জুমবাংলা ডেস্ক : রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ। নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়ায়ও এমন আরো দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কম্পানির মালিক তিনি। আজ দু:সংবাদ এসেছে মর্মান্তিকভাবে ফাহিম খুন হলেন নিউ ইয়র্কে।
১৯৮৬ সালে জন্ম ফাহিমের। তাঁর বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীর মানুষ। ফাহিম পড়াশোনা করেন ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে। মেধাবী, স্বপ্লবাজ তরুণ ফাহিম আর নেই। একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ফাহিম কী বলেছিলেন-
পাঠাওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে?
পাঠাওয়ের সিইও হুসেইন মো. ইলিয়াসের তৈরি করা একটি IGqemvBGUi (istomorrowhartal.com) মাধ্যমে প্রথম যোগাযোগ হয়। আমার কাছে সাইটটি আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। পরের দিন হরতাল আছে কী নেই সে বিষয়ে হ্যাঁ বা না বলত সাইটটি। আমি এর পেছনের মানুষটিকে জানতে আগ্রহী ছিলাম। যোগাযোগ করি ইলিয়াসের সঙ্গে। বলি, হ্যাকহাউসের বিজ্ঞাপন দিতে চাই তাঁর সাইটে। তার পর থেকে আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। একপর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলি। তাঁরা (ইলিয়াস ও সিফাত আদনান) এর মধ্যে অল্প পরিসরে একটি আইটি বিজনেস চালু করেছিলেন। তাই হুট করেই নতুন কিছুতে যেতে চাইছিলেন না। একপর্যায়ে আমার অনুরোধে তাঁরা হ্যাকহাউসে যোগ দেন। আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছিলাম। এর মধ্যে পাঠাওয়ের সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রথম দিকে পাঠাও দিয়ে ডিজিটাল ডেলিভারির কথা ভেবেছিলাম আমরা। আমার একটি রেজিস্টার্ড ডোমেইন ছিল এবং সেটি ডেলিভারি বিজনেসের জন্য পারফেক্ট ছিল; কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে আমরা বুঝতে পারলাম দেশে চাহিদা সরবরাহের বাজার বেশি বড় নয়। তাই একপর্যায়ে পাঠাওকে রাইড শেয়ারিং কম্পানি করার কথা ভাবা হলো। আর তৈরি হতে থাকল রাইড শেয়ারিং অ্যাপ।
নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ায় আপনার আরো দুটি বাইক শেয়ারিং কম্পানি আছে। সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
পাঠাওয়ের সাফল্য দেখে আমি নাইজেরিয়ায় ওকাডা নামের একটি বাইক শেয়ারিং কম্পানি চালু করি। ফেসবুক আর লিংকডইনে বন্ধু ও সহকর্মীদের বলি, আমার সঙ্গে এমন একজন মানুষের পরিচয় করিয়ে দিতে যে নাইজেরিয়ায় বিলিয়ন ডলারের কম্পানি চালু করতে আগ্রহী। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমি ১০০টি সাড়া পাই এবং একটি ওকাডা টিম গঠন করি। অল্প পরেই আমি নাইজেরিয়া যাই এবং টিমের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপে বসি। সে সময় দলের সবাই আমরা এক বাসায় থাকতাম, খেতাম ইত্যাদি। এখন ওকাডা নাইজেরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। আর কলম্বিয়ায় রাইড শেয়ারিং কম্পানি করার ব্যাপারটি চলে এসেছিল হঠাৎই। সেখানে একটি অ্যাপ আগে থেকেই চালু ছিল। আমি সেটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি আর প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। একসময় কলম্বিয়া যাই আর প্রধানের সঙ্গে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করি।
