শুক্রবার, শীতের সকাল। ১৯০৫ সালের ৭ মার্চ। ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁই ছুঁই। কর্মব্যস্ত লোকজন ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। যেকোনো মুহূর্তে বার্ন শহরের সিগ্লোগকা নামের ক্লক টাওয়ারের ঘণ্টা বেজে উঠবে ঢং ঢং আওয়াজে। সচকিত হয়ে উঠবেন আশপাশের লোকজন।
সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের এই ক্লক টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছিল সেই মধ্যযুগে। নামকরা ক্যামগ্যাছে এলাকায় সটান দাঁড়িয়ে শাসন করে চলেছে গোটা শহর। এখান থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে পুরোনো ধাঁচের একটা চারতলা বাড়ি। ঠিকানা ৪৯ ক্যামগ্যাছে। সেই বাড়ির সরু সিঁড়ি বেয়ে দোতলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে এলেন এক যুবক। তাঁর এক হাতে একটা খাম। শক্ত করে আঁকড়ে ধরা। যেন মহামূল্যবান বস্তুটা কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চান না।
যুবকের গায়ে চেক স্যুট। পায়ে জুতার বদলে জরাজীর্ণ এক জোড়া চপ্পল। সবজে রঙের, তার ওপর ফুল এমব্রয়ডারি করা। ভীষণ ব্যস্ততায় হয়তো সময়মতো জুতাজোড়া খুঁজে পাননি কিংবা জুতা নাকি চপ্পল, এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর।
ক্যামগ্যাছে স্ট্রিটের পাকা রাস্তায় মধ্যযুগীয় তোরণ দাঁড়িয়ে আছে সারবদ্ধভাবে। সেগুলো ভেদ করে যুবক এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনে। সুইস রাজধানীর সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা বলা হয় একে। কিন্তু সে পথে যুবকের এহেন বেমানান বেশভূষা দেখে যেকোনো পথচারীর ভ্রু কুঁচকে যাওয়ার কথা।
তবে কারও ভ্রুকুটি খেয়াল করার সময় নেই যুবকের। হেঁটে চলেছেন নিজের চিন্তায় বুঁদ হয়ে। আটটার মধ্যেই তাঁকে অফিসে পৌঁছাতে হবে। তার আগে চিঠিটা দিতে হবে পোস্ট অফিসে। হাতের খামটা যে এখনই পাঠাতে হবে জার্মানিতে! রাজধানী বার্লিনে। খুব জরুরি।
খামের ওপর প্রাপকের ঠিকানা লেখা অ্যানালেন ডার ফিজিক জার্নালের প্রকাশকের। পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী সে জার্নাল। কেউ জানে না, খামের ভেতরের ওই চিঠি অচিরেই মোড় ঘুরিয়ে দিতে যাচ্ছে গোটা বিজ্ঞানজগতের।বার্ন শহরের বুকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলা সেই যুবকের নাম আলবার্ট আইনস্টাইন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।