উচিত, পরিবার, স্বজন বা বন্ধুদের সঙ্গে খাবার সময় বা আরেকজনের সামনে বসে খাবার সময় মোবাইলে সময় দেওয়াটা সমীচীন নয়। বাড়িতে বা বাইরে খাবার টেবিলে একসঙ্গে খাদ্যগ্রহণ পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত করে। এটি পারিবারিক বা গুণগত সময় কাটানোর একটি উৎকৃষ্ট সময়। ডিভাইসে মনোযোগ দিয়ে এই সময়টাকে নষ্ট করা ঠিক নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।