Teenhangout.com (টিনহ্যাংআউটডটকম) সাইটটি আপনি তৈরি করেছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। এটি এক মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। আমাদের একটু বিস্তারিত বলুন। Teenhangout.com আমার প্রথম ওয়েবসাইট। তখন আমার বয়স ১৫ বা ১৬ হবে। এরপর আমি কিশোরদের জন্য আরো কিছু ওয়েবসাইট তৈরি করি। সাইটগুলো থেকে ছবি ডাউনলোড করা যেত। গুগল অ্যাডের মাধ্যমে প্রচারও চালাতে থাকি। একটা সময়ে আমার বয়সী একজনের সঙ্গে অনলাইনে পরিচয় হয়। সে-ও একই রকম ওয়েবসাইট চালাচ্ছিল। সে থাকত ওহাইওতে, আমি নিউ ইয়র্কে। আমরা একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখাই। দুই বছরে আমরা ২০টি ওয়েবসাইট তৈরি করি কিশোরদের জন্য। একটা সময়ে আমরা বছরে তিন লাখ ইউএস ডলার আয় করা শুরু করি। হ্যাঁ, এ পর্যন্ত এক মিলিয়ন ডলার আয় হয়ে গেছে আমাদের কিশোর ওয়েবসাইট থেকে।
PrankDial.com নামে আপনার আরেকটি মজার ওয়েবসাইট আছে। এর গল্পটি বলুন।
২০০৯ সালের কথা। আমি তখন সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। চাকরি পাওয়া তখন কঠিনই ছিল। আমি নিউ ইয়র্ক আর বোস্টন শহরের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনপত্র পাঠালাম। একসময় বোস্টন থেকে একটা চাকরির অফার এলো; কিন্তু আমি আসলে নিউ ইয়র্ক ছাড়তে চাইছিলাম না। তাই বললাম, দুই সপ্তাহ পরে জানাব। PrankDial.com ওই দুই সপ্তাহেই তৈরি হয়েছিল। এর মাধ্যমে কণ্ঠস্বরে বদল এনে নানা রকম মজা করতে পারেন, মানে বন্ধুদের বোকা বানাতে পারেন। অল্প দিনের মধ্যেই এটি জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় আমি এর জন্য অ্যাডও তৈরি করিয়েছিলাম। লোকে প্রাংক কল কেনার জন্য শত ডলারও খরচ করতে রাজি ছিল। তাই আমাকে আর চাকরি করতে হয়নি। আমি নিউ ইয়র্কে থেকেই কম্পানিটিকে আরো বড় করি।
পাঠাও নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এখন আমি পাঠাওয়ের শুধুই পর্যবেক্ষক উপদেষ্টা। তবে ইলিয়াসদের দারুণ সব পরিকল্পনা আছে। আশা করা যায় ইন্দোনেশিয়ার ওজেকের মতো এটি একদিন সুপার অ্যাপ হয়ে উঠবে। পাঠাওয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট, ই-কমার্সও করা যাবে।
বাংলাদেশে আর কোনো ব্যবসার কথা ভাবছেন?
দেশে একটা বড় অফিস নেওয়ার চিন্তা আছে আমার। বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি, তবে এখনই প্রকাশ করতে চাইছি না। এটুকু বলি, বিনোদন মাধ্যমে কাজ করব।
এত অল্প বয়সে আপনি এতগুলো আইটি কম্পানির মালিক। অবাক করার মতো ব্যাপার।
আমার পরিবার অভিবাসী পরিবার। আমরা আমেরিকায় টিকে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমার বাবা আমেরিকায় এসে একটি চাকরির জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমার পরিবারের কাছে মাত্রই ১০ হাজার ডলার ছিল। অথচ বাবার চাকরি হচ্ছিল না। তাই জমানো টাকা কমছিল আর সবার চিন্তা বাড়ছিল। একটা সময়ে আমাদের দেশে ফিরে আসার কথাও ভাবতে হয়েছিল। যাহোক একপর্যায়ে বাবা একটি স্কুলে টিচার হওয়ার সুযোগ পেলেন। শেষমেশ আমরা বেঁচে গেলাম। নিজেদের ভাগ্যবান ভাবলাম। এখনো সে কষ্টের দিনগুলোর কথা আমরা ভুলতে পারি না।
বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে কেমন সম্ভাবনা আছে?
এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে। এ দেশের অনেক সমস্যা প্রযুক্তি মারফত সমাধান করা সম্ভব। আমার মনে হয় দিন দিন এ দেশ উন্নতি করবে। আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ একদিন আইফোনের মতো ফোন তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